reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৯ জানুয়ারি, ২০১৮

পিবিআইয়ের গবেষণা

যেসব কারণে খালাস পান ডাকাতি মামলার আসামি

পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে ত্রুটি, ম্যাজিস্ট্রেটের ভুল এবং মামলায় আপসের কারণে চট্টগ্রামে ডাকাতি মামলার দুই তৃতীয়াংশেরও বেশি আসামি খালাস পেয়ে যান। পুলিশের বিশেষায়িত তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সম্প্রতি এক গবেষণায় এ তথ্য জানা গেছে। পুলিশের তদন্তের পর আদালতে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে বিচারের চিত্র পর্যালোচনা করতে পিবিআইয়ের চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিট এই গবেষণা করে। এতে ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন আদালতে নিষ্পত্তি হওয়া সাতটি মামলার রায় পর্যালোচনা করা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি মামলাতেই খালাস পেয়েছেন আসামিরা। দুটি মামলায় বাদী-বিবাদীর আপসজনিত কারণে আসামিরা খালাস পান। তদন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গাফিলতির কারণে খালাস পেয়েছেন দুটি মামলার আসামিরা। এ ছাড়া ম্যাজিস্ট্রেটের ভুলের কারণে একটি মামলার আসামিরা খালাস পেয়েছেন। খালাস হওয়া মামলার মধ্যে কোনো মামলায়ই বাদী, সাক্ষী ও রাষ্ট্রপক্ষ মামলা প্রমাণে সচেষ্ট ছিল না। ডাকাতির মামলায় জড়িত আসামিদের মধ্যে ৭১ দশমিক ৪৪ শতাংশই খালাস পেয়ে থাকেন।

শুধু মামলার তদন্তে ভুল থাকার কারণে খালাসপ্রাপ্ত মামলার মধ্যে ৪০ শতাংশ মামলায় আসামি ছাড়া পেয়ে যান। মামলার রায় পর্যালোচনা করে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের ভুলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে পিবিআইয়ের গবেষণায়। এতে বলা হয়, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ না করা, জবানবন্দির সমর্থনে সাক্ষী সংগ্রহ না করা, প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী উপস্থাপন না করা, জব্দকৃত আলামত আদালতে বিচারকার্যের সময় উপস্থাপন না করার কারণে খালাস পাচ্ছে আসামিরা। এ ছাড়া সাক্ষীরা আদালতের হাজির থাকা আসামিদের শনাক্ত না করা, এজাহারকারীসহ তার সঙ্গীয়দের সাক্ষী হিসেবে আদালতে উপস্থাপন না করা, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি মতে ঘটনাস্থল ভিন্ন হওয়ার বিষয়ও চিহ্নিত করা হয়েছে।

১৯৯৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাতে নিজের ঘরে ডাকাতির ঘটনায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন ডা. ফাতেমা সিকদার। থানা-পুলিশ ১ বছর ৪ মাসে তদন্ত শেষে সাতজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয়। ১৪ বছর পর মামলার রায়ে সব আসামি খালাস পান। রায়ে খালাস পাওয়ার বিষয়ে পিবিআই বলছে, গ্রেফতার আসামি নাছিরের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি কার্যবিধি আইনের ৩৬৪ ধারার বিধানমতে লিপিবদ্ধ না করা, আসামি নাছির মানসিক রোগী হিসেবে অভিযোগ থাকায় সেই বিষয়ে পরীক্ষা না করানো, নাছিরের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ছাড়া স্বীকারোক্তি সমর্থনে সাক্ষ্য প্রদান না থাকার কারণে খালাস পেয়েছেন আসামিরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনেকের রয়েছে দক্ষতায় ঘাটতি। পাশাপাশি প্রভাবিত হয়েও কেউ কেউ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। এক্ষেত্রে কারো ভুল বা গাফিলতির কারণে কোনো আসামি ছাড়া পেলে, তার দায়টা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার। কিন্তু এ জন্য দায়ী তদন্ত কর্মকর্তাকে শাস্তি পেতে হয়েছে, এমন নজির সচরাচর দেখা যায় না।

এ দিকে গবেষণা প্রতিবেদনে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষকে ত্রুটিমুক্ত এজাহার প্রণয়ন করা, তদন্তের সময় ঘটনাস্থল