সম্পাদকীয়

  ১৪ নভেম্বর, ২০১৯

রেলভ্রমণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক

সড়কের নিরাপত্তা হারাতে হারাতে সাধারণ মানুষের যখন নাভিশ্বাস উঠেছে, ঠিক একই সময়ে রেলভ্রমণও হয়ে উঠছে তার উত্তরসূরি। অথচ এমনটি হওয়ার কথা নয়। বিশ্বের সবচেয়ে আরামদায়ক ও নিরাপদ যোগাযোগমাধ্যমের নাম রেলব্যবস্থা। উন্নত বিশ্বে রেলব্যবস্থাই সর্বাধিক জনপ্রিয়। বাংলাদেশেও যোগাযোগব্যবস্থায় সড়কপথের চেয়ে রেল অনেক বেশি আরামদায়ক ও নিরাপদ হিসেবেই বিবেচিত হয়ে এসেছে।

কিন্তু বাস্তবতা বলছে, বিষয়টি আর সে রকম নেই। মানুষের সেই স্বাভাবিক চিন্তার ভিন্নতা আনতে যেন বাধ্য করেছে রেলব্যবস্থাপনা। সড়ক দুর্ঘটনার কবল থেকে নিজেকে বাঁচাতে এত দিন বেছে নিয়েছিল রেলভ্রমণকে। অথচ রেলও সাধারণ মানুষকে সেই নিরাপত্তা দিতে পারেনি। স্বাচ্ছন্দ ও নিরাপদে যাতায়াতের অন্যতম নিরাপদ বাহনে এখন নেই সেই দুর্ঘটনামুক্ত ভ্রমণের নিরাপত্তা। অনিরাপদ হয়ে উঠেছে রেলপথ। ট্রেন দুর্ঘটনার হার ক্রমেই বাড়ছে।

রাত তখন আনুমানিক পৌনে ৩টা। অধিকাংশ যাত্রী গভীর ঘুমে। বাকিরা তন্দ্রাচ্ছন্ন। হঠাৎ বিকট শব্দ। ট্রেনের বগি লাফিয়ে উঠে যায় কয়েক ফুট ওপরে। দুমড়ে-মুচড়ে যায় বগি। অন্ধকার ভেদ করে ভেসে আসে আর্তনাদ আর কান্নার রোল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগ রেলস্টেশনের বাইরে গত সোমবার দুই ট্রেনের সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা ১৬। আহত শতাধিক। এর মাঝে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে ১৫ জন। চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্তনগর তূর্ণা নিশীথা এবং সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী আন্তনগর উদয়ন এক্সপ্রেসের মধ্যে এ সংঘর্ষ সংঘটিত হয়।

সংশ্লিষ্টদের মতে, তূর্ণা নিশীথার চালকের দায়িত্বহীনতাই দুর্ঘটনার কারণ। তথ্যমতে, মন্দবাগ রেলস্টেশন মাস্টার স্টেশনে প্রবেশের আগেই আউটারে থামার নির্দেশ দিলেও তূর্ণা নিশীথার চালক তা আমলে নেননি। তার সামান্য একটি অবহেলা, জাতি ও রাষ্ট্রের জন্য কতটা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে—এ কথা ভাবার মতো লোকের সংখ্যা আজ কমতে কমতে সম্ভবত শূন্যের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে। আমরা যেন ক্রমেই এক বোধহীন মানবগোষ্ঠীতে পরিণত হচ্ছি। আমাদের সড়কের নিরাপত্তা, রেলপথের নিরাপত্তা, জীবনযাপনের নিরাপত্তা—সর্বত্রই যেন একই চিত্র।

লুটেরা আর দুর্নীতিবাজদের ছায়াতলে যেন ঢাকা পড়েছে অর্থনীতি। আর সেই অর্থনীতিই গ্রাস করেছে আমাদের নীতিবোধ। এখান থেকে বেরিয়ে আসাটাও সহজ নয়। তবে অসাধ্য নয়। প্রয়োজন একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লবের। সরকারকেই সে বিপ্লবের নেতৃত্ব দিতে হবে। সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার দায়িত্বও নিতে হবে সরকারকে। সাধারণ মানুষ যেকোনো ভালো কাজের পাশে সব সময়ই থেকেছে, ইতিহাস তার সাক্ষ্য। প্রয়োজনে সাধারণ মানুষ এই বিপ্লবেও ইস্পাত দৃঢ়তায় অংশ নেবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

ইতোমধ্যেই দায়িত্বে অবহেলার জন্য নিশীথার লোকোমোটিভ মাস্টার ও সহকারী মাস্টারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। প্রশ্ন হচ্ছে, এটাই কি সমাধান! না, সমাধান নয়। আমরা মনে করি, আমরা যে অবক্ষয়ের মাঝে প্রবেশ করেছি; সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে এ রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতেই থাকবে। একা সরকারের পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব নয়। সাধারণ ও সরকারের মাঝে সমন্বয়ের মধ্য দিয়েই এ বোঝা নামাতে হবে। পাশাপাশি দেশের প্রশাসন ও আইনি ব্যবস্থাকে আরো কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে আর ঢেলে সাজাতে হবে রেলের সার্বিক ব্যবস্থাপনাকে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নিরাপত্তা,রেলভ্রমণ,সম্পাদকীয়,ট্রেন দুর্ঘটনা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close