টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

  ১৮ অক্টোবর, ২০১৭

টাঙ্গাইলে চাঞ্চল্যকর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা

এমপি রানাকে আদালতে হাজির না করায় স্বাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি

উচ্চ আদালতে জামিন মঞ্জুর হলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা

আত্মসমর্পণের পর দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও টাঙ্গাইলের চাঞ্চল্যকর মুক্তিযোদ্ধা ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমদ হত্যা মামলাটি কেবল মাত্র চার্জ গঠণ পর্যন্ত এগিয়েছে। ছয় মাসের মধ্যে বিচার কার্যক্রম শেষ করার জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও আসামী পক্ষের অসহযোগিতার কারণে বার বার মামলার কার্যক্রম পিছিয়ে যাচ্ছে। এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন নিহত ফারুক আহমেদের পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধারা।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মনিরুল ইসলাম খান বলেন, বুধবার পূর্ব নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী মামলাটির স্বাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। বাদী নাহার আহমেদ, ছেলে আহমেদ মজিদ সুমন ও মেয়ে ফারজানা আহমেদ মিথুন আদালতে হাজিরা দাখিল করেন। কিন্তু অসুস্থ্যতার কারন দেখিয়ে এমপি রানাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে টাঙ্গাইল আদালতে উপস্থিত করা হয়নি। ফলে প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবুল মনছুর মিয়া মামলার পরবর্তি দিন ধার্য্য করেন আগামী ১ নভেম্বর।

কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির জানিয়েছেন, এমপি রানাকে অসুস্থ্যতা জনিত কারণে গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। তার জন্য ভ্রমণ নিরাপদ নয় বিধায় তাকে আদালতে হাজির করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ নিয়ে ৯ বার অসুস্থ্যতার অযুহাতে এমপি রানাকে আদালতে উপস্থিত করা হয়নি। এর আগে উচ্চ আদালতে জামিনের উপর দেওয়া স্থগিতাদেশের উপর আপীল বিভাগের শুনানী হবে বৃহস্পতিবার।

এদিকে বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত হওয়ায় ক্ষুদ্ধতা প্রকাশ করেন নিহতের পরিবার ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও মুক্তিযোদ্ধারা। জামিন আবেদন মঞ্জুর হলে তারা হতাশ হবেন এবং আবারও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে মামলার স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ করতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। ফলে আবারও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে জেলার আওয়ামী রাজনীতি। মামলাটি দ্রুত বিচার কার্যক্রম শেষ করে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন সময় সভা সমাবেশ করে নিহতের পরিবার ও আওয়ামী লীগের একাংশ।

আজ আদালত প্রাঙ্গনে জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজিত সমাবেশে নিহতের স্ত্রী নাহার আহমেদ বলেন, মুক্তিযোদ্ধা হত্যার দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি না হলে মানুষের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা থাকবেনা। আবারও টাঙ্গাইলে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হবে। দলীয় নেতাকর্মীদের জুলুম, নির্যাতন, হয়রানী ও খুন করা হবে।

এসময় জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুজ্জামান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মাতিনুজ্জামান সুখন, ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম লেবুসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ টাঙ্গাইলে তাঁর কলেজপাড়া এলাকায় নিজ বাসার সামনে পাওয়া যায়। ঘটনার তিন দিন পর তাঁর স্ত্রী নাহার আহমেদ টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। প্রথমে থানা পুলিশ ও পরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মামলার তদন্ত করে। ২০১৪ সালের আগস্টে এ মামলার আসামি আনিসুল ইসলাম ওরফে রাজা ও মোহাম্মদ আলী গ্রেপ্তার হন। আদালতে তাঁদের দেওয়া স্বীকারোক্তিতে সাংসদ আমানুর রহমান খান ও তার তিন ভাই সাবেক পৌর মেয়র শহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার এ হত্যাকান্ডের জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে। এরপর আমানুর ও তাঁর ভাইয়েরা আত্মগোপনে চলে যান। গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি আমানুর ও তাঁর তিন ভাইসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র জমা দেয় তদন্ত কর্মকর্তা। এরপর বিভিন্ন সময় মামলার চার্জ গঠণের দিন নির্ধারিত হলেও অসুস্থ্যতার কারণ দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়নি। সর্বশেষ গত ৬ সেপ্টেম্বর আমানুরকে আদালতে হাজির করে চার্জ গঠণের মধ্যদিয়ে বিচারকার্যক্রম শুরু হয়।

পিডিএসও/রানা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা,এমপি রানা,স্বাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist