মাহমুদ আহমদ

  ৩১ মে, ২০১৯

প্রত্যেকের ফিতরা আদায় ওয়াজিব

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ইচ্ছায় আর কদিন পরেই আমরা ঈদুল ফিতর উদযাপন করব। ঈদুল ফিতর উদযাপনের আগে আমাদের সবাইকে অবশ্যই ফিতরা আদায় করতে হবে। কেননা ঈদুল ফিতরের ফিতরা প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব এমনকি ঈদের দিন সূর্য উদয়ের পূর্বে ভূমিষ্ঠ শিশুর জন্যও ফিতরা দেওয়া ওয়াজিব। এ ফিতরা ঈদের নামাজের আগেই আদায় করা উচিত।

কেননা গরিব রোজাদার যেন ফিতরার অর্থ দিয়ে ঈদের খুশিতে অংশগ্রহণ করতে পারে। ফিতরা দেওয়া কারও ওপর কোনো প্রকার অনুগ্রহ নয়। এটি আমাদের ইবাদাতের অংশ। এমনকী যে ব্যক্তিকে ফিতরার সাহায্য দেওয়া হয়, তার নিজের পক্ষ থেকেও ফিতরা দেওয়া কর্তব্য। সবার অংশগ্রহণের ফলে সদকাতুল ফিতরের ফান্ডটি একটি সাধারণ ফান্ডে পরিণত হয়। যার ফলে এ থেকে যারা উপকৃত হয় তাদের মনে হীনমন্যতার ভাব সৃষ্টি হয় না।

মূল বিষয় হলো ফিতরা আদায়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের গরিব ভাইদের দুঃখ-কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করতে পারি এবং তাদেরও ঈদের আনন্দে অন্তর্ভুক্ত করি। যাদের আল্লাহতায়ালা ধন-সম্পদ দিয়েছেন তারা আল্লাহর রাস্তায় এবং গরিব অসহায়দের প্রতি যতই দান করুক না কেন এতে কিন্তু তার ধন-সম্পদে কমতি দেখা দিবে না বরং বৃদ্ধি পেতে থাকবে।

আমরা সবাই জানি, ইসলামে দান-খয়রাতের এবং গরিব-অসহায়দের সাহায্যের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আল্লাহর রাস্তায় দানের গুরুত্ব যে কত বেশি তা পবিত্র কোরআন পাঠেই বুঝা যায়। কারণ, এ বিষয়টিকে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের বহু স্থানে উল্লেখ করেছেন যেমন ‘যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় আল্লাহর পথে খরচ করে, যারা ক্রোধ দমন করে এবং মানুষকে মার্জনা করে। আর আল্লাহ সৎ কর্মপরায়ণদের ভালোবাসেন’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৪)।

এই আয়াতে একটি বিষয় আল্লাহতায়ালা স্পষ্ট করেছেন যে, শুধু সুখে থাকলেই যে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করব তা কিন্তু নয়, সচ্ছল-অসচ্ছল সব অবস্থাতেই আল্লাহর রাস্তায় খরচ করতে হবে। সব অবস্থায় যদি আমরা খরচ করি তাহলে আল্লাহতাআলা আমাদের ভালোবাসবেন। আল্লাহপাক বারবার আমাদের আদেশ দিচ্ছেন যে, আমরা যেন তার পথে খরচ করি, কিন্তু দেখা যায় আমরা দুনিয়াবি আজেবাজে কাজে ঠিকই অর্থ সম্পদ ব্যয় করছি অথচ আল্লাহর রাস্তায় দেওয়ার ক্ষেত্রে যেন অনিহা প্রকাশ পায়।

এর কারণ হলো শয়তান মানুষের মনে কুমন্ত্রণা যোগায় যে, তুমি যদি আল্লাহর রাস্তায় দান করো তাহলে তোমার ধন-সম্পদ ফুরিয়ে যাবে আর তুমি দরিদ্র হয়ে যাবে। অথচ পবিত্র কোরআন বলে যারা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে তাদের এর তুলনায় অধিক বৃদ্ধি করে আল্লাহ ফেরত দেন। যেভাবে বলা হয়েছে, ‘যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে খরচ করে তাদের দৃষ্টান্ত সেই শস্য বীজের ন্যায়, যা সাতটি শীষ উৎপন্ন করে এবং প্রত্যেকটি শীষে ১০০ শস্যদানা থাকে। আর আল্লাহ যার জন্য চান এর চেয়েও বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী ও সর্বজ্ঞ’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৬১)।

তাই এ কথা স্পষ্টভাবে বলা যায় আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে কেউ গরিব হবে না বরং তাকে আল্লাহ অনেকগুণ বৃদ্ধি করে তা ফেরত দিবেন। এ বিষয়ে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘দান করলে সম্পদ কমে না’ (মুসলিম)।

আমরা যদি আল্লাহর জান্নাত লাভ করতে চাই এবং তার শান্তির ছায়ায় আশ্রয় নিতে চাই তাহলে আমাদের তার পথে খরচ করতে হবে। গরিব অসহাদের সাহায্য-সহযোগিতা করে তাদের কষ্ট দূর করতে হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে ফিতরা এবং জাকাত সঠিকভাবে আদায় করে গরিব ভাইদের পাশে দাঁড়ানোর তৌফিক দান করুন, আমিন।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ফিতরা,ফিতরা আদায়,দান-খয়রাত
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close