এবিসি জাবের

  ০৫ মার্চ, ২০১৯

বিশ্বজয়ের লক্ষ্যে বিশ্বকাপের পথে লিডোর শিশুরা

নগরজীবনে চলার পথে আপনার চোখ হয়তো প্রায়ই আটকে যায় কিছু হাড্ডিসার ও মলিন পোশাকধারী কিছু শিশুর প্রতি। কখনো সে ছুটোছুটিতে ব্যস্ত, কখনো রেল স্টেশনের কুলি, কখনো লঞ্চ টার্মিনালের কোনো এক কোনায় ঘুমন্ত পথিক আবার কখনো বেলী ফুলের মালা হাতে আপনার কাছে আবদার নিয়ে আসে। আপনি কখনো তার আবদার শুনেন অথবা কখনো আপনার গাড়ির মর্যাদা(?) রক্ষায় তাকে বকাঝকা করেন। শিশুটির মাথায় আপনার সামান্য স্নেহের হাত শিশুটির কাছে পৃথিবীকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে আর আপনার সেই কর্কশ ভাষায় সৃষ্ট ঘৃণা তাকে হত্যা করে দেয়। আপনার সহানুভূতির সামান্য ছোঁয়া তাকে আকাশছোঁয়া স্বপ্ন দেখতে সাহস যোগায় আর আপনারই সেই অমানবিক আচরণ তাকে বেঁচে থাকার প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তোলে।

আমাদের এই আচরণ তো বড়ই স্বাভাবিক কিন্তু এই স্বাভাবিক আচরণের উর্ধ্বে উঠে এই শিশুদের নিরাপদ ও সুন্দর জীবন উপহার দেওয়ার ব্রত নিয়েই কাজ করছে লিডো। পথের এই শিশুদেরকে কেবল সান্ত্বনা ও সহানুভূতিই নয় বরং তাদেরকে এই মানবেতর জীবন থেকে উদ্ধার করে পরিবারে পুনর্বাসন অথবা নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে দীর্ঘমেয়াদি সহায়তার লক্ষ্যে প্রেরণেই লোকাল এডুকেশন অ্যান্ড ইকোনোমিক ডেভেলেপমেন্ট অর্গানাইজেশন-লিডো’র প্রধান কাজ। নানামুখী কার্যক্রমের পাশাপাশি লিডো চালু করেছে উদ্ধারকৃত পথশিশুদের জন্য স্থায়ী নিবাস ‘পিস হোম’। এখানে পারিবারিক আবহে বেড়ে উঠছে শিশুরা। পড়ছে, লিখছে, খেলছে এবং তাদের মৌলিক অধিকার সমেত বেড়ে উঠছে।


নানামুখী কার্যক্রমের পাশাপাশি লিডো চালু করেছে উদ্ধারকৃত পথশিশুদের জন্য স্থায়ী নিবাস ‘পিস হোম’। এখানে পারিবারিক আবহে বেড়ে উঠছে শিশুরা। পড়ছে, লিখছে, খেলছে এবং তাদের মৌলিক অধিকার সমেত বেড়ে উঠছে


এ বছর অনুষ্ঠিত হবে ক্রিকেট দুনিয়ার সবচেয়ে বড় আসর আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপ-২০১৯। তাও আবার ক্রিকেটের জন্মস্থান ইংল্যান্ডে। আয়োজনটা নিয়ে বিশ্ব কাঁপছে। পথে বসবাসরত এই শিশুদের বিশ্বের ঘটমান, ঘটিত ও ঘটিতব্য কোনো বিষয় নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। আর থাকবার কথাও নয় যখন প্রশ্ন কেবলই টিকে থাকার। তবু এমন আসর শুরু হলেই ভিড় জমায় চায়ের দোকান অথবা মোড়ের কোনো টিভি সেটের সামনে। এলাকার ছেলেদের সঙ্গে একটু-আধটু খেলায় অংশ নেবার সুরতে কিছু নামও জেনে যায় ক্রিকেটের। এই ধরুন—থার্ড আম্পায়ার, উইকেট, আউট, ব্যাটিং, বোলিং আর ফিল্ডিং ইত্যাদি। বাংলাদেশের জয়ে জনতার পতাকা মিছিলে তারাও অংশ নেয়। চারপাশের গুঞ্জন থেকে কিছু নামও মুখে মুখে আওড়িয়ে বেড়ায়। যেমন—সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, আফ্রিদী, ধোনি, আর মাশরাফি বিন মর্তুজা প্রমুখ। বলা যায় বিশ্ব ক্রিকেটের সঙ্গে এদের সম্পর্ক অনেকটা এ পর্যন্তই।

টিকে থাকার সংগ্রামে সদা ব্যস্ত এই শিশুদের কখনই কল্পনাতেও ছিল না যে, তারা একদিন এই বিশ্বক্রিকেটের অংশ হবে। স্বপ্ন হলেও আজ তা বাস্তব হতে চলেছে। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য আইসিসি ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপের জোয়ারে যখন ভাসবে বিশ্ব ঠিক তখনই এই সমুদ্রে নতুন তরী নিয়ে থাকবে এই শিশুরা। অংশ নেবে স্ট্রিট চিলড্রেন ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপে। তাও আবার ক্রিকেটের জন্মভূমি লর্ডসে।

স্ট্রিট চিলড্রেন ইউনাইটেড। ইংল্যান্ডের একটি চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান। পথশিশুদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে দীর্ঘদিন। এই শিশুদের আওয়াজ বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যে সংস্থাটি বিশ্বকাপ ধারণার জন্ম দেয়। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে অনুষ্ঠিত ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ ২০১০-এর সঙ্গে সেই ডারবানেই শুরু করে স্ট্রিট চিলড্রেন ফুটবল ওয়ার্ল্ড কাপ-২০১০। তারপর একে একে ব্রাজিলের রিও ডি জেনারিওতে স্ট্রিট চিলড্রেন ফুটবল ওয়ার্ল্ড কাপ-২০১৪ এবং রাশিয়ার মস্কোতে স্ট্রিট চিলড্রেন ফুটবল ওয়ার্ল্ড কাপ ২০১৮-ও আয়োজন করে সংস্থাটি। এরই মাঝে ২০১৬ সালে আয়োজন করে পথশিশুদের জন্য অলিম্পিক ও প্যারা-অলিম্পিক গেমস।

স্ট্রিট চিলড্রেন ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ ২০১৯-এ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে লিডোর শিশুরা। পরিবার হারিয়ে পথে আসার পর যে দেশমাতা তাদের আশ্রয় দিয়েছে এই খোলা আকাশের নিচে। সেই দেশমাতৃকার প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছে এই শিশুরা। আয়োজনে অংশ নেবে ভারত, পাকিস্তান ও ইংল্যান্ডসহ ১০টি দেশ। ১০ দিনের এই সফরে আরো থাকছে আর্ট ফেস্টিভ্যাল, কংগ্রেস ও ডায়ালগ এবং পার্লামেন্ট সদস্যের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ ইত্যাদি।

স্ট্রিট চিলড্রেন ইউনাইটেডের এই আয়োজনে সার্বিক সহায়তা দিচ্ছে লর্ডসের ঐতিহ্যবাহী মেরিলিবন ক্রিকেট ক্লাব। আন্তর্জাতিক এই আয়োজনে পাশে থাকছে আইসিসি ও বিসিবিসহ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। লিডো’র বিশ্বাস, এই শিশুরাই একদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলবে। এই আয়োজন তাদেরকে সেই অনুপ্রেরণাই দেয়।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পিস হোম,লিডো,পথশিশু
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close