reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭

জন্ম নিয়ন্ত্রনের সকল পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা

অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ ঠেকানোর যুৎসই কৌশলটি বেছে নিন

অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ অনেক দম্পতির জন্যই একটি বড় সমস্যা। আর এই বিপদ থেকে বাঁচতে কত তরুণ-তরুণী কতই না ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে থাকে। তবে এইসব অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ ঠেকানোর জন্যও রয়েছে অনেক কৌশল। আপনিও বেছে নিতে পারেন সেই যুৎসই কৌশলটি। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, নবজাতকের জন্ম সবসময়ই আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। কিন্তু এই জন্ম যখন হয় অবাঞ্চিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত, তখন আনন্দের পরিবর্তে তা ভোগান্তির কারণ হয়ে দাড়ায়। ডাস্টবিনে, রাস্তার পাশে এমনকি বাথরুমের পাইপের ভিতরে সদ্য জন্মানো নবজাতকের আর্ত চিৎকার বার বার সেই ভুল আর অসচেতনতার কথাই মনে করিয়ে দেয়। জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক সচেতনতা না থাকার কারণে না চাইলেও লোক চক্ষুর অন্তরালে এরকম পাপ কাজে লিপ্ত হচ্ছে হাজার হাজার দম্পতি। ঘরে বসে ফেসবুকে এসব সংবাদ দেখে ‘ইশ’ বলে আফসোস করলেই কি সমস্যার সমাধান হবে? এই ক্রমবর্ধমান সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনার আমার সবার সচেতন হওয়া জরুরী। তাই প্রতিদিনের সংবাদের পাঠকদের জন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির আদ্যোপান্থ নিয়ে আলোকপাত করা হলো-

প্রজননক্ষম সময়ে সতর্কতা পিরিয়ড বা মাসিক হওয়ার ৫ দিন আগে থেকে মাসিকের দিন পর্যন্ত অর্থাৎ ৬ দিন তরুণীদের মা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এই দিনগুলোতে যৌন মিলন করা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। নিরাপত্তার খাতিরে দুই দিক থেকে এক দিন করে বাড়িয়ে নিতে পারেন।

স্পার্মিসাইড এই জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি শুক্রাণু নষ্ট করে দেয়। জেলি, ফোম, ক্রিম বা ফ্লিম বিভিন্ন আকারে এটি বাজারে পাওয়া যায়। যৌন সঙ্গমের আগে মহিলাদের যৌনাঙ্গে এটা লাগিয়ে নিতে হয়। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

কনডম ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্য কনডম পাওয়া যায়। সঙ্গমের সময় যে কোন একজন ভাল কোন কনডম ব্যবহার করুন।

ডায়াফ্রা গাম এটি রাবারের তৈরি একটি ডোম বা গম্বুজ বিশেষ যা যৌনসঙ্গমের পূর্বে সারভিক্সে লাগিয়ে নিতে হয়। এর সাথে স্পার্মিসাইড ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি পুরুষ কনডমের থেকেও অধিক কার্যকরী জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ।

সার্ভিকাল ক্যাপ এটি আকারে এবং কাজে ডায়াফ্রা গামের মতই কিন্তু আকৃতিতে একটু ছোট।

জন্ম নিয়ন্ত্রক স্পঞ্জ এটি ফোমের তৈরি এবং স্পার্মিসাইড মেশানো থাকে। যৌন সঙ্গমের ২৪ ঘণ্টা আগে এটাকে সার্ভিক্সের সাথে লাগিয়ে রাখতে পারেন।

জন্ম নিয়ন্ত্রক ঔষধ সবচেয়ে প্রচলিত এবং সহজ জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হচ্ছে ঔষধ। এর কার্যকারিতাও ব্যাপক। সময় মত খেয়ে নিলেই কাজ হয়; তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিৎ। এক্ষেত্রে অস্থায়ী কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, রক্ত জমাট বাধা, মুখে বা শরীরের বিভিন্ন স্থানে দাগ পড়া ইত্যাদি।

জন্ম নিয়ন্ত্রক প্যাচ ৩ সপ্তাহ ধরে প্রত্যেক সপ্তাহে একটি প্যাচ ত্বকে লাগিয়ে রাখলেই হবে। এটি জন্ম নিয়ন্ত্রক ঔষধের মতই কাজ করে। ৪র্থ সপ্তাহ লাগানোর প্রয়োজন নেই। এভাবে নিয়মিত করতে পারেন।

ভ্যাজাইনাল রিং নভা রিং একটি নরম প্লাস্টিকের রিং যা যোনির ভেতরে রাখা হয়। এটি জন্ম নিয়ন্ত্রক ঔষধ বা প্যাচের মত কাজ করে। মাসে একবার পরিবর্তন করতে হয়।

