সম্পাদকীয়

  ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯

বিজয়ের চেতনা সমুন্নত থাকুক

আজ ১৬ ডিসেম্বর। বাঙালি জাতির মহান গৌরবময় বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে ৯ মাসের মরণপণ লড়াই শেষে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাঙালি জাতির এ অর্জন বিশ্ব ইতিহাসের এক অব্যর্থ অধ্যায়। ওইদিন ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমর্পণ করেছিল পাকিস্তান হানাদার বাহিনী। যার মধ্য দিয়ে অভ্যুদয় ঘটে বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীন বাংলাদেশের। ১৭৫৭ সালে পলাশী প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, তা আবার উদিত হলো ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর।

বিজয়ের অনুভূতি যেমন আনন্দের, তবে কোনো কোনো সময় তা বেদনারও হয়ে থাকে। কারণ লাখ লাখ মানুষের আত্মত্যাগের ফসল আমাদের স্বাধীনতা। আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে তাদের স্মরণ করছি। শ্রদ্ধা জানাচ্ছি, যেসব মা-বোন নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, তাদের। এ দেশের মানুষের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার তথা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কোটি কোটি মানুষকে তিনি স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে তুলেছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন একই লক্ষ্যে অবিচল একদল রাজনৈতিক নেতা। আজকের এই মহান দিনে তাদের সবাইকে আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।

বিজয় অর্জনের ৪৮ বছরের পথপরিক্রমায় জাতির স্বপ্ন কতটা পূরণ হয়েছে, এ প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে। তবে নির্দ্বিধায় বলা যায়, এর মধ্যে আমাদের অনেক চড়াই-উতরাই মোকাবিলা করতে হয়েছে। রাজনীতি এগিয়েছে অমসৃণ পথে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার পরও বাঙালি জাতি তথা বাংলাদেশ আজ বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছে। বিশেষ করে বিগত এক দশকে দেশ পেয়েছে উন্নয়নের রোল মডেলের খ্যাতি।

আমরা আশা করি, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবিচল নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের যে গতিতে চলছে, তা অব্যাহত থাকবে। ক্ষেত্রবিশেষে জাতীয় প্রশ্নে অনেক অনৈক্য আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে রয়েছে। এ ছাড়া দেশে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এখনো তৎপর। আশার কথা, যুদ্ধাপরাধের বিচার চলছে এবং গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি রায় কার্যকরও হয়েছে। সমগ্র বিচার সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে তা এ ধরনের অপশক্তির তৎপরতা রোধে সহায়ক হবে, আশা করা যায়। এতে আইনের শাসন জোরদার করার পথ সুগম হবে। উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার শর্ত পূরণ করেছে বাংলাদেশ। তবে অর্থনৈতিকভাবে আমাদের আরো এগিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত মূল্যবোধ রক্ষায় হতে হবে যত্নবান। তবেই বিজয় হয়ে উঠবে অর্থবহ। যেকোনো জাতির শক্তির প্রধান উৎস ঐক্য। আর এজন্যই সম্ভব হয়েছিল মাত্র ৯ মাসে শক্তিশালী পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করা। এবার আমাদের কাজ হবে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। এর ফলে আমাদের অগ্রগতি যেমন দ্রুত ঘটবে, তেমনি সমুন্নত থাকবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা—এই হোক বিজয় দিবসে আমাদের অঙ্গীকার।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিজয়ের চেতনা,১৬ ডিসেম্বর,১৯৭১,সম্পাদকীয়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close