সম্পাদকীয়

  ১৬ নভেম্বর, ২০১৯

ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় এগিয়ে আসুন

বিষয়টি বাজারবিষয়ক হলেও মূল প্রতিপাদ্য নিয়ন্ত্রণ। বিশেষ করে ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে তা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। দেশ ছোট হলেও আমাদের বাজারের ব্যাপ্তি ছোট নয়। প্রায় ১৭ কোটি মানুষের বসবাস। ভোগ্যপণ্যের বাজারই এ দেশে মুখ্য বলেই বিবেচিত। এদের চাহিদার ওপরই দাঁড়িয়ে আছে সব বাণিজ্য। চাহিদার সঙ্গে জোগানের ঘাটতি থাকলেই বাজার অস্থিতিশীল হবে— এটাই স্বাভাবিক।

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে প্রায়ই এ রকম অবস্থা তৈরি হতে দেখা যায়। রাতারাতি ভোগ্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী হয়ে পড়ে। কারণ বিশ্লেষণে বলতে হয়, বাজার নিয়ন্ত্রণের কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা না থাকা। প্রতিবারই সংকট আসে, সাময়িকভাবে প্রতিরোধের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাতে কোনো সুফল আসেনি। নিয়ন্ত্রণহীনতার কবলে পড়ে বারবার বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। এখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের ছিটে-ফোঁটা নিদর্শন এখনো অনুপস্থিত। আমরা স্থায়ী সমাধানের প্রত্যাশী।

অনেক উদ্যোগ, আশ্বাস আর পদক্ষেপেও কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে এলো না পেঁয়াজের বাজার। মূল্যবৃদ্ধির রাশ টেনে ধরতে পারছে না নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। উল্টো কেজিপ্রতি বাড়ল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এ নিয়ে চার মাসে পেঁয়াজের দাম বাড়ল ২৫ বার। বলা যায়, মূল্যবৃদ্ধিতে রেকর্ড গড়ল পেঁয়াজ। গত বৃহস্পতিবার দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ২০০-২২০ টাকায়। দাম বাড়ার পেছনে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করছেন ক্রেতারা। কারণ হিসেবে তারা বাজার, আমদানিকারক ও পাইকারদের তদারকি না করাকে দুষছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভোক্তাদের সঙ্গে আমদানিকারক ও পাইকারি বিক্রেতাদের প্রতারণার কুফল এটি। যে যেভাবেই ব্যাখ্যা করুন না কেন, চাহিদা ও জোগানকে সমান্তরালে না রাখতে পারলে কোনো ব্যবস্থাই কাজে আসবে না। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান হয়নি। বিষয়টি প্রতিযোগিতার। ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ সুখবর হলো, তাদের সামনে এমন কোনো প্রতিপক্ষ নেই যে, তাদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে। আর সে কারণেই তারা অপ্রতিরোধ্য। নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ এবং নিয়ন্ত্রক। তাই ব্যবসায়ীদের হাতে ভোক্তারা আজ জিম্মি হয়ে পড়েছে।

সরকার অনেকভাবেই চেষ্টা করেও লাগাম টেনে রাখতে পারেনি। আইন যা আছে, তা মনিটরিংয়ের জন্য যথেষ্ট। তবে যেটুকু মনিটরিং দরকার, সেখানে ঘাটতি অনেক। আর গোড়ায় গলদ থাকলে মনিটরিং দিয়ে তা মোকাবিলাও সম্ভব নয়। বরং প্রয়োজন, ব্যবসায়ীদের মনোপলি ব্যবসা করার সুযোগ প্রতিহত করা। তাদের সামনে সমান্তরাল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। বাজারে যে প্রতিষ্ঠানটি এসব সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীর প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হবে।

নামমাত্র হলেও দেশে এ রকম একটি প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব আছে। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সেই প্রতিষ্ঠানটি এখনো মাজা সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি। দাঁড়াতে পারেনি বললে ভুল বলা হবে। তাকে দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির নাম টিসিবি। এই প্রতিষ্ঠানটিকে যদি এসব অসাধু ব্যবসায়ীর প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো হয়; তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকারকে আর নতুন করে সমাধানের কথা ভাবতে হবে না।

দুপক্ষ নিজেদের মধ্যে মারামারি-কাটাকাটি করে বাজারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হবে। পাশাপাশি বহু বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করা যাবে। এর জন্য টিসিবিকে একটি চেইনশপের আওতায় এনে ছড়িয়ে দিতে হবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। সরকার প্রথমে দেশের ৬৪ জেলায় তা কার্যকর করতে পারে। অতঃপর উপজেলা এবং প্রত্যন্ত অঞ্চল। এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, এটি হতে পারে সরকারের একটি লাভজনক ব্যবসা।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পেঁয়াজের দাম,ভোক্তা অধিকার,বাজার নিয়ন্ত্রণ,অসাধু ব্যবসায়ী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close