সম্পাদকীয়

  ২১ নভেম্বর, ২০১৯

গুজবে কান দেবেন না

চিলে কান নিয়ে গেছে। কানে হাত না দিয়ে লোকটি ছুটছে চিলের পেছনে। ফলে ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। লোকটি এখন হাসপাতালে। কানের চিকিৎসায় নয়, বেহুঁশের মতো ছুটতে গিয়ে লোকটি তার পা ভেঙেছে। কান তার যথাস্থানেই আছে। কথাগুলোর সঙ্গে হুবহু মিলে যাচ্ছে আমাদের সামাজিক বোধ। পেঁয়াজের ধকল সামলে উঠতে না উঠতেই খবর এলো, এবার লবণের লবণাক্ততার ৮০ শতাংশই শুষে নিয়েছে বঙ্গোপসাগর। এক খবরেই বাজিমাত। শুরু হলো ছোটাছুটি। লবণের পেছনে মানুষ। ‘লবণ’ একটু মুচকি হেসে নিচু স্বরে বলল, ‘নির্বোধ কোথাকার’!

জাতি হিসেবে আমরা কতটা নির্বোধ, তা জানা নেই। তবে বোধের হৃৎপিন্ডে যে অবক্ষয় জেঁকে বসেছে; তা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায়। চারপাশের বাস্তবতা সে কথাই বলছে। এত দিন অস্থিরতা ছিল পেঁয়াজ নিয়ে। গত মঙ্গলবার আরেক নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য লবণ নিয়ে শুরু হয় একই পরিস্থিতি। সরবরাহ সংকটের গুজবে দেশজুড়েই লবণ কেনার হিড়িক দেখা গেল। ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়তে থাকল দাম। ৩০ টাকা কেজি দরের লবণ কোথাও কোথাও ১৫০ টাকাও ছাড়িয়ে যায়।

সরকারি তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে সাড়ে ৬ লাখ টনের বেশি ভোজ্য লবণ মজুদ রয়েছে। এরমধ্যে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের লবণচাষিদের কাছে মজুদ ৪ লাখ ৫ হাজার টন এবং বিভিন্ন লবণ মিলের গুদামে ২ লাখ ৪৫ হাজার টন। এ ছাড়াও সারা দেশে বিভিন্ন লবণ কোম্পানির ডিলার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার কাছে পর্যাপ্ত লবণ মজুদ রয়েছে। পাশাপাশি চলতি মাস থেকে লবণ উৎপাদন মৌসুম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বাজারে নতুন লবণও প্রবেশ করেছে। তথ্য-উপাত্ত বলছে, দেশে প্রতি মাসে ভোজ্য লবণের চাহিদা প্রায় ১ লাখ টন। বিপরীতে লবণের মজুদ রয়েছে সাড়ে ৬ লাখ টন।

এখানেই প্রশ্ন! তাহলে দাম বাড়ার কারণটা কী? প্রশ্নটা কঠিন হলেও উত্তর ততটা জটিল নয়। সহজ করে বললে বলতে হয়, চাহিদা সরবরাহকে অতিক্রম করলে দাম বাড়বে। এখানেও তাই হয়েছে। তবে এই চাহিদা প্রকৃত চাহিদা নয়। প্রথমত, আমাদের নির্বোধ আচরণ এই চাহিদাকে হান্ড্রেড মিটার প্রিন্ট-এ পরিণত করেছে। পাশাপাশি সরবরাহকে কৃত্রিম উপায়ে ব্ল্যাকআউট করে বলা হয়েছে, কান নিয়ে গেছে চিলে। স্বার্থান্বেষী মহল তো চিলের কথা বলবেই। আমরা কেন অন্ধের মতো চিলের পেছনে ছুটব?

বাজারে সরকারের কঠোর মনিটরিং চলছে। আশা করা যায়, পেঁয়াজের মতো লবণকে দীর্ঘস্থায়ী করা যাবে না। কিন্তু স্বল্প স্থায়ীইবা কেন হবে! বলা হচ্ছে, সিন্ডিকেটের কালো হাত মূল্যবৃদ্ধি করে বেহিসাবি মুনাফার জন্য এ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। প্রতারণার সুযোগ থাকলে প্রতারকরা সুযোগের সদ্ব্যবহার করবেই। এবারই প্রথম নয়, ফি বছর একটাই ঘটছে। সিন্ডিকেট তাদের সুযোগের সদ্ব্যবহার করেই চলেছে। কোনো প্রতিকার নেই। সুযোগ বন্ধের কোনো উদ্যোগও নেই। আমরা সুযোগ নামের ছিদ্রটি বন্ধ করে বিষয়টির একটি স্থায়ী সমাধান চাই। আশা করি, যথাযথ কর্তৃপক্ষ বিষয়টির একটি স্থায়ী সমাধানের কথা মাথায় রেখে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণে এগিয়ে আসবে—এটুকুই প্রত্যাশা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
গুজব,কান,সম্পাদকীয়,লবণ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close