হাসান ইমন

  ২৩ জুন, ২০১৭

মধ্যরাতেও চলছে কেনাকাটা

ছবি : রূপম ভট্টচার্য

দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। শেষ মুহূর্তে কেনাকাটায় ব্যস্ত নগরবাসী। মধ্যরাতেও ক্রেতাদের ভিড়ে সরগরম মার্কেটগুলো। ঢাকার অভিজাত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তদের বিপণিবিতানসহ ফুটপাতের ভাসমান দোকানগুলোতেও এখন চলছে শেষ মুহূর্তের ঈদের কেনাকাটা। রাজধানীর মার্কেট, বিপণী বিতান, শপিংমল ও ফ্যাশন হাউসগুলো বেচাকেনায় রাতদিন একাকার। মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে এই বেচাকেনা। শুধু পোশাকই নয়, এখন জুতো, গহনা, প্রসাধন সামগ্রীও বেচাকেনা হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে। দম ফেলার সময় নেই দোকানিদের। দিনে নারী ক্রেতাদের ভিড় বেশি থাকলেও রাতে উল্টো চিত্র। ওই সময় তরুণ-তরুণী ও পুরুষ ক্রেতারা মার্কেটে ভিড় করছেন। রাত যত গভীর হয় ক্রেতাদের আনাগোনা তত বাড়ছে। মধ্যরাতের ক্রেতারা বললেন, অসহনীয় যানজট এড়াতেই কেনাকাটার জন্য গভীর রাত বেছে নিয়েছেন তারা। দোকানিরা জানান, ঈদুল ফিতরের আগের রাত অর্থাৎ চাঁদ রাত পর্যন্ত কেনাকাটা চলবে।

জানা যায়, মধ্য রমজানের পর থেকে শুরু হয়েছে রাত জেগে কেনাকাটা। তবে রমজানের শেষ সপ্তাহ থেকে গভীর রাত পর্যন্ত থাকছে মানুষের সমাগম বেশি। বিক্রেতারা বাড়তি রোজগারের আশায় রাজধানীর অধিকাংশ বিপণী বিতান খোলা রাখছেন ভোর রাত পর্যন্ত। দিনের তুলনায় ক্রেতা কম বলে বিক্রেতারাও বাড়তি খাতির করছেন রাতের ক্রেতাদের। কেনাকাটার পাশাপাশি অনেকে উপভোগ করছেন রাতের ঢাকার সৌন্দর্য।

বিক্রেতারা জানান, প্রথম দিকে শিশু-কিশোর ও নারীদের পোশাক বেশি বিক্রি হলেও এখন সব বয়সীর জন্য নানা ধরনের পোশাকই বিক্রি হচ্ছে। পোশাকের পাশাপাশি চুড়ি, ইমিটেশন, ব্রেসলেট, পারফিউম, লিপস্টিক, নেইল পলিশসহ নানা কসমেটিকস, স্বর্ণালঙ্কার, হাতঘড়ি, টিভি-ফ্রিজ, থালা-বাসন, গিফট কার্ড প্রিয়জনের জন্য উপহার দেয়াও থেমে নেই। তাই বিভিন্ন গিফট আইটেমের দোকানগুলোও জমজমাট। বিক্রি চলছে জায়নামাজ, টুপি ও আতরসহ নানা ধরনের সুগন্ধী। একই সঙ্গে বিক্রি বেড়েছে সিডি-ডিভিডির দোকানগুলোতেও। এসব দোকানেও গভীর রাত পর্যন্ত কেনাকাটা চলছে। আর রাত-বিরাতে ক্রেতাদের ভূরিভোজ দিয়ে ভালোই মুনাফা করছে বিপণিবিতান ও আশপাশের খাবারের দোকানগুলো।

বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বিপণিবিতান ঘুরে দেখা যায়, সাধ্যমতো কেউ এসেছেন বসুন্ধরা শপিং মল, যমুনা ফিউচার পার্ক, মৌচাক মার্কেট, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, চাঁদনী চক, ইস্টার্ন প্লাজা, নিউমার্কেট, ইস্টার্ন প্লাস, বেইলি রোড, মোহাম্মদপুর সুপার মার্কেট এবং ফরচুন শপিং মল ইত্যাদিতে বিক্রেতারা সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিক্রিবাট্টায় ব্যস্ত ছিলেন।

আড়ং, অঞ্জনস, দরজিবাড়ি, ওয়েসটেক্স, বাংলার মেলা, লুবনান রিচম্যান, প্রবর্তনা, সাদাকালো, কে ক্রাফট, বসন, দেশাল, দেশি দশসহ ইত্যাদি দেশি পণ্যের শপিং আউটলেটগুলোতে ঘুরেও একই চিত্র দেখা যায়। এসব বিপণিবিতান ক্রেতা ও দর্শনার্থীর পদভারে মুখরিত ছিল। তাদের কেনাকাটা, বাজারে ঘুরাফেরা আর অনেক বিপণী বিতানে রাতভর আলোর ঝলকানির ভাষা ছিল- অনাবিল আনন্দের ঈদ আসছে। একইভাবে ঢাকার ফুটপাতগুলোতেও মধ্যরাত পর্যন্ত ভিড় লেগে থাকছে।

বসুন্ধরা সিটিতে গিয়ে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতেও ক্রেতাদের পদভারে মুখরিত। অনেক ক্রেতাকে বিপণী বিতানটির সামনে বসে সপরিবারে আড্ডায় মেতে থাকতেও দেখা গেছে। যেন রাতটা তাদের কাছে উপভোগ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঝরাতে কেনাকাটা করতে আসার কারণ জানতে চাইলে বেসরকারি একটি কোম্পানির ব্যবস্থাপক সারোয়ার মাহমুদ ক বলেন, দিনে অনেক যানজট থাকে। তাই রাতে এসেছি। এখন যানজট নেই। মিরপুর থেকে মাত্র ১০ মিনিটে এসেছি বসুন্ধরা সিটিতে। দিনে হলে ১ ঘণ্টায়ও পৌঁছানো সম্ভব হতো না। প্রায় একই কথা জানান প্রাইম ব্যাংকের কর্মকর্তা আনোয়ার জাহিদ। তিনি বলেন, দিনের যানজট এড়াতে তারও মধ্যরাতে আসা।

বসুন্ধরা সিটিতে দেশি দশে অঞ্জনস'র বিক্রয়কর্মী সেজান মনে করেন, যারা মধ্যরাতে কেনাকাটা করতে আসেন, তারা ভিড় ছাড়া দেখেশুনে স্বচ্ছন্দে কেনাকাটা করতে পারেন। বসুন্ধরা সিটির জ্যোতি শাড়ির বিক্রয় কেন্দ্রের বিক্রেতা মাসুদ রানা জানান, দিনে যারা ব্যস্ত থাকেন, তারাই আসেন ইফতারের পর। এর মধ্যে অনেকেই আসছেন মধ্যরাতে কেনাকাটা করতে। মধ্যরাতে কোন শ্রেণির ক্রেতারা বেশি আসছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে বসুন্ধরা সিটির লুবনান ফ্যাশন হাউসের কর্মকর্তা ওয়াহিদ বলেন, মধ্যম ও উচ্চ শ্রেণির ক্রেতারা বেশি আসছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই দিনে ব্যস্ত থাকেন। তাই রাতে সপরিবারে আসছেন।

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মধ্যরাত,কেনাকাটা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist