সিএনবিসি

  ২১ মার্চ, ২০১৮

জরিপ : সাধারণ মানুষে অনাগ্রহ ধনীদের

আপনার সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের মতো, আর্থ-সামাজিক অবস্থানও ঠিক করে দেয় আপনি কিভাবে ভাববেন। কিংবা কোন বিষয়গুলোকে বা কাদের খেয়াল করবেন। সহজ করে বললে, আপনি ধনী নাকি গরিব সেটাও প্রভাবিত করবে আপনার চিন্তাধারাকে।

এমনটাই বেরিয়ে এসেছে ২০১৬ সালে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির মনস্তাত্ত্বিক বিজ্ঞানের ওপর করা এক গবেষণা থেকে। এতে দেখা যায়, শ্রমজীবী বা নিম্নবিত্ত মানুষদের তুলনায় ধনী বা উচ্চবিত্তের মানুষ তাদের চারপাশের লোকজনের ব্যাপারে কম আগ্রহী হন। অন্যদিকে, নিম্নবিত্তরা তাদের চারপাশের মানুষদের গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং তাদের আবেগ, কষ্ট, ভোগান্তি গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারেন।

মাঠপর্যায়, গবেষণাগারসহ অনলাইন জরিপের মাধ্যমে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়। গবেষণার প্রথম ধাপে তারা নিউইয়র্ক শহরের রাস্তাগুলোতে গিয়ে পর্যবেক্ষণ শুরু করেন। এ সময় তারা গুগল গ্লাস পরে যান; যাতে করে সবকিছু রেকর্ড করা যায়।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্তরা রাস্তায় কোনো ব্যক্তি বা কোনো কিছুকে খুব সূক্ষ্মভাবে খেয়াল করেন। এমনকি বারবার ফিরে তাকান। অন্যদিকে, উচ্চবিত্তরা কোনো কিছুতেই বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকেন না। কিংবা আগ্রহ দেখান না।

গবেষণার দ্বিতীয় ধাপে, আরো সুনির্দিষ্টভাবে জানতে স্মার্ট গ্লাস ব্যবহার করা হয়। এই প্রযুক্তি মানুষের দৃষ্টির লক্ষ্য সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে পারে। এইবার গবেষকরা দেখলেন যে, নিম্নবিত্তরা ছবির মানুষের দিকে তাকিয়ে বেশি সময় ব্যয় করেন। অন্যদিকে, উচ্চবিত্তরা মানুষ নয় বরং বস্তুর দিকে বেশি মনোযোগী হয়ে থাকেন।

এই পর্যায়ে গবেষকরা পর্যবেক্ষণের আলাদা এই প্রবণতার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে যান। তবু তারা নিশ্চিত হতে চাইছিলেন যে আচরণে এই পার্থক্য মানুষ সচেতনভাবেই করে থাকেন কি না। তারা বলেন, ‘এটা এমন হতে পারে যে, উচ্চবিত্তরা সচেতনভাবেই নিম্নবিত্তদের দিকে কম আগ্রহ দেখান। আবার সামাজিক শ্রেণির বিভিন্ন মানুষ সামাজিকতা রক্ষা করতে ইচ্ছাকৃতভাবে প্রাণবন্ত আগ্রহ দেখাতে পারেন।’

তাই তৃতীয় ধাপে, অনলাইন জরিপের আশ্রয় নেন গবেষকরা। এই জরিপে অংশ নেন প্রায় ৪০০ জন। তাদেরকে একজোড়া ছবি দেখতে দেওয়া হয়। ছবিগুলো আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের নানা বিষয়েরই। যেমন, গাছপালা, পোশাক, একজোড়া মানুষের মুখ কিংবা অন্য কিছু। কিছুক্ষণ পরেই ছবিগুলোর মধ্যে খুব সূক্ষ্ম পরিবর্তন করে দেখতে দেওয়া হয় এবং অংশগ্রহণকারীদের বলতে বলা হয়, আগের ছবিটির সঙ্গে এই ছবিটির পার্থক্য কি। এ সময় কোনো মানুষের মুখচ্ছবির ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, উচ্চবিত্তরা কম প্রতিক্রিয়া জানান। নিম্নবিত্তরা খুব দ্রুত সুনির্দিষ্টভাবে পার্থক্যগুলো চিহ্নিত করতে পারেন।

মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার এই আন্তঃনির্ভরশীলতার বিষয়ে এর আগেও গবেষণা হয়েছিল। দেখা গিয়েছিল, দরিদ্র বা নিম্নবিত্তরা অন্য মানুষের আবেগকে সুনির্দিষ্টভাবে বুঝতে এবং অন্যের ভোগান্তি আরো গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারেন। এই গবেষণা আগের এই গবেষণাকে সত্য প্রমাণিত করে।

গবেষক ডায়াচড বলেন, ‘মানুষের সামাজিক শ্রেণি তার মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়ায় কিভাবে প্রভাব ফেলে সেই ধরনের জ্ঞানে আমাদের এই গবেষণা অবদান রাখবে। সামাজিক এই শ্রেণিগুলোর মধ্যে পার্থক্যগুলোর বিষয়ে আমরা যত বেশি জানব, সামাজিক বিভিন্ন বিষয়ে আমরা ততই বুঝতে পারব। এই গবেষণা এই ধাঁধার একটা অংশ মাত্র।’

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সাধারণ মানুষ,ধনী,গবেষণা,নিউইয়র্ক
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist