রংপুর ব্যুরো

  ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

বাবু সোনা হত্যা : স্নিগ্ধা ও কামরুলের বিরুদ্ধে চার্জশিট

রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনা (ফাইল ছবি)

রংপুরের বিশেষ জজ আদালতের পিপি আইনজীবী রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনা হত্যা মামলায় স্ত্রী স্নিগ্ধা ভৌমিক এবং তার প্রেমিক কামরুল ইসলামকে অভিযুক্ত করে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেওয়া হয়েছে।

এ মামলায় অভিযুক্ত ৪ জনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত মিলনসহ অপর ৪ আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর রংপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করা হলেও সোমবার দুপুরে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, এ মামলায় ৮শ পৃষ্ঠার বেশি নথীপত্র আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। ৫ মাস ১২ দিনের মাথায় চার্জসিট দেওয়া হয়েছে। দু সপ্তাহ আগে বাবু সোনার ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট আমাদের হাতে এসে পৌছেছে। হত্যার দু সপ্তাহের মধ্যেই আমরা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেয়েছি। এই মামলায় মোট ৪০জন সাক্ষি রয়েছে। বাবু সোনা’র বিশাল অর্থবিত্ত ও পরকীয়ার কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বাবু সোনার স্ত্রী স্নিদ্ধা ভৌমিক ও তার প্রেমিক কামরুল ইসলাম।

জবানবন্দিতে কামরুল জানিয়েছেন, সে রংপুর নগরীর তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে ২৫ বছর ধরে সহকারি শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করে আসছে। আইনজীবী বাবু সোনার স্ত্রী দীপা ভৌমিকও একই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। হত্যাকাণ্ডের ৮ মাস আগে থেকে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হত্যার ৪ মাস আগে থেকে তারা দুজনে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু বাবু সোনা আইনজীবী ও প্রভাবশালী হওয়ায় বিয়েতে বাধা হতে পারে এমন মনে করে তারা তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন।

কামরুল তার জবানবন্দিতে আরও জানান, তার ধারণা ছিলো, বাবু সোনাকে হত্যার পর তারা দুজনে বিয়ে করার পর বাবু সোনার বিশাল সম্পদ সে ভোগ করতে পারবে। হত্যার পর লাশ কোথায় পুঁতে রাখবে, নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা কীভাবে প্রচার করবে সব পরিকল্পনা করা হয়।

চলতি বছরের ২৯ মার্চ বৃহস্পতিবার রাতে বাবু সোনাকে ১০ টি ঘুমের ওষুধ খাইয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এরপর তার লাশ তাজহাট মোল্লাপাড়ায় একটি নির্মাণাধীন বাড়ির ঘরে পুতে রাখা হয়। ৩ এপ্রিল রাতে বাবু সোনার স্ত্রী স্নিগ্ধা ভৌমিক ওরফে দিপাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাব আটক করে। তিনি এ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন এবং লাশের অবস্থান সম্পর্কে জানান। সেই সূত্র ধরে ওই দিন রাতে মোল্লাপাড়ার একটি বাড়ির মেঝে খুড়ে বাবু সোনার লাশ গলিত উদ্ধার করা হয়।

এঘটনায় পুলিশ বাবু সোনার স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার ওরফে দিপা ভৌমিক, প্রেমিক কামরুল ইসলাম, মিলন মোহন্ত ,ছাত্র মোল্লাপাড়া এলাকার সবুজ ইসলাম ও রোকনুজ্জামানকে গ্রেফতার করে। গত ৫ এপ্রিল কামরুল বাদে অপর ৪ আসামিকে রংপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আরিফা ইয়াসমিন মুক্তা এজলাশে হাজির করা হয়। আদালতে মিলন মোহন্তসহ আসামিরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে তাদের রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

কারা হেফাজতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মিলন মোহন্ত মারা যায়। এ মামলার অপর দুই আসামি সবুজ ইসলাম ও খড় বিক্রেতা স্বপন রায়কে অভিযোগ থেকে অব্যহতি দেয়া হয়। মামলার বাদী নিহত রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের ছোটভাই সাংবাদিক সুশান্ত ভৌমিক বলেন, চার্জসিটে আমরা সন্তুষ্ট। এ হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার দাবি করেন তিনি।

পিডিএসও/এআই

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাবু সোনা,হত্যা,চার্জসিট
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close