সম্পাদকীয়

  ০৫ নভেম্বর, ২০১৯

সিন্ডিকেটমুক্ত হোক পেঁয়াজের বাজার

সিন্ডিকেটের কবলে দেশের পেঁয়াজের বাজার। কারসাজির মাধ্যমে সিন্ডিকেটের হোতারা প্রতিদিন ৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন; যা রীতিমতো লোপাটের শামিল। ভারত উৎপাদন সমস্যার কথা বলে রফতানি সাময়িক বন্ধ করার পর থেকেই দেশের পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা চলছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, প্রায় চার মাস সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। বরং দিন দিন তা আরো অবনতির দিকে যাচ্ছে। এর পেছনে সিন্ডিকেট চক্রের কারসাজি রয়েছে বলে অনেকের ধারণা।

তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা খতিয়ে দেখে যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। অন্যদিকে কনসাস কনজ্যুমার্স সোসাইটি নামের একটি সংগঠন দাবি করেছে, গত চার মাসে ভোক্তাদের ৩ হাজার ১৭৯ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। যে অর্থ দিয়ে দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা সম্ভব।

রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের মূল্য নৈরাজ্য’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে কনসাস কনজ্যুমার্স সোসাইটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, কারসাজির মাধ্যমে দাম বাড়িয়ে জুলাইয়ে ৩৯৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, আগস্টে ৪৯১ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার, সেপ্টেম্বরে ৮২৫ কোটি ২৬ লাখ ৫০ হাজার ও অক্টোবরে ১ হাজার ৪৬৪ কোটি ৯৯ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কারসাজি চক্র। এর মধ্যে গত দুই সপ্তাহে অকল্পনীয় হারে পেঁয়াজের মূল্য বাড়লেও মূলত চার মাস আগে পণ্যটির মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে। ঈদুল আজহার এক মাস আগে জুলাই মাসের ২ তারিখ থেকে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়। সেই থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে ২৪ বার পেঁয়াজের মূল্য ওঠানামা করেছে। পণ্যটির মূল্যের এই ওঠানামার পেছনে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে বলে বাজার বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

তাদের মতে, পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে ব্যবসায়ীরা সরবরাহ কম ও আমদানি খরচ বৃদ্ধি—এই দুটি যুক্তি উপস্থাপন করছেন। কিন্তু পণ্যটির মূল্যবৃদ্ধির সময়কাল লক্ষ করলে দেখা যায়, তাদের দুটি যুক্তিই শুধু অজুহাত ও ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণার কৌশল। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে দেখা গেছে, দেশে বার্ষিক পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ লাখ টন, যার মধ্যে উৎপাদন হয় ১৪ থেকে ১৫ বা আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ১৬ লাখ টন। সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগের মধ্য দিয়ে বাকি ৮ লাখ টন উৎপাদন বৃদ্ধি করে চাহিদার জোগান দেওয়া বা আরো বেশি উৎপাদন করে রফতানিকারক দেশে পরিণত হওয়া দরকার। কারণ আমদানিনির্ভরতা মানুষকে বিপদে ফেলে এমনকি রফতানিকারক দেশগুলো অনেক সময় নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হলে আগের এলসি করা পণ্যও পাঠায় না। এটি বাণিজ্যনীতির বিরোধী হলেও অনেক দেশই তা মানতে চায় না।

তবে প্রাসঙ্গিক যে, পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের কারণে ভোক্তার পাশাপাশি সরকারও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এরই মধ্যে সরকারের নানাবিধ উন্নয়ন প্রকল্প ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে যে সুনাম তৈরি হয়েছে, তা যেন এই সামান্যতে ম্লান হয়ে না যায়। সেদিকে সরকারকে অবশ্যই দৃষ্টি দিতে হবে। পাশাপাশি সিন্ডিকেটের কবল থেকে ভোক্তাদের রক্ষার উপায়ও বের করতে হবে। আমরা আশা করি, দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে। সহনীয় পর্যায়ে ফিরে আসবে দেশের পেঁয়াজের বাজার—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাজার,পেঁয়াজ,সিন্ডিকেট
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close