ফিচার ডেস্ক
তরুণদের এগিয়ে নিতে চান মেহেদী হাসান
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের কোথাও স্বপ্ন দেখার অধিকারের কথা উল্লেখ নেই। কিন্তু দুর্জয় তারুণ্য তার পরোয়া করে না। তরুণরা স্বপ্ন দেখবে। তাদের স্বপ্নডানায় ভর করে সবল হবে দেশের অর্থনীতির চাকা। মানবউন্নয়ন সূচকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে আমাদের এ জাতি। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রবাসী মেহেদী হাসান সেসব তরুণদের একজন। পড়াশোনা শেষ করে মালয়েশিয়াতে পেট্রোলিয়াম একটি কোম্পানির হিসাবরক্ষক হিসাবে কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন আরপি ফাউন্ডেশন (www.rpfoundationbd.org)। যা শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং মানবকল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। মেহেদী হাসান আরপি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী। তার সফলতার গল্প ও স্বপ্ন জানাচ্ছেন কাঞ্চন বিধু—
বাংলাদেশ নিয়ে আপনার অনুভূতি কেমন? আমি মনে করি, বাংলাদেশিরা অনেক পরিশ্রমী ও স্মার্ট। সুযোগ পেলে তারা ভালো কিছু করতে পারে।
বাংলাদেশ নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কি? আমার ইচ্ছা আছে, আরপি ফাউন্ডেশন নিয়ে বাংলাদেশের তরুণদের সঙ্গে কাজ করার। আরপি ফাইন্ডেশনের সেবা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই, যাতে করে সাধারণ মানুষ নিজেদের নেটওয়ার্কের মধ্যে আসতে পারে, একে-অপরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পরস্পরকে সাহায্য করতে পারে। এটি অলাভজনক সংগঠন, শিক্ষা, চাকরিসহ নানা ক্ষেত্রে কাজে লাগবে। আমি বাংলাদেশের তরুণদের সঙ্গে নিজের গল্প ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে চাই। আশা করি এর মাধ্যমে বাংলাদেশের তরুণেরা নিজেদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার গড়তে অনুপ্রেরণা পাবে।
উদ্যোক্তা হতে কোন বিষয়টা আপনাকে উৎসাহী করেছে? উদ্যোক্তা হওয়ার আগে আমি বুঝতে পেরেছিলাম—বিশ্বে উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আছে। আমি নিজেই সিদ্ধান্ত নিলাম বিষয়টি সমাধান করব এবং তা উদ্যোক্তা হয়েই। এ ক্ষেত্রে আমার মা-বাবার দারুণ উৎসাহ পেয়েছি, যা আমাকে উদ্যোক্তা হতে সাহায্য করেছে।
উদ্যোক্তা হওয়ার আগে কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা উচিত? এ ক্ষেত্রে বিষয়টা একেকজনের কাছে একেক রকম। অনেকে শুরুতে কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরির মাধ্যমে নিজের অভিজ্ঞতা অর্জনের পর উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করতে পারেন। অনেকে আবার শুরুই করেন উদ্যোক্তা হিসেবে এবং নিজের চেষ্টায় নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন।
আরপি ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য এবং তরুণদের নিয়ে আপনার ভাবনা কী? আরপির লক্ষ্য হলো—একটি সুস্থ, সুন্দর, আলোকিত সমাজ গড়ে তোলা। আলোকিত মানুষ তৈরি এবং আলোকিত সমাজ নির্মাণের প্রচেষ্টায় একতাবদ্ধ করা। দক্ষ, যোগ্য ও সৃজনশীল নেতৃত্ব তৈরি।
বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের চিন্তা-চেতনার মধ্যে একধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসতে চাই। নেতৃত্ব চর্চার জন্য আমাদের কোনো ক্ষমতার প্রয়োজন নেই। নিজ নিজ অবস্থান থেকেই যে ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে নেতৃত্বের চর্চা করা যায়—এই বিশ্বাসটুকু তাদের মধ্যে জন্মানো। আমাদের এখনকার সমাজে একজনের প্রতি আরেকজনের সম্মান, সহানুভূতি অনেক কম। নেতৃত্ব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা তরুণদের মূল্যবোধের কিছুটা পরিবর্তন নিয়ে আসতে চাই, যেখানে তাদের মধ্যে অন্যের প্রতি সহানুভূতি থাকবে, দেশের জন্য কিছু করার সাহস থাকবে এবং নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তার মধ্যে দলীয়ভাবে কাজ করা, যোগাযোগের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা দুটি ভাগে চিন্তা করে এগিয়ে যাচ্ছি। প্রথমত, আমাদের কিছু পরিকল্পনা আছে যা শিগগিরই অর্জনের জন্য কাজ করছি। তার মধ্যে অচিরেই আমরা তরুণদের জন্য অনলাইন নেতৃত্ব প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করবো। প্রায় ২,৫০০ তরুণ শিক্ষার্থীকে নেতৃত্ব প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক তরুণদের জন্য এই কার্যক্রমকে আরও দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাই অনলাইন কার্যক্রমকে বাস্তব রূপ দিতে চাই। এছাড়া নতুন প্রজন্ম যেন নিজেদেরকে চাকরি ক্ষেত্রের জন্য প্রস্তুত করতে পারে এজন্য আমরা আরপি প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট নামে আরও একটি কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। আশা করছি অচিরেই এই কার্যক্রম শুরু করতে পারবো।
তরুণদের পরিকল্পনা কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন? বাংলাদেশে থেকেও তরুণদের ভালো কিছু করা সম্ভব। আইডিয়া হতে হবে ভালো, এরপর যোগাযোগ বাড়াতে হবে। স্টার্টআপে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হয় না। বড়জোর ছয় মাসের পরিকল্পনা মাথায় রাখতে হবে। কারণ, প্রযুক্তির সবকিছুই দ্রুত বদলে যায়।
নিজেদের মধ্যে আলাপ করতে হবে। আশপাশে কী সমস্যা রয়েছে, সেসব থেকে সমস্যা বেছে নিয়ে সমাধান খুঁজতে হবে। ১০ জন যদি কোনো একটি সমস্যার কথা বলে, বুঝতে হবে সেটাতেই আছে আইডিয়া। আইডিয়াটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন কী? প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি এ বাংলাদেশ। চারদিকে সৌন্দর্যের প্রাচুর্য। সব কিছুই আছে এ দেশের মৃত্তিকায়। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া সর্বত্র রূপসী মায়ের হাতছানি। কিন্তু মাঝে মাঝে এই মাকে আমি হারিয়ে ফেলি গুটি কয়েক কুৎসিত মনের অধিকারী মানুষের জন্য। যারা আমার মাকে পুড়িয়ে, মায়ের বুকে রক্তস্রোত বসিয়ে মজা পায়। একজন আধুনিক সমাজের মানুষ হিসেবে আমার প্রথম চাওয়া—এদেশ থেকে পারস্পরিক প্রতিহিংসাটা সবার আগে দূর হোক।
মানুষের মনের মধ্যে মানুষের প্রতি সম্মান বাড়ুক। এ দেশের প্রত্যেকটি শিশু যাতে শুদ্ধ বাংলা শিখে বড় হতে পারে সেটার সুযোগ করে দিতে হবে। তাই তৃণমূলে আমাদের কাজ বাড়াতে হবে। আমি চাই না এ দেশের আরেকটি শিশুও না খেয়ে ফুটপাতে ঘুমাক। চাই না রেল স্টেশনে অমানুষের মতো বেড়ে উঠুক আর কোনো শিশু।
পিডিএসও/হেলাল