রিমন পালিত, বান্দরবান

  ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

নাফাখুমে জলপ্রপাত দেখতে পর্যটকের ভিড়

নদী পাহাড় আর ঝরনা দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরা এখন ভিড় করছে বান্দরবানের থানচি উপজেলার তিন্দু ইউনিয়নের নাফাখুমে। জেলা শহরে নেমে চাঁদের গাড়ি নিয়ে তিন ঘণ্টা পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে ছুটে যাচ্ছে বান্দরবান থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে থানচি উপজেলায়। সেখান থেকে বোটে চড়ে ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রেমাক্রী। পাহাড়ি পল্লীতে রাত্রিযাপন শেষে পরদিন ৮ কিলোমিটার পথ হেঁটে পাড়ি দিয়ে চলে যাচ্ছে বাংলার নায়েগ্রাখ্যাত নাফাখুম জলপ্রপাত।

রোমাঞ্চকর এ যাত্রায় দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে ক্লান্ত পর্যটকরা নাফাখুমের সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত আর মুহূর্তেই দূর হয়ে যায় সব ক্লান্তি। ঝরনায় গোসল করে তারা আবার সতেজ প্রাণবন্ত হয়ে যান। তবে বর্ষাকাল হওয়ায় নদীতে পানি থাকায় এখন হাঁটার কষ্ট অনেকটাই কমে গেছে। বোটে চড়ে বেশির ভাগ অংশই পাড়ি দেওয়া যায়। শীতকালে সাঙ্গু নদীতে পানি শুকিয়ে যায়, তাই হেঁটে যেতে হয় পুরো পথ। তাই নাফাখুম যাওয়ার জন্য বর্ষাকালকেই বেছে নিচ্ছেন পর্যটকরা। হাঁটার কষ্ট কম হওয়ায় নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধরাও ছুটে যাচ্ছে নাফাখুমের সৌন্দর্য দেখতে।

ঢাকা থেকে সপরিবারে বেড়াতে আসা পর্যটক সোনিয়া আক্তার বলেন, ‘খুবই সুন্দর একটি জায়গা। যাওয়ার পথে নদীর দুপাশের দৃশ্য অসাধারণ, আসতে একটু কষ্ট হলেও নাফাখুমের সৌন্দর্য দেখে সব কষ্ট দূর হয়ে গেছে। এটার গল্প অনেক শুনছি কিন্তু বাস্তবে এটা তার চেয়েও সুন্দর। এখানে না এলে সেটা কখনোই বোঝা সম্ভব নয়।’

থানচি সদরে পৌঁছে পুলিশের কাছে আইডি কার্ড দিয়ে নাম এন্ট্রি করে পরে আবার বিজিবি ক্যাম্পে গিয়ে সেটা জমা দিয়ে বোট ভাড়া করে যাত্রা করতে হবে রেমাক্রীর উদ্দেশে। তবে সবার আগে একজন গাইড নিতে হবে, যে এসব কাজে সব ধরনের সহযোগিতা করবে। দুর্গম জায়গা হওয়ায় নিজের নিরাপত্তার জন্য গাইড অত্যাবশ্যক। থানচি সদর থেকে যাত্রা শুরু করে নদীর দুপাশের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে দুই ঘণ্টায় পৌঁছে যাবেন রেমাক্রীতে। সেখানে রেমাক্রী ফল্সের সৌন্দর্য মুগ্ধ হওয়ার মতো।

যাত্রা শেষে গোসল করে সেখানে পাহাড়িদের কটেজ রয়েছে হাজার টাকায় মিলবে থাকার জন্য রুম এবং খাবার হোটেলও আছে মুরগির মাংস ডাল আলুভর্তা এসব পাওয়া যায়। ১৫০ টাকায় মিলবে একজনের খাবার। দুর্গম জায়গায় এমন খাবার পাওয়ায় খুশি পর্যটকরাও। ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক আবুল কাশেম বলেন, ‘এখানে অল্প টাকায় থাকার খুব সুন্দর ব্যবস্থা আর খাবারগুলো খুব সুস্বাদু। এত দূরে এসে এত ভালো খাবার পাব চিন্তাও করিনি। খাবারের দামও অনেক কম। তবে থাকার জায়গা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। সরকারিভাবে যদি আরো কিছু কটেজ করা হয় তাহলে আরো ভালো হতো। কারণ দিন দিন এখানে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে।

নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা আর কর্মজীবনের ক্লান্তি ভুলতে ছুটির দিনে মানুষ ছুটে যাচ্ছে পাহাড় আর ঝরনার সৌন্দর্য দেখতে। মোবাইল নেট না থাকায় প্রাত্যহিক জীবনের কারো সঙ্গে যোগাযোগও থাকবে না নিশ্চিন্ত মনে উপভোগ করা যায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। পর্যটক পেয়ে খুশি সেখানকার ব্যবসায়ীরা। রেমাক্রী বাজারের ব্যবসায়ী লালপিয়াম বম বলেন, পর্যটকের আনাগোনা আগের চেয়ে বেড়ে যাওয়ায় জায়গা দিয়ে সংকুলান করতে পারছি না। আগে তেমন আসত না, তবে এখন আসাতে আমাদের ব্যবসাও ভালো হচ্ছে। চেষ্টা করছি আরো কিছু কটেজ করার, যাতে পর্যটকরা আরামে থাকতে পারেন।

নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কার কোনো কারণ নেই। বিজিবির পক্ষ থেকে রয়েছে সতর্ক নজরদারি। রয়েছে মোবাইল টহলও। আর পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা। পুলিশ সুপার জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, পর্যটকদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কোথাও কোনো পর্যটক হয়রানির শিকার হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য টুরিস্ট পুলিশের ভ্রাম্যমাণ টিম রয়েছে। এ ছাড়াও থানচির পর্যটকদের জন্য পুলিশের কাছে নাম এন্ট্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে; যাতে কোথাও কোনো পর্যটক নিখোঁজ বা হারিয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নাফাখুম,নাফাখুম জলপ্রপাত,বান্দরবান,রেমাক্রী,থানচি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close