ইনজেকশন ডেপো প্রভেরা নামক এই হরমোনাল ইনজেকশন একটি উৎকৃষ্ট জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। প্রতি ৩ মাসে এক বার নিলেই হয়। এটি অনেক ব্যয়বহুল।

বার্থ কন্ট্রোল ইমপ্ল্যান্ট ম্যাচের কাঠির মত একটি দ- মহিলাদের ত্বকের ভেতরে লাগিয়ে রাখা হয়। এটি হরমোন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে। একবার লাগালে ৩ বছর নিশ্চিন্তে থাকা যায়। ইনজেকশনের মত এটিও অনেক ব্যয়বহুল।

ইন্ট্রাইউটেরাইন ডিভাইস (আইইউডি) এটি দেখতে ইংরেজি টি অক্ষরের মত একটি প্লাস্টিক। ডাক্তার এটি মহিলাদের যোনিতে স্থাপন করে দেন। ২ ধরনের আইইউডি পাওয়া যায়। একটি ১০ বছর এবং অপরটি ৫ বছর ব্যবহার করা যায়।

টিউবাল লাইগেশন যদি আপনি নিশ্চিত থাকেন যে আপনি আর সন্তান চান না তাহলে এটি হতে পারে স্থায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। এক্ষেত্রে ডাক্তার আপনার ফেলোপিয়ান টিউবটি বন্ধ করে দেয় যার ফলে ডিম্বাণু ওভারিতে পৌঁছাতে পারেনা। এটি স্থায়ীভাবে আপনার মা হওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়।

টিউবাল ইমপ্ল্যান্ট সার্জারি ছাড়াও ফেলোপিয়ান টিউব বন্ধ করা যায়। এক্ষেত্রে ফেলোপিয়ান টিউবের মধ্যে মেটাল বা সিলিকন রেখে টিউবদুটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর আশেপাশে স্কার টিস্যু গড়ে উঠে টিউবটি বন্ধ করে দেয়।

ভেসেকটমি এটি পুরুষদের জন্য একটি জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। সার্জারির মাধ্যমে এরা ভাস ডেফারেন্স টিউবটি বন্ধ করে দেয়; এর ফলে শুধুমাত্র শুক্রাণুর নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায়। বাকি সব প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে।

ইমারজেন্সি কন্ট্রাসেপশন বা জরুরি জন্ম নিয়ন্ত্রক ঔষধ যৌন সঙ্গমের সময় কোন ধরনের নিরাপত্তা না নেওয়া হলে এবং মনে কোনরূপ শঙ্কা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শে ইমারজেন্সি কন্ট্রাসেপশন পিল খেয়ে নিতে পারেন। এতে অন্যান্য জন্ম নিয়ন্ত্রক ঔষধের থেকে অনেক বেশি মাত্রায় হরমোনাল ডোজ থাকে। যৌনসংগমের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে খাওয়া ভাল। অনেক ক্ষেত্রে ৫ দিনের মধ্যে খেয়ে নিলেও কাজ হয়।

বয়স্ক মহিলাদের ক্ষেত্রে বয়স্ক মহিলারা বিশেষ করে যাদের বয়স ৩৫ এর উপরে এবং ধূমপান করে বা ফ্যাট বেশি তাদের ক্ষেত্রে জন্ম নিয়ন্ত্রক ঔষধ, প্যাচ এবং রিং ব্যবহার সাধারণত প্রেস্ক্রাইব করা হয় না। এক্ষেত্রে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করাই শ্রেয়। মেনোপোজ হওয়ার সময়ে চলে আসলে জন্ম নিয়ন্ত্রক ইনজেকশন অনেক উপকারে আসে।

পুরাতন প্রাকৃতিক পদ্ধতি শুক্রাণুর ডিম্বাণুর সাথে মিলন না হলে গর্ভধারণ সম্ভব নয়। এই কারনেই অনেক পুরুষ যোনির ভেতরে ইজাকুলেশন করেন না। সময়মত উদ্যোগ নিয়ে এই পদ্ধতিতে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

পরিশেষে বলা যায়, জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার না করলে সাংসারিক জীবনের এক বছরের মাথায় ৮৫ শতাংশ মহিলা গর্ভবতী হয়ে পরে। জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিগুলোর মধ্যে ভেসেকটমি, আইইউডি, টিউবাল মেথড খুবই কার্যকরী। অন্যান্যগুলোর কার্যকারিতা এত বেশি না হলেও কোন দিক থেকে কম না।

পিডিএসও/মুস্তাফিজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
যুৎসই কৌশল,অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ ঠেকানো,জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist