সম্পাদকীয়

  ০৪ অক্টোবর, ২০১৯

মুক্তিযোদ্ধাদের আমৃত্যু সেবা প্রদানকে স্বাগত

প্রত্যাশা ছিল। যে প্রত্যাশা ব্যক্তিগত কোনো প্রাপ্তির লক্ষ্যে নয়। লক্ষ্য, সমষ্টির প্রত্যাশা। স্বপ্নে ছিল স্বাধীনতা। সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তবে কি আর কোনো প্রত্যাশার কথা ভাবেন না দেশের এই মহান সন্তানরা। যদি বলা হয় ‘না’ তাহলে অসত্য বলা হবে। সত্যটি হলো প্রত্যাশা আছে। পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাও আছে। তবে সে পাওয়া কোনো অর্থ বা সম্পদের বৃত্তে শৃঙ্খলিত নয়। তাদের প্রত্যাশা বা চাওয়া-পাওয়ার সবটুকুই আজ একটি শব্দের মাঝে ঘনীভূত হয়ে আছে। আর সে শব্দটি হচ্ছে ‘সম্মান’।

সমাজের নানাবিধ সামাজিক, অর্থনৈতিক আর রাজনৈতিক কারণে আমরা একটি বিব্রতকর পরিবেশে বসবাস করছি। সম্মান শব্দটি যেন আজ তার সব গৌরব হারিয়ে ফেলেছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, সমাজের প্রতিটি সেক্টরে অবক্ষয়ের আগ্রাসনে হারাতে হচ্ছে আমাদের মর্যাদা। এ আগ্রাসন ঠেকানোর চেষ্টা কম হয়নি বা হচ্ছে না। কিন্তু অবক্ষয়ের অপ্রতিরোধ্য গতিকে ঠেকানো যায়নি বা যাচ্ছে না। ঠিক এ রকম এক সময়ে, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ‘সম্মান’ শব্দটির প্রতি যে ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের অবতারণা করেছেন তার জন্য তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ।

স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর সন্তানদের জন্য বিশেষ সম্মান দেখাতে মন্ত্রণালয়ের সব ধরনের যানবাহনে চলাচলের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের আর কোনো টাকা লাগবে না। মুক্তিযোদ্ধারা এসব সেবা ভোগ করবেন আমৃত্যু। আগামী ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের দিন থেকে বিষয়টি কার্যকর হবে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নীতিমালা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে বিআইডব্লিউটিসি।

সিদ্ধান্তটি কার্যকর হওয়ার আগেই সংশ্লিষ্টদের মাঝে ভিন্নমতের আবির্ভাব ঘটেছে। ভিন্ন মতাবলম্বীরা বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের নাতি-নাতনিরা রাষ্ট্রের সব ধরনের সুবিধা পাক এ নিয়ে তাদের আপত্তি নেই। তবে সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যয়ের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে তারা বলেন, এটি সাময়িক কোনো অনুদান নয়, আজীবন এ সিদ্ধান্তকে কার্যকর রাখতে হবে। তাছাড়া বিআইডব্লিউটিসির একমাত্র লাভজনক বাহন ফেরি। দৈনিক তিনটি ফেরি মুক্তিযোদ্ধাদের বহনে ব্যবহার হলে আর্থিক ক্ষতি বাড়বে। সরকারকে প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকা এই খাতে সংযোজন করতে হবে। ভিন্নমত পোষণকারীরা বলেন, মন্ত্রণালয়ের নানা কাজে অর্থের অপচয় হয়ে থাকে। এমনকি এসব ফেরিসহ আনুষঙ্গিক যানবাহনে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বছরে কোটি কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের স্বচ্ছতা ফিরিয়ে দুর্নীতির পথ বন্ধ করতে পারলেই অর্থ সংকটের কোনো প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ অকালেই মৃত্যুবরণ করবে। মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। এই সেবা তাদের প্রাপ্য।

মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে স্বাক্ষর করে বলছি, ‘আমরা কারো অনুগ্রহ বা অনুকম্পা পাওয়ার প্রত্যাশায় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করিনি। দেশমাত্রিকার পবিত্রতা রক্ষার জন্যই যুদ্ধে গিয়েছি। মা-বোনদের ইজ্জত রক্ষাকে দায়িত্ব মনে করেই যুদ্ধে গিয়েছি। যুদ্ধে গিয়েছি একটি পতাকা এবং মানচিত্র পাওয়ার জন্য। আমরা তা পেয়েছি। এখন শুধু একটিই চাওয়া। সম্মান দিতে না পারেন, অসম্মান করবেন না। নৌ মন্ত্রণালয় আমাদের যে সম্মান দিতে চেয়েছে তা নিয়ে নিজেদের মাঝে বিতর্ক উত্থাপন করে মুক্তিযোদ্ধাদের অহেতুক অসম্মান করা থেকে বিরত থাকলে আমরা খুশি হবো। আমরা কোনো কিছু পাওয়ার প্রত্যাশায় মন্ত্রণালয়ের কাছে কোনো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা আবেদন-নিবেদন করতে পারেন না বা করেননি। সুতরাং আমাদের আমাদের মতো থাকতে দিন। আল্লাহর মহান কৃপায় আমরা ভালো আছি এবং থাকব। আবারও বলছি, সম্মান দিতে না পারলে দেবেন না। সে ক্ষেত্রে কোনো অভিযোগও থাকবে না। তবে অসম্মানিত হলে কষ্টের মাত্রাটা বেড়ে যায়। অনুগ্রহপূর্বক আমাদের কষ্টের মাত্রাকে আর বাড়াবেন না।’

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সম্পাদকীয়,মুক্তিযোদ্ধা,সম্মান
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close