সম্পাদকীয়

  ১৯ জানুয়ারি, ২০২০

কৃষিতে সাফল্য অব্যাহত থাকুক

কৃষি উন্নয়ন মানেই দেশের উন্নয়ন। স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই চেতনা থেকেই সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন, বলেছিলেন দেশের এক ইঞ্চি মাটিও যাতে অনাবাদি না থাকে। তিনি সমবায়ের ভিত্তিতে জমিতে চাষাবাদের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেট সব স্বপ্ন চূরমার করে দেয়, সপরিবারে নিহত হন বঙ্গবন্ধু। তারপরও তার সংক্ষিপ্ত শাসনকালে কৃষিতে এসেছে আশাতীত সাফল্য। তখন দেশে জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি, বর্তমানে যা প্রায় ১৭ কোটি।

ভূমির অনুপাতে লোকসংখ্যা অনেক বেশি। এরপরও ক্ষয়িষ্ণু আবাদি জমি থেকে খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। এর মূলে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ অবদান। জাতির জনকের অসমাপ্ত কর্মসূূচি বাস্তবায়নে তার একাগ্রতা ও নিষ্ঠার প্রাপ্তি বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।

বিশ্বে খাদ্যশস্যের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগোচ্ছে বাংলাদেশ। খাদ্যশস্যে প্রতি হেক্টরে ১০ দশমিক ৩৪ টন উৎপাদন করে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম, যা নিঃসন্দেহে বিশাল অর্জন। এবার সেই অর্জনকে স্থায়ী ভিত্তি দিতে বার্ড, কুমিল্লা বাস্তবায়নাধীনে ডিজিটাল ভূমি জরিপের মাধ্যমে লাকসাম উপজেলার কান্দিরপাড় ইউনিয়নের নোয়াপাড়া ও ছনগাঁও গ্রামের যৌথ খামার প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী ৭৫ জন কৃষকের ৪০ একর কৃষিজমির সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্বাচিত ৪০ একর কৃষিজমির ১৪১টি প্লটের আইল উঠিয়ে দিয়ে একত্র করে চলমান বোরো মৌসুমে ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে ধান রোপণ করা হচ্ছে। একটি বহুপক্ষীয় চুক্তির আওতায় স্থানীয় কৃষকরা এ কাজে অনুপ্রাণিত হয়েছেন, যা পুরো দেশের জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মনে রাখতে হবে, কৃষি উন্নয়ন মানেই সারা দেশের উন্নয়ন। কৃষি খাতে সরকারের উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে কৃষককে এগিয়ে আসতে হবে।

গত শুক্রবার উল্লিখিত প্রকল্পের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, কৃষিকাজের মাধ্যমে কৃষক যাতে অধিক পরিমাণে লাভবান হতে পারেন, সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ছোট ছোট কৃষিজমি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে অধিক পরিমাণে ভেজাল ও বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে। যান্ত্রিকীকরণের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে আধুনিক চাষব্যবস্থা প্রবর্তনের মডেল উদ্ভাবনের লক্ষ্যে এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আধুনিক এ পদ্ধতিতে কৃষককে নিয়ে গঠিত একটি সমাজভিত্তিক এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে চাষাবাদ পরিচালনা করা হচ্ছে। সংগত কারণেই আমরা মনে করি, এই পদ্ধতিতে খন্ড জমিকে ডিজিটাল ভূমি জরিপের মাধ্যমে আইল তোলে দিয়ে বৃহদাকার জমিতে একই কিংবা বিভিন্ন জাতের ফসলের চাষাবাদ ও শস্য উৎপাদন করা সম্ভব। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন। দেশের হবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। কৃষিবান্ধব এই সরকার যে সদিচ্ছা নিয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে সারা দেশের কৃষক অনুপ্রাণিত হবে।

অন্যদিকে কৃষি খাতে সূচিত হবে এক বৈপ্লবিক ধারা। পাশাপাশি অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ কৃষকের ফসলের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। ফলে কৃষিকে লাভজনক খাতে রূপান্তরের মাধ্যমে সরকার দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে স্থায়ী ভিত্তি দিতে সক্ষম হবে- আর এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কৃষি,কৃষিতে সাফল্য,কৃষি উন্নয়ন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close