মাহমুদ আহমদ

  ১১ মে, ২০১৯

রোজায় তারাবি ও নফল ইবাদতের গুরুত্ব

মহান আল্লাহতায়ালার অপার কৃপায় আজ রহমতের পঞ্চম রমজান আমরা অতিবাহিত করার সৌভাগ্য পাচ্ছি, আলহামদুলিল্লাহ। রমজান মাস এলেই রোজার সঙ্গে সঙ্গে যে ইবাদতটির নাম সর্বাগ্রে আসে তা হলো তারাবির নামাজ। তারাবি শব্দের আভিধানিক অর্থ বিশ্রাম বা আরাম। তারাবির নামাজে চার রাকাত নামাজ পড়ার পর কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নেওয়া হয়, তাই পরিভাষাগতভাবে এ নামাজকে তারাবির নামাজ বলা হয়। তারাবির নামাজ আসলে তাহাজ্জুদ নামাজেরই আরেকটি নাম, কিন্তু রমজান মাসে সর্বসাধারণ যেন এ থেকে অধিক হারে কল্যাণমন্ডিত হতে পারে, এজন্য সাধারণ মানুষকে রাতের প্রথম ভাগে অর্থাৎ ইশার নামাজের পরপরই এ নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

তারাবির নামাজ সম্পর্কে হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণিত হাদিস থেকে জানা যায়, তিনি (রা.) বলেছেন, ‘এক দিন গভীর রাতে রসুলুল্লাহ্ (স.) বাহির হয়ে মসজিদে গেলেন এবং নামাজ পড়লেন, কিছু লোকও তার (স.) পেছনে নামাজ পড়লেন। ভোর হওয়ার পর লোকজন পরস্পরের সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করায় দ্বিতীয় রাতে লোক সংখ্যা আরো বেড়ে গেল এবং তারা রসুলুল্লাহ (স.)-এর সঙ্গে নামাজ পড়ল। এদিন ভোর হওয়ার পর লোকদের মাঝে আরো বেশি আলোচনা হলো এবং তৃতীয় রাতে মসজিদের লোক সমাগম আরো বেশি হলো, মহানবী (স.) বাইরে বের হয়ে নামাজ পড়লেন আর তারাও তার (স.) সঙ্গে নামাজ পড়লেন। যখন চতুর্থ রাত এলো তখন এত লোক সমাগম হলো যে, মসজিদে স্থান সংকুলান হলো না। কিন্তু মহানবী (স.) এ রাতে তারাবির নামাজের জন্য বের হলেন না, এমনকি ভোর হয়ে গেলে ফজরের নামাজের জন্য বের হলেন এবং ফজরের নামাজ শেষে লোকদের দিকে মুখ ফিরিয়ে তাশাউদ পাঠের পর বললেন, তোমাদের বিষয়টি আমার কাছে গোপন ছিল না। কিন্তু আমি আশঙ্কা করছিলাম যে, এ নামাজ না আবার তোমাদের ওপর ফরজ করে দেওয়া হয় আর তোমরা তা পালনে ব্যর্থ হও। রসুলুল্লাহ (স.) ইন্তেকাল করলেন এবং এ নামাজের বিষয়টি তেমনই রইল’ (বোখারি)।

হজরত আব্দুর রহমান বিন আব্দিল কারী (রা.) বর্ণনা করেছেন, রমজানের এক রাতে আমি হজরত উমর বিন খাত্তাব (রা.)-এর সঙ্গে মসজিদের উদ্দেশে বের হলাম এবং দেখলাম, লোকেরা পৃথক পৃথক দলে বিভক্ত হয়ে আছে। কেউ একা একা নামাজ পড়ছিল, আবার কেউ কেউ এভাবে নামাজ পড়ছিল যে, তার পেছনে কিছু লোক নামাজ পড়ছিল। এ অবস্থা দেখে হজরত উমর (রা.) বললেন, আমার মনে হয় সবাইকে একজন কারীর পেছনে একত্রিত করে দিলে ভালো হয়। অতঃপর তিনি (রা.) দৃঢ়প্রত্যয় করলেন এবং উবাই বিন কাবের পেছনে তাদের সবাইকে মুক্তাদি হিসেবে একত্রিত করে দিলেন।

মহানবী (স.) নিজে তারাবি নামাজ পড়েছেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে পড়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন। তারাবি নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে উল্লেখ আছে, মহানবী (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানে তারাবির নামাজ আদায় করে তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়’ (বোখারি ও মুসলিম)। এ থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, তারাবির নামাজ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, মহানবী (স.) বলেছেন, ‘আমাদের প্রভু প্রতিপালক যিনি সব কল্যাণের মালিক এবং সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী, তিনি প্রতি রাতে এমন সময় পৃথিবীর নিকটতম আকাশে নেমে আসেন, যখন রাতে এক-তৃতীয়াংশ বাকি থাকে আর বলেন, কে আমাকে ডাকে যেন আমি তার ডাকে সারা দেই, কে আমার কাছে প্রার্থনা করে, যেন আমি তাকে দান করি এবং কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে আর আমি তাকে ক্ষমা করে দিই’ (বোখারি)।

উল্লিখিত কোরআনের আয়াত ও হাদিসের মাধ্যমে এটিই প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহতায়ালার বন্ধুত্ব ও তার ভালোবাসা পেতে চাইলে নফল ইবাদত একান্ত প্রয়োজন। আমরাও যেন পবিত্র এই রমজানে ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি অনেক বেশি নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার নৈকট্যপ্রাপ্তগণের অন্তর্ভুক্ত হতে পারি, সেই তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক : ইসলামী গবেষক ও কলামিস্ট

পিডিএসও/রি.মা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রোজা,তারাবি,নফল নামাজ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close