মাহমুদ আহমদ

  ১৬ মে, ২০১৯

বরকতে ভরপুর সাহরি-ইফতার

মহান আল্লাহ তায়ালার অপার কৃপায় পবিত্র রমজানের রহমতের দশকের আজ শেষ দিনের রোজা রাখার তৌফিক লাভ করছি আমরা। এজন্য আল্লাহপাকের দরবারে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আমরা জানি, রমজান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভ করার মাধ্যম। এ দিনগুলোতে আমরা তার সন্তুষ্টির জন্য যে কাজই করি না কেন তিনি তাতে অনেক অশেষ কল্যাণ দান করেন। রমজানের বিশেষ একটি দিক হচ্ছে সাহরি ও ইফতার। কেননা এতে বরকত রয়েছে।

এ সম্পর্কে হজরত নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানে সাহরি খাও, কেননা সাহরির মাঝে বরকত রয়েছে’ (মুসলিম)। হজরত রাসুল করিম (সা.) আরো বলেছেন, ‘আমাদের ও কিতাবিদের (বনী ইসরাইলিদের) রোজার পার্থক্য হলো সাহরি খাওয়া’ (মুসলিম)। তাই বলা যায়, রোজার সঙ্গে সাহরি খাওয়ার সম্পর্ক বিদ্যমান। অনেকে এমনও আছেন, সাহরি খায় ঠিকই কিন্তু গভীর রাতে খেয়ে ফেলেন, যা মোটেও ঠিক নয়। বোখারি শরিফের একটি হাদিসে এভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, মহানবী (সা.) এর সাহরি খাওয়া আর ফজরের নামাজের আজানের মাঝে ৫০ আয়াত তেলাওয়াত করার সময় অবশিষ্ট থাকত।

মুসলিম শরিফে বলা হয়েছে, হজরত রসুল করিম (সা.) হজরত বেলালের আজান শুনে সাহরি খাওয়া বাদ দিতে বারণ করেছেন। কেননা হজরত বেলাল (রা.) রাত থাকতেই আজান দিয়ে দেয়। তাই সাহরির যে সময় নির্ধারণ আছে সেই সময়ই সাহরি খাওয়া উচিত। এছাড়া মহানবী (সা.) সাহরি খাওয়াতে কিছুটা বিলম্ব করতে এবং ইফতার সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে করাকে পছন্দ করতেন এবং তিনি (সা.) তার উম্মতকে এই নির্দেশই দিয়েছেন, তারাও যেন এমনটি করেন।

এ বিষয়ে হজরত রাসুল করিম (সা.) বলেছেন, ‘লোকেরা যত দিন দ্রুত ইফতার করবে তত দিন কল্যাণের মাঝে অবস্থান করবে’ (বোখারি)। পুনরায় আরেক স্থানে এভাবে বর্ণিত হয়েছে, হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসুল করিম (সা.) বলেছেন, ‘যখন রাত ওই (পূর্ব) দিক হতে আসে এবং ওই (পশ্চিম) দিকে চলে যায় আর সূর্য ডুবে যায় তখন যেন রোজাদার ইফতার করে নেই’ (বোখারি)।

মহানবী (সা.) ইফতারের সময় দোয়ায় রত থাকতেন। তিনি (সা.) ইফতারের আগে দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়াবিকা আমানতু ওয়া লাকা রিজকিকা আফতারতু বিরাহমাতিকা’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার জন্য রোজা রেখেছি, আর তোমারই ওপর ঈমান এনেছি এবং তোমারই রহমতের রিজিক দ্বারা ইফতার করছি’ (মুসলিম)।

এছাড়া ইফতার শেষেও তিনি মহান আল্লাহপাকের শুকরিয়া জ্ঞাপন করে দোয়া করতেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, হজরত নবী করিম (সা.) যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন, ‘যাহাবা জ্জামায়ু ওয়াবতাল্লাতি উরুকু ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ’ অর্থাৎ পিপাসা দূর হলো, শিরা উপশিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান তবে প্রতিদান স্থির হলো’ (আবু দাউদ)।

আমরা জানি, মহানবী (সা.) খেজুর আর পানি দিয়ে ইফতার করতেন। আমার প্রিয় নবী, বিশ্ব নবী (সা.) অত্যন্ত সাধারণ ইফতার করতেন। তিনি (সা.) সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে সামান্য কয়েকটি তাজা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি তাজা খেজুর না পেতেন তবে শুকনা খেজুর, আর যদি তাও না পেতেন তবে কয়েক ঢোক পানি পান করে ইফতার করতেন (বোখারি-মুসলিম)।

ইফতার শুধু নিজে করলেই হবে না বরং অন্যদেরও ইফতার করাতে হবে। আমরা যেখানে বসবাস করি, এর আশপাশে এমন অনেক রোজাদার পাওয়া যাবে যাদের কাছে ইফতারের জন্য কিছুই নেই। আমাদের খোঁজ নিতে হবে, যারা অসহায়, গরিব তাদের জন্য সাহরি ও ইফতারের ব্যবস্থা করতে হবে। তাই আসুন, সাহরি ও ইফতারের কল্যাণের প্রতি খেয়াল রেখে সময়মতো সাহরি ও ইফতার করি আর আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করি।

লেখক : ইসলামী গবেষক ও কলামিস্ট

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সাহরি,ইফতার,বরকত,সাহরি ও ইফতার
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close