সম্পাদকীয়

  ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

শিল্প করিডর স্থাপনের উদ্যোগ সফল হোক

অর্থনৈতিক উন্নয়নধারায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বিস্ময়। লাগাতার উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারা অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে এই দেশকে। দীর্ঘদিন ধরে দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত এ দেশের জনগণ এখন অর্থনৈতিক মুক্তির নতুন স্বাদ উপলব্ধি করছে। দীর্ঘ গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার সুফল আজ দেশের সাধারণ মানুষ পেতে শুরু করেছে। দেশে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত থাকলে যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন সম্ভব, তা আবার বাংলাদেশকে দিয়ে প্রমাণ হলো।

গণতান্ত্রিক সরকার দেশের আপামর জনসাধারণের কথা বিবেচনায় নিয়ে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করে থাকে। তারই ফল আজ আসতে শুরু করেছে। নানা অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মধ্যে নতুন করে শিল্প করিডর স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) পণ্য পরিবহনের সুবিধার জন্য মহাসড়কের দুই পাশে শিল্প করিডর স্থাপন করতে চলেছে। সম্ভাব্য কয়েকটি রুট বিবেচনায় নিয়ে এরই মধ্যে এ পরিকল্পনার অনুমোদনও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পরিকল্পনার মধ্যে অন্যতম নর্থ-ইস্ট শিল্প করিডর। ৯ জেলা নিয়ে করা এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে ২০২০ সালের মার্চে। এগুলো হচ্ছে—সিলেট, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ। নর্থ-ইস্ট শিল্প করিডরের জন্য এ জেলাগুলো এক করা হয়েছে। তবে এগুলো নিয়ে আরো অনেক কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে। কোনদিক দিয়ে পথ নিলে বেশি সুবিধা হবে—তা বিবেচনায় নিতে হবে। ভারত ও মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতা নিয়েই এ করিডর করা হবে।

এরই মধ্যে নর্থ-ইস্ট করিডর নিয়ে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রাথমিক কাজসহ পরামর্শক নিয়োগের কাজ শুরু হয়েছে। শিল্প করিডর স্থাপন কাজ প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। বিডা সরেজমিনে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রাথমিক ধারণা নিয়েছে নর্থ-ইস্ট করিডরের বিষয়ে। রেল, সড়ক, নৌ ও আকাশপথের সমন্বয়ে কীভাবে একটা উন্নত শিল্প করিডর গড়া যায়—এ বিষয়ে প্রথমিক ব্যয়ও প্রাক্কলন করা হয়েছে। বিশাল কর্মযজ্ঞের জন্য কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো।

বিডা সূত্র জানায়, বাংলাদেশ নর্থ-ইস্ট ইকোনমিক করিডর বাস্তবায়নে এক লাখ কোটি টাকা লাগবে। এ ক্ষেত্রে একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব জেলায় শিল্প উন্নয়ন, অবকাঠামোগত কাজের আধুনিকায়ন, নগরায়ণের পাশাপাশি সমন্বিত সামাজিক নিরাপত্তার কাজও করতে হবে। এই করিডরে একটি ফোর লেন সড়ক হবে তামাবিল স্থলবন্দর হয়ে সিলেট-হবিগঞ্জ-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-নরসিংদী-নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত। অপরটি হবে শেরপুরের নাকুগাঁও স্থলবন্দর হয়ে নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ-গাজীপুর হয়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত। নর্থ-ইস্ট করিডরে সড়কের পাশে সিলেট, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সম্ভাবনাময় আধুনিক শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে নতুন করে।

সমন্বিত রেল, নদী, সমুদ্র, বিমানবন্দরগুলোর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জেলার মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধ গড়তে হবে। এসব প্রকল্পে অর্থায়ন করতে প্রস্তুত এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। করিডর বাস্তবায়নে প্রাথমিক টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিয়েছে এডিবি। এ ধরনের বিশাল মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নে এ বিষয়ে দক্ষ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত উদ্যোগের সমাবেশ করাও জরুরি। আমরা চাই দ্রুত এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হোক। সফল হোক শিল্প করিডর স্থাপনের উদ্যোগ।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সম্পাদকীয়,অর্থনৈতিক উন্নয়ন,নর্থ-ইস্ট করিডর,শিল্প করিডর
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close