সম্পাদকীয়

  ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

মাছশূন্য হওয়ার আশঙ্কা দূর করতে হবে

বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশ মাছশূন্য হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশের বিশেষজ্ঞরা। এটা আমাদের জন্য কোনো ভালো খবর নয়। বিপরীতে বলা যায়, মৎস্য উৎপাদনে এ যাবৎ আমাদের যে অর্জন তার ওপর এটি একটি আঘাতও বটে। বিষয়টি খাটো করে দেখার কোনো উপায় নেই। অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টির ওপর আমাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও সমাধানের উপায় খুঁজে বের করা খুবই জরুরি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে এবং ইলিশ সংরক্ষণে সফলতা থাকলেও বঙ্গোপসাগরে নির্বিচারে মাছ শিকার এবং অনিয়ন্ত্রিত ও অবৈধ মৎস্য শিকারের কবলে পড়ে মাছের পরিমাণ ক্রমেই কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া ইতোমধ্যেই কিছু কিছু সামুদ্রিক মাছের প্রজাতি বিলুপ্তির পথে।

গবেষণা বলছে, নির্বিচারে সামুদ্রিক মাছ শিকার এবং অনিয়ন্ত্রিত ও অবৈধভাবে মাছ ধরা বন্ধ করা না গেলে ভবিষ্যতে বঙ্গোপসাগর মৎস্যশূন্য হয়ে পড়তে পারে।

বাংলাদেশের সাগরে মাছের মজুদের কোনো সঠিক হিসাব নেই। ঠিক সে কারণেই কী পরিমাণ মাছ ধরা যাবে তারও কোনো সীমা-পরিসীমা নির্ধারিত নেই। দুই দশক সাগরে মৎস্যসম্পদের জরিপ গবেষণা বন্ধ ছিল। ২০১৬ সালে পুনরায় জরিপের কাজ শুরু হয়। সাগরে ১০ থেকে ২০০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত মহিসোপান এলাকায় নতুন করে জরিপের কার্যক্রম চালানো হয়। গত তিন বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সামুদ্রিক মাছ নিয়ে একটি প্রতিবেদন সরকারের উচ্চপর্যায়ে পাঠানো হয়।

প্রতিবেদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এটা আমাদের সায়েন্টিফিক কমিউনিটির জন্য খুবই উদ্বেগজনক। মাছের বংশ বৃদ্ধির জন্য যে পরিমাণ মাছ সাগরে থাকা দরকার, সেখানে ঘাটতি থাকলে পরবর্তী বছরে মাছ উৎপাদনে তার ছাপ পড়বে। উদাহরণ হিসেবে গালফ অব থাইল্যান্ডের কথা বলা যায়। যে অঞ্চলটি এখন অনেকটা মাছশূন্য হয়ে পড়েছে।

আমরা আমাদের বে অব বেঙ্গলকে অনুরূপ মৎস্যশূন্য দেখতে চাই না। আর সে কারণেই আগাম এই সতর্কবার্তার প্রতি আমাদের সম্মান দেখাতে হবে। কোনো ধরনের কার্পণ্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ভয়াবহ অপরাধ হিসেবেই বিবেচিত হবে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, অতিরিক্ত আহরণের কারণে যেকোনো মাছ বাণিজ্যিকভাবে বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করে। সুরক্ষার ব্যবস্থা করা না হলে সম্পূর্ণভাবে তা বিলুপ্ত হতে পারে।

এদিকে সরেজমিন রিপোর্ট প্রতিবেদন বলছে, বাস্তবচিত্রই তার প্রকৃষ্টি উদাহরণ। ৩৫ বছর ধরে সমুদ্রে মাছ ধরার সঙ্গে যুক্ত জসীম মাঝির সাফ জবাব, এখন আর আগের মতো মাছ নেই। আগে যেখানে দু-তিন ঘণ্টা নৌকা চালিয়ে মাছ ধরতে পারতেন এখন ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা চালিয়ে সাগরের গভীরে যেতে হয়। মাছের যত জাত আছে সব মাছ কমে গেছে। আগে পাওয়া যেত, এখন যায় না।

এ ছাড়া অত্যাধুনিক মাছ ধরা জাহাজের শিকারিদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ রয়েছে, তাও খতিয়ে দেখা দরকার। অভিযোগে বলা হয়, ইন্ডাস্ট্রিয়াল নৌযানে মাছ শিকারের যে জাল, সেটিরও নির্ধারিত মাপ আছে। কিন্তু সেই মাপ মানা হচ্ছে না। সুবিধামতো মাপের জাল দিয়েই তারা মাছ শিকারে লিপ্ত রয়েছেন।

আমরা মনে করি, ইলিশকে টার্গেট করে যেভাবে সাফল্য এসেছে সামুদ্রিক অন্যান্য মূল্যবান অর্থকরী মাছের ক্ষেত্রেও আলাদা করে সুনির্দিষ্ট কৌশল পরিকল্পনা করা আজ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। আশা করি সরকার এ দাবি পূরণে আন্তরিক হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মৎস্য উৎপাদন,বঙ্গোপসাগর,গবেষণা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close