reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৫ মার্চ, ২০১৮

এ যেন অলৌকিক জীবন...!

নেপালের রাজধানী কাঠমুন্ডুর ত্রিভূবন বিমান বন্দরে অবতরণ করতে গিয়ে ভয়াবহ এক দুর্ঘটনার কবলে পড়া ইউএস বাংলার বিমানের বেঁচে যাওয়া ১০ যাত্রীর একজন হলেন সৈয়দা কামরুন নাহার স্বর্ণা। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে আশঙ্কামুক্ত হয়ে দেশে ফেরা বিধ্বস্ত বিমানের যাত্রী স্বর্ণা বুধবার নেপালে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। এই সময় তিনি জানান, স্বামীই তাকে বাঁচিয়েছেন। এছাড়া বেঁচে যাওয়া আরেক যাত্রী কেশব পান্ডের কাছেও এই যেন এক অলৌকিক জীবন। সাংবাদিকদের তিনি জানান, বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার সময় তিনি সম্ভবত ছিটকে পড়েছিলেন। আর এতেই বেঁচে গিয়েছিলেন।গত সোমবার ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে দুপুর ২টা ২০ মিনিটে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। কাছেই একটি ফুটবল মাঠে বিধ্বস্ত হয় বিমানটি। নেপাল কর্তৃপক্ষ ৫১ জনের প্রাণহানি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে। ইউএস-বাংলার ওই বিমানে স্বর্ণা-মেহেদী দম্পতি ছাড়াও ছিলেন পরিবারের আরও ৩ সদস্য। দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন ভাসুর (স্বামীর বড় ভাই) ও ভাসুরের আড়াই বছরের সন্তানকে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার জা-ও পেয়েছেন দেশে ফেরার অনুমতি।

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে স্বর্ণা স্মরণ করছিলেন সোমবারের সেই ভয়াবহ ঘটনা। প্রাণে বেঁচে যাওয়া স্বর্ণা বলেন, যেভাবে তার নাকে মুখে ধোঁয়া ঢুকে গিয়েছিল, ভেবেছিলাম মরেই যাব। তবে কিছুতেই মরে যেতে চাইনি আমি। দুর্ঘটনার সময় বিমানের আসনে আটকা পড়ে ছিলেন তিনি। কিছুতেই বের হতে পারছিলেন না সেখান থেকে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত আমার স্বামী বিমান থেকে আমাকে টেনে বের করেছে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই এতে আগুন ধরে যায়। তিনি আরও বলেন, স্বামীই তাকে বাঁচিয়েছেন।

সৌভাগ্যবান নেপালের বাসিন্দা কেশব পান্ডেও। তার ধারণা, খোলা মাঠে বিমানটি আছড়ে পড়াতেই বেঁচে গিয়েছেন তিনি। খুব ভালো মনে না থাকলেও তার ধারণা, দুর্ঘটনায় বিমান টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার সময় তিনি কোনভাবে বাইরে ছিটকে পড়েন। তিনি বলেন, বিমান দুর্ঘটনায় খুব বেশি মানুষের বেঁচে যাওয়ার কথা শুনিনি। আমার কাছে এ এক অলৌকিক বেঁচে যাওয়া। ললিতপুরে মেডিসিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি। নেপালের একটি ট্রাভেল এজেন্সির অপারেটর হিসেবে কর্মরত কেশব বাংলাদেশে এসেছিলেন একটি সম্মেলনে যোগ দিতে। গত ৯ মার্চ বাংলাদেশে কাস্টমার সাকসেস সামিট নামের ওই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে কেশব এখন হাসপাতালের বিছানায়। পাশাপাশি শুয়ে শুয়ে নেপালি সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্টকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। ১২ মার্চ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার আগে ও পরের পরিস্থিতি বর্ণনা করেছেন তিনি। কাঠমান্ডু পোস্টকে তিনি জানান জানান, বুধানিলকণ্ঠ এবং বৌদ্ধ এলাকাগুলোতে অবস্থিত পাহাড়ের উপর দিয়ে বিমানটিকে বিমানবন্দরের দিকে ঘোরান পাইলট। তখন এটি ঘর-বাড়ি এবং গাছের খুব কাছ দিয়ে উড়ছিলো। এতিই যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলো। তিনি বলেন, আমরা তখনই অনুভব করলাম আমাদের জীবন ঝুঁকিতে আছে। তবে পাইলট যখন বিমানটিকে দিশাহীন পথ থেকে বের করে বিমানবন্দরের দিকে ঘোরালো তখন আমরা ভাবলাম প্রাণে বেঁচে যাব।

স্বর্ণা কেশব দুজনই জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে ঠিকঠাকই রওনা দিয়েছিল বিমানটি। কিন্তু ত্রিভুবন বিমানবন্দরে নামার আগে তা মারাত্মক দুলছিল, ডাইনে বাঁয়ে কাঁপছিল, তারপর বোমা ফাটার মত শব্দে মাটিতে আছড়ে পড়ে। নেপালে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত ২১ জনের ১০ বাংলাদেশি।

নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তদের মধ্যে ৭ জনকে কাঠমান্ডু ছাড়ার অনাপত্তিপত্র দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে তাদের একজনকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অন্য ৬ জনও যেকোনও সময় কাঠমান্ডু ছাড়তে পারবেন। তাদের মধ্যে স্বর্ণা আর তার জা-ও রয়েছেন। আহত বাকি ৩ বাংলাদেশির বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানা গেছে।

পিডিএসও/মুস্তাফিজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
অলৌকিক জীবন,নেপাল,কাঠমুন্ডু,ইউএস বাংলা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist