পাঠান সোহাগ
ঈদ ঘিরে জমজমাট ফুটপাতের মৌসুমি ব্যবসা
মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। এই উৎসব ঘিরে নতুন জামা, জুতা ও প্রসাধনী দ্রব্য কেনার হিড়িক পড়ে যায়। নানা আয়ের মানুষ সাধ্য অনুযায়ী এই ঈদে কেনাকাটা করে থাকেন। এই উৎসব ঘিরে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি এই সুযোগ নেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
তারা রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ফুটপাতে নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন। এবারও বাদ যাচ্ছে না। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ফুটপাতে বিক্রি করছেন শার্ট, প্যান্ট, জুতা, সালোয়ার-কামিজ, রং-বেরঙের থ্রিপিস, গেঞ্জি, পাজামা-পাঞ্জাবি, জুতা, কসমেটিকস, টুপি, আতরসহ অনেক কিছু। তারা অল্প টাকায় একটু লাভের আশায় এ ব্যবসায় নামেন। সাড়াও মিলেছে, জমে উঠেছে মৌসুমি ব্যবসা।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর-পশ্চিম গেটের সামনে, দৈনিক বাংলা মোড়, মতিঝিলের জনতা ব্যাংকের সামনে, মতিঝিল শাপলা চত্বরের চারদিকে, মিরপুর ১০ নম্বর, শ্যামলী, ফার্মগেট, ফকিরাপুল এলাকা, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ হকার্স সমিতি মার্কেট, গুলিস্তান মোড়ের চারপাশের ফুটপাত, নয়াপল্টনের ভিআইপি সড়কের ফুটপাত, গোলাপ শাহ মাজারসংলগ্ন ফুটপাত, বঙ্গবাজার, নিউমার্কেট, গাউছিয়া এবং চাঁদনীচকের ফুটপাতে পরিচিত ব্যবসায়ীর হাত ধরেই বসেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, রমজানের শুরুতে অল্প পুঁজিতে এ ব্যবসায় নামেন। কেউ খোলা জায়গায়, কেউ ভ্যানে হরেক রকমের পণ্য সাজিয়ে পছন্দের জায়গায় বসেন।
সরেজমিন রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফুটপাতের দোকানগুলোতে রমরমা ব্যবসা চলছে। হাতের কাছে সব প্রয়োজনীয় পণ্য পাওয়ায় ক্রেতারাও ঝুঁকছেন এসব দোকানে।
গুলিস্তানের মৌসুমি ব্যবসায়ী শওকত আলী জানান, পরিচিত একজনের মাধ্যমে পাঁচ হাজার টাকার জুতা কিনে এখানে বসেছি। প্রতিদিনই ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা লাভ থাকছে। আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘নতুন নতুন জিনিস নিয়ে বসলে ক্রেতা আসবেই। বিক্রি ভালোই হচ্ছে। আমাদের স্থায়ী জায়গা নিয়ে বসার সামর্থ নেই। পেটের তাগিদে কিছু একটা করতে হয়। তাই করি।’
স্টেডিয়াম মার্কেটের ফুটপাতে বসেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ী রবিন সেন্টু। তিনি গেঞ্জি, টি-শার্ট ও আন্ডারওয়ার বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, ‘ঈদবাজারে মানুষ নতুন পোশাক কেনে। তাই কাপড়ের ব্যবসা নিয়েছি। এবারে ঈদে যে পরিমাণ বিক্রি হবে; ঈদের পরে সেই বিক্রি হবে না। তাই অন্য কাজ করতে হবে। ঈদের পরে লাভের টাকা অন্য ব্যবসায় খাটাব।’
বিক্রেতারা জানান, এখন বেচাবিক্রি জমজমাট। জিনিসগুলো অল্প দামে কেনা। বিক্রিও করি সামান্য লাভে। ফুটপাতে একটা চিরুনি ১০ টাকায় নেওয়া যায়। শার্ট, টি-শার্ট ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, জিন্স প্যান্ট ২৫০ থেকে ৬০০ টাকা, মেয়েদের থ্রিপিস ৩৫০ থেকে ৮০০ টাকা, শাড়ি ৩৫০ থেকে ২ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। অল্প দামে এসব পণ্য কিনে ক্রেতারাও খুশি। গুলিস্তানের ফুটপাত থেকে পোশাক কিনছেন সোহেল। তিনি বলেন, ‘ছেলের জন্য জামা ও শার্ট কিনেছি। যাওয়ার পথে কিছু সেমাই ও মসলা কিনে নিয়ে যাব।’
পোশাক কর্মী কুলসুম বলেন, ‘অল্প টাকা বেতন পাই। ফুটপাত থেকে কেনা ছাড়া আমাদের আর কোনো গতি নেই। অল্প টাকার জিনিস ফুটপাত থেকেই কিনতে হয়।’ ফকিরাপুলের বিল্লাল বলেন, ‘মৌসুমি ব্যবসায়ীরা যদি ঈদের ্আগে দোকান নিয়ে না বসতেন, তাহলে আমাদের মতো অনেকেরই ঈদের কেনাকাটা হতো না।’
পিডিএসও/তাজ