শামসুল হক মৃধা, ধোবাউড়া (ময়মনসিংহ)
চোখ জুড়ানো চীনামাটির পাহাড়
কর্মজীবনের সব ব্যস্ততা ভুলে সূর্যস্নানে বের হতে পারেন আপনিও। প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে অথবা পরিবারের সদস্যকে নিয়ে ঘুরতে যেতে পারেন নিজ দেশেরই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া ও নেত্রকোনার দুর্গাপুর সীমান্তের বিজয়পুরে। এখানকার মূল আকর্ষণ হচ্ছে বিজয়পুর চীনামাটির পাহাড়। এ ছাড়া দেখার মতো জায়গা রয়েছে রানিখং গির্জা, কমলা রানীর দিঘি ও সোমেশ্বরী নদী। সেন্টমার্টিনের গভীর নীল পানি, কিংবা জাফলংয়ের স্বচ্ছ পানির গল্প তো নিশ্চয় শুনেছেন। কিন্তু সবুজ রঙের মিশ্রণে অদ্ভুত রাঙা হ্রদের কথা কি শুনেছেন?
বিজয়পুরে চীনামাটির পাহাড়ে এলে আপনাকে কিছুক্ষণের জন্য ভুলিয়ে দেবে। এখানের চীনামাটির পাহাড় যার বুক চিরে জেগে উঠেছে নীলচে সবুজ রঙের হ্রদ। সাদা মাটি পানির রংটাকে যেন আরো গাঢ় করে দিয়েছে। বিচিত্র আবহাওয়া, সোমেশ্বরীর কাশবন আর দূরে আকাশে হেলান দিয়ে গারো পাহাড়ের ধ্যানমগ্ন প্রতিকৃতি সৌন্দর্যপিপাসুদের মন কেড়ে নেয়। বিজয়পুর চীনামাটির পাহাড় ও সমভূমি মিলে দৈর্ঘ প্রায় ১৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ প্রায় ৬০০ মিটার। বিস্তর পাহাড়জুড়ে রয়েছে সাদা মাটি। কিছু কিছু জায়গায় লালচে মাটিও দেখা যায়। পাহাড় থেকে মাটি কাটায় সেখানে হ্রদের সৃষ্টি হয়েছে। যার পানি কোথাও নীল আবার কোথাও লাল।
এই হ্রদের নীল পানি যেন আপনার সব অবসাদ ও ক্লান্তি দূর করে দেবে। চীনামাটির পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে বয়ে গেছে সোমেশ্বরী নদী, যা বর্তমানে কয়লাখনি হিসেবে পরিচিত। এই নদীর নীল জলে সাদা চীনামাটির পাহাড়ের প্রতিবিম্ব যেন এক অলৌকিক সৌন্দর্যের প্রতীক। এ ছাড়া বিজয়পুরে রয়েছে রানিখং গির্জা। দুর্গাপুরের বিরিশিরি ইউনিয়নের পাশেই রয়েছে কমলা রানীর দিঘি। এই দিঘি ‘সাগর দিঘি’ নামে পরিচিত। নিরিবিলি পরিবেশ আপনার মনে প্রশান্তি এনে দেবে। এমন পরিবেশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকলেও আপনার ক্লান্তি আসবে না। শীতকাল ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ভালো সময়। তাই ধোবাউড়া-দুর্গাপুর সীমান্তে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে ভ্রমণে আসছেন সৌন্দর্যপিপাসুরা।
এলাকার একাধিক ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, সোমেশ্বরী নদীতে ব্রিজসহ ধোবাউড়া উপজেলার রাস্তাঘাট উন্নয়ন হলে এই সীমান্ত এলাকাটি হতে পারে পর্যটনশিল্প। এ ছাড়া ভেদীকুড়া চীনামাটির পাহাড়ের ওপর নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর মনসাপাড়া মিশন। যেখানে বান্দরবানসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের আদিবাসী ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে। মিশনটি সুন্দর, মনোরম পরিবেশে হওয়ায় যে কারো নজর কাড়বে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। রাস্তাঘাটের উন্নয়নসহ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এলাকাটি হয়ে উঠতে পারে একটি মনোরম পর্যটনকেন্দ্র।
যেভাবে যাবেন : ময়মনসিংহ সদর থেকে বাসযোগে ধোবাউড়া হয়ে সরাসরি বিজয়পুরে যাওয়া যাবে। এ ছাড়া ময়মনসিংহ থেকে সিএনজি অটোরিকশাযোগে ধোবাউড়া এসে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল দিয়ে বিজয়পুর যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
পিডিএসও/তাজ