সম্পাদকীয়

  ১২ ডিসেম্বর, ২০১৯

বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে

মুক্তবাজার অর্থনীতি অনেক দেশে ভোক্তাদের ক্ষতি করতে না পারলেও বাংলাদেশের বাজারকে যে তছনছ করে দিয়েছে, এ কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ভুক্তভোগীরাই জানেন রক্তক্ষরণের পরিমাণ কত। এ দেশে মুক্তবাজার অর্থনীতির সংজ্ঞা পাল্টে গেছে অথবা বলা যায় পাল্টে দেওয়া হয়েছে। আর এই পাল্টে দেওয়ার কাজটি করেছেন বেনিয়ারা অর্থাৎ ব্যবসায়ী সম্প্রদায়।

বাজারের প্রতিটি স্তরই মুক্ত। এখানে যে যার মতো দাম নির্ধারণ করে পণ্য বিক্রি করার অধিকার রাখেন। একদিকে মুক্তবাজার, পাশাপাশি গণতন্ত্রের দেশ। তবে এ কথাও সত্য যে, মুক্তবাজার বা গণতন্ত্র কোনটাই এর জন্য দায়ী নয়। দায়ী ব্যবসায়ীদের মানসিকতা আর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণহীনতা। এই দুই অবস্থানের কোনো পরিবর্তন করা না গেলে ক্রেতাপক্ষের রক্তক্ষরণ বাড়তেই থাকবে।

পাশাপাশি আরো একটি সত্য এই যে, অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো উল্লিখিত দুই সম্প্রদায়ের পক্ষে আর সম্ভব নয়। সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে। সরকার যে দায়িত্ব নেয়নি সে কথাও সত্য নয়। সরকারের ডিলেঢালা আচরণের কারণে বাজারে কোনো পরিবর্তনের ছাপ পড়েনি বলেই মনে করছে সাধারণ মানুষ। তাদের মতে, এ বিষয়ে সরকারকে কঠোর থেকে কঠোরতর অবস্থানে গিয়ে ভূমিকা পালন করতে হবে।

চাল, ডাল, তেল, নুন, পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ যাবতীয় পণ্য সামগ্রীর দাম স্থির নয়। অনেকটা হৃদরোগীর হৃদকম্পনের মতো বিপর্যস্ত। বাজার নিয়ন্ত্রণ এতটাই ভেঙে পড়েছে যে, পাশাপাশি দুটি দোকানে একই পণ্যের মূল্য এক নয়। অর্থাৎ নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রির রেওয়াজ হারিয়ে গেছে। রিকশার কথাই বলুন আর বেবিট্যাক্সির কথাই ধরুন, কোথাও নির্ধারিত ভাড়ার কোনো বালাই নেই। যে যার ইচ্ছামতো ভাড়া চাইছেন, ভোক্তারা অনেকটা জিম্মির মতো অসহায়ত্ব প্রকাশ করে দফারফা করছেন। একই অবস্থা কাঁচাবাজারে। ইদানীং মহানগরের নামকরা হাসপাতালেও শুরু হয়েছে এ ধরনের অনৈতিক আচরণের।

অভিযোগ উঠেছে, রাজধানীর পদ্মা জেনারেল হাসপাতালে দুই বক্স ফেডরিন ইনজেকশনের দাম নেওয়া হয়েছে ৮০০ টাকা। অথচ পপুলার ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির এই ইনজেকশনের প্যাকেটের গায়ে প্রতিটির দাম লেখা রয়েছে ২৫ টাকা। অর্থাৎ ১০টির বক্সের দাম ২৫০ টাকা। এই দর ঠিক থাকলে দুই বক্সের দাম পড়ে ৫০০ টাকা। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাম রেখেছেন ৮০০ টাকা। অপর এক রোগীর কাছে একই ইনজেকশন বিক্রি করা হয়েছে বাক্সপ্রতি ৪১৫ টাকা। দুই বাক্সের দাম রাখা হয়েছে ৮৩০ টাকা। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের অভিযানে বেরিয়ে আসে ওষুধের দাম নিয়ে প্রতারণার এই ভয়াবহ চিত্র।

এ চিত্র কেবল একটি হাসপাতালেই নয়। বিভিন্ন ফার্মেসিরও চিত্র একই রকম। বিক্রেতার ইচ্ছাই শিরোধার্য বলে বিবেচিত। ক্রেতাদের ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষার প্রতি কারো কোনো খেয়াল রাখার বা থাকার কোনো সুযোগ নেই।

আমরা মনে করি, বাজারের সব স্তরের প্রতারণার হাত থেকে ক্রেতাপক্ষকে রক্ষার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। এতে সরকারকে যদি কঠোর থেকে কঠোরতর সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হয়, তবে জনস্বার্থেই তা গ্রহণ করবে। কেননা আমরা বিশ্বাস করি, এ সরকার জনগণেরই সরকার।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সম্পাদকীয়,বাজার,সরকার
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close