সম্পাদকীয়

  ১৪ অক্টোবর, ২০১৯

র‌্যাগিং বন্ধ আজ সময়ের দাবি

বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরারের বাবা জাতির কাছে প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেছেন, পারবেন আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে? না, তা আর কোনো দিনই সম্ভব নয়। আবরার ফাহাদকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বেঁচে নেই। কোনো মৃত ব্যক্তিকে জীবিত ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা কারো নেই। তাই এ ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত, কারণ ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আমরা আর দেখতে চাই না।

বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনা প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেছেন, সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাগিংয়ের ঘটনা নিয়ে যদি আগে থেকে শিক্ষকরা ব্যবস্থা নিতেন; তাহলে আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনা ঘটত না। বিচারপতির এ বক্তব্যের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেই বলছি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। তার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ ছাত্রদের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ১৯২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ’ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৩ সালে গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে পূর্ব নাম পরিবর্তন করে বর্তমান নাম ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ’ গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চেতনা ও স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার হলো এই ছাত্র সংসদ। প্রতিষ্ঠাকালীন থেকেই বাংলাদেশের সামগ্রিক ইতিহাসে গৌরবময় ভূমিকা রাখে এই ছাত্র সংসদ। ৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তীতে ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭১-এর স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণের লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম এবং পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে স্বৈরাচার ও সামরিকতন্ত্রের বিপরীতে দাঁড়িয়েছে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে সাহায্য করেছে ডাকসু। কেবল ডাকসুই নয়, গোটা ছাত্রসমাজ ডাকসুর নেতৃত্বে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ফেলে আসা সব আন্দোলনকে করেছে যৌবনদীপ্ত। কিন্তু আজ!

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের সেই পুরোনো ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। আর সে কারণেই র‌্যাগিংয়ের মতো ভয়ংকর অনৈতিক শাসনে ভেঙে পড়েছে বিদ্যাপীঠের নান্দনিক সৌন্দর্য। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক দিন ধরেই চলছে র‌্যাগিংয়ের নামে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনা। সাধারণত আবাসিক হলের গেস্টরুমে র‌্যাগিংয়ের আসর বসে বিধায় ইতোমধ্যেই ‘গেস্টরুম সংস্কৃতি’ হিসেবে এর ব্যাপক পরিচিতি। এ ছাড়া রয়েছে হলভিত্তিক টর্চার সেল। সিনিয়র শিক্ষার্থীরা নবীন শিক্ষার্থীদের র‌্যাগিংয়ের নামে চালায় ভয়াবহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। বিষয়টি ওপেন সিক্রেট হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা আমলে নেয়নি কখনো। সম্প্রতি বুয়েটে আবরার হত্যাকাণ্ডের পর বিষয়টি আলোচনায় ওঠে আসে। দেশের ৪৪ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১২টিতে অন্তত ৫৮টি টর্চার সেলের খবর ওঠে এসেছে পত্রপত্রিকায়। আবাসিক হলের ছাত্ররা নিরাপত্তা হুমকির মুখে থাকায় টর্চার সেলের বিরুদ্ধে কখনো মুখ খোলেননি। পাশাপাশি প্রশাসনও এ ব্যাপারে কখনো ছাত্রদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি।

আমরা মনে করি, শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সেই প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করে সরকার তার পদক্ষেপ নিয়েছে। যাকে আমরা ইতিবাচক বলে মনে করতে পারি। আমরা চাই, দেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা ফিরে আসুক। র‌্যাগিং নামের পাপমুক্ত হয়ে প্রতিটি বিদ্যাপীঠ তাদের পুরোনো ঐতিহ্যে ফিরে যাক। আর যেন কোনো ছাত্রের পিতাকে বলতে না হয়, ‘পারবেন আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে?’

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
র‌্যাগিং,সম্পাদকীয়,শৃঙ্খলা,আবরার হত্যা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close