সম্পাদকীয়

  ০১ নভেম্বর, ২০১৯

প্রযুক্তির প্রতি অবহেলা কাম্য হতে পারে না

এমন মৃত্যু কেউ চায় না। কারো কাম্য হতে পারে না। অসাবধানতাই এ রকম ঘটনার সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। বারবার একই পথে, একইভাবে হোঁচট খাবার পরও আমাদের বোধোদয় হয়নি। সম্ভাবনাও কম। কেননা অতীতকে আমরা দ্রুততম সময়েই ভুলে যাই। তাই শিক্ষাগ্রহণের বিষয়টি সব সময়ই থেকে গেছে বৃত্তের বাইরে। আর শিক্ষাবিবর্জিত সমাজের যা হওয়ার, তাই ঘটছে যত্রতত্র।

রাজধানীর মিরপুরের একটি বিদ্যালয়ের সামনে বেলুন ফোলানোর গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে পাঁচ শিশু নিহত হয়েছে গত বুধবার। আহত আরো ১৪ জন। চলতি বছর এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মিরপুর এলাকায় বিদ্যালয়ের সামনে বেলুন ফোলানোর গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল। ইতোপূর্বে গত ২৫ জানুয়ারি রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বরে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে বেলুনে গ্যাস ভরার সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সেবার ঘটনাস্থলেই বেলুন বিক্রেতার মৃত্যু হয়। আহত হয় স্কুলের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী।

এ তো গেল শুধু মিরপুর এলাকার কথা। এর বাইরে পড়ে আছে গোটা বাংলাদেশ। সিলিন্ডার বিস্ফোরণ এ দেশে নতুন কিছু নয়। সম্ভবত এ দেশে যেকোনো পণ্যের দাম ক্রমাগতভাবে বাড়লেও মানুষের দাম নিম্নগামী হয়েছে। আর এর সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, জাতি হিসেবে আমরা সম্মান রক্ষার্থে ব্যর্থ একটি জাতিতে পরিণত হয়েছি। এ কথা সত্য যে, যে ব্যক্তি অপরকে সম্মান দিতে জানে না, সে নিজেও কখনো সম্মানীয় হতে পারে না। আমরা সম্মান দিতে পারলে রাস্তাঘাটে এতো অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটত না।

অনেকের মতে, লুটেরা পুঁজির সংস্কৃতিই আমাদের সমাজ জীবনকে এক ভয়াবহ অপসংস্কৃতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। আর সেই অপসংস্কৃতির নখের আঁচড়ে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে গোটা সমাজ। সরকার অবশ্য এসব লুটেরা পুঁজির হাত থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষার চেষ্টা করছে। তবে সরকারের একার পক্ষে সফলতা ধরে আনা সম্ভব নয়। সরকারের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে গোটা সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে। লুটেরা পুঁজির দৌরাত্ম্যকে প্রতিহত করা না গেলে এ সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসাটাও সম্ভব হবে না।

আমাদের চারপাশে আজ যে সংস্কৃতি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে, তাকে লুটেরা পুঁজির প্রতিচ্ছবি ছাড়া আর কিছুই বলা চলে না। লুটেরা পুঁজিই আমাদের শিখিয়েছে মানুষকে অসম্মান করা। মানুষের প্রতি বিন্দুমাত্র সম্মানবোধ থাকলে আমরা প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেক বেশি সচেতন হতাম। আমরা আমাদের ভয়ংকর রোগব্যাধিকে ভ্যাকসিনের মাধ্যমে যেভাবে প্রতিহত করেছি, একইভাবে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগেই আইন আমাদের জীবন সুরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করত। আমরা সে রকম একটি বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ প্রত্যাশা করি।

একই সঙ্গে গোটা জাতির কাছে একটি অনুরোধ, আগামীতে আমরা ছোট-বড় সবাইকে সম্মান করার মানসিকতা তৈরির কাজে উদ্যোগ গ্রহণ করি। কেননা এ ধরনের অপমৃত্যু আমাদের শুধু ব্যথিতই করে না, আমরা জাতি হিসেবে মর্যাদাহীন জাতিতে পরিণত হই।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সম্পাদকীয়,প্রযুক্তি,অবহেলা,সিলিন্ডার বিস্ফোরণ,বেলুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close