সম্পাদকীয়
র্যাগিং বন্ধে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়িত হোক
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে র্যাগিং নামের এক অপসংস্কৃতি। যার নগ্ন শিকার হচ্ছেন নতুন শিক্ষার্থীরা। ফলে উচ্চশিক্ষার যে স্বপ্ন নিয়ে তারা নতুন জীবন শুরু করেন তা শুরুতেই হয় বাধাগ্রস্ত। এর অবসান হওয়া উচিত। কারণ স্কুল-কলেজের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ করা প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবনে একটি সুন্দর ও কাঙ্ক্ষিত অধ্যায়। অনেক স্বপ্ন ও আশা নিয়ে একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন জীবন গড়তে। কিন্তু তারা জানেন না তাদের সেই স্বপ্নগুলোয় প্রথম বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সিনিয়র ভাই বোনেরাই। যাদের কাছ থেকে তাদের পাওয়ার কথা একটি সুন্দর জীবন গড়ার নানা দিকনির্দেশনা। উল্টো তারাই জুনিয়রদের নানা রকম মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে তাদের শিক্ষাজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেন; যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই নয়, অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও র্যাগিং কালচার ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এই অনৈতিক কালচারের লাগাম এখনই টেনে ধরতে হবে। না হলে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে নতুনদের শিক্ষাজীবন। এবার সে লক্ষ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাগিংয়ের নামে জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের হাতে নবীনদের নির্যাতন ঠেকাতে কমিটি ও স্কোয়াড গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি র্যাগিং আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের দ্রুত প্রতিকার পাইয়ে দেওয়ার জন্য এন্টি-র্যাগিং কমিটি গঠন করতে তিন মাসের সময়ও বেঁধে দিয়েছেন আদালত।
এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের জীবন ও সম্মান রক্ষায় র্যাগিং বন্ধে নীতিমালা করতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না; তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। জনস্বার্থে করা এ-সংক্রান্ত এক রিটের শুনানি নিয়ে গত রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। স্বরাষ্ট্র সচিব, শিক্ষা সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আমরা আশা করি, র্যাগিং নামের এই অপকালচার বন্ধে আদালতের এ নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়িত হবে। এতে নতুন শিক্ষার্থীরা সিনিয়রদের নানা অপঘাত থেকে যেমন রক্ষা পাবেন, তেমনি তাদের শিক্ষাজীবনে আসবে নতুন উদ্দীপনা। যা দেশের জন্যও হবে মঙ্গলময়। আমাদের পাশের দেশ ভারতে এন্টি র্যাগিং টোল ফ্রি কল সেবা চালু করেছে সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। ফলে অনেক শিক্ষার্থী র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে সেই নাম্বারে কল করে র্যাগিং থেকে সুরক্ষা পাচ্ছেন। আমাদের দেশেও এ রকম একটি টোল ফ্রি সার্ভিস চালু করা যেতে পারে। এ ছাড়া র্যাগিং বন্ধে ভারতে এন্টি র্যাগিং আইনও তৈরি করা হয়েছে অনেক আগে। আমাদের দেশে শিক্ষা আইনে এ রকম কোনো আইন এখনো যুক্ত হয়নি।
তবে এবার র্যাগিং বন্ধে আদালত যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা বাস্তবায়ন হলে এই অপসংস্কৃতির দ্রুত অবসান হবে বলে আমরা মনে করি। প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে র্যাগিংয়ের অনেক ঘটনা ঘটছে; যেগুলো সবার চোখে পড়ছে না। র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে আইন তৈরি হলে শিক্ষার্থীরা র্যাগিং প্রতিরোধে সোচ্চার হবেন এবং প্রতিকারও পাবেন। শিক্ষার্থীদের মাঝে পারস্পরিক সম্মান বৃদ্ধি পাবে। তাই র্যাগিং বন্ধে আদালত যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা অত্যন্ত সময়োপযোগী। এটি দ্রুত বাস্তবায়ন হবে—এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।
পিডিএসও/হেলাল