সম্পাদকীয়

  ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৯

বিষণ্নতাকে না বলতে হবে

চিকিৎসাবিদ্যায় বিষণ্নতা একটি রোগের নাম। তবে রোগটি দৈহিক কোনো রোগ নয়, এটি একটি মানসিক ব্যাধি। হতাশাই এ রোগের মূল কারণ। সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য যখন কোনো অবলম্বন খুঁজে পায় না, ব্যর্থতা তাকে কুরে কুরে খায়, হতাশার শেষ প্রান্তে যখন তার অবস্থান—ঠিক তখনই বিষণ্নতা তাকে গ্রাস করে। বিষণতাগ্রস্ত মানুষ নিজেকে প্রতিবন্ধীর চেয়েও মূল্যহীন বলে মনে করে। যেকোনো অর্থনৈতিক অবস্থানে বিষণ্নতার আগ্রাসন হতে পারে। জীবনের ওপর ভীত হয়ে মানুষ এই বিষণ্নতার কাছে শেষ আশ্রয় খোঁজেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর ব্যবস্থাপত্র আছে। তবে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী হিসেবে গড়ে তোলাই হচ্ছে বিষণ্নতার অন্যতম ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক। সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) প্রতিবেদন বলছে, ঢাকার ৪৪ শতাংশ মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছেন।

প্রতিষ্ঠানটি ঢাকার প্রায় সাড়ে ১২ হাজার মানুষের ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়ে এ তথ্য সরবরাহ করেছে। সমীক্ষায় দেখা যায়, শহরের ৬৮ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে অসুস্থ। অর্থ উপার্জনের সবচেয়ে বেশি সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এখানে দরিদ্র সম্প্রদায়ের বসবাস কম নয়। মাত্র এক-চতুর্থাংশের নিজস্ব আবাসন রয়েছে। বাকিদের নেই। আর ক্ষুদ্র পেশাজীবী বা বেতনভূক চাকুরেরাই সংখ্যাধিক্য। এদের অধিকাংশই নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যায়। তবু ঢাকাকে তারা ভালোবাসেন। সুখের দেখা না পেলেও তারা নিজেকে অসুখী ভাবেন না। কেননা, কাজের সুযোগের পাশাপাশি ঢাকাতেই শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ অন্যান্য জেলা শহরের তুলনায় বেশি। বিপরীতে রয়েছে অসংখ্য বাধা। বায়ুদূষণে বিশ্বের মধ্যে ঢাকার অবস্থান শীর্ষে। বিষয়টি নিয়ে ঢাকার মানুষের দুশ্চিন্তা থাকতেই পারে। গভীর থেকে গভীরতর হতেও পারে। আর এই দুশ্চিন্তা একসময় হতাশাও ডেকে আনতে পারে- যদি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া না যায়।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষণ্নতার একটি বড় কারণ হতে পারে অসুস্থতা। এ ছাড়া শহরের ১৭ শতাংশ দরিদ্র। অর্থনৈতিক কারণে তাদের মধ্যে বেশির ভাগই থাকেন বস্তিতে। বসবাসের সংস্থান নেই অনেকের। পাশাপাশি নগরীর ট্রাফিক জ্যাম, বাতাসের মান, বিশুদ্ধ পানির অভাবসহ নানাবিধ বিড়ম্বনা বিষণ্নতার কারণের অংশ হতে পারে। তাদের মতে, মূলত চারটি প্রধান কারণে মানুষের ওপর চরম মানসিক চাপ তৈরি করছে। ১. অসুস্থতায় ভোগা, ২. দারিদ্র্য, ৩. জীবনযাত্রার মান এবং ৪. দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা। এসব কারণে মানসিক চাপের উল্লম্ফন ঘটিয়ে বিষণ্নতায় প্রবেশের সুযোগ তৈরি হচ্ছে এবং মানুষ ভুগছেন বিষণ্নতায়।

মানসিক চাপ ও বিষণ্নতাকে এক বলে ভাবার কোনো কারণ নেই। কিছু মানুষের মধ্যে মানসিক চাপ সাময়িক। সে ক্ষেত্রে সেই মানসিক চাপকে বিষণ্নতার পর্যায়ে ফেলা যাবে না। বিষণ্নতা একটি রোগ। মানসিক চাপ দীর্ঘায়িত হয়ে যদি কোনো মানুষের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়, উৎপাদনশীলতা কমে যায়, আচরণে বড় ধরনের পরিবর্তণ লক্ষ করা যায়, তাহলে তা আর মানসিক চাপের পর্যায়ে না থেকে বিষণ্নতায় আক্রান্ত রোগী হিসেবেই বিবেচিত হবেন। এ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র পথ নিজের ওপর নিজের বিশ্বাসকে জোরদার করা। আত্মবিশ্বাসই পারে এ রোগ থেকে রোগীকে মুক্ত করতে। সেই সঙ্গে বলতে হয়, বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার মধ্যে নিহিত রয়েছে রোগমুক্তির পথ্য। আর সে পথ্যের নাম ‘অর্থনৈতিক মুক্তি’।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সম্পাদকীয়,বিষণ্নতা,সমীক্ষা,মানসিক চাপ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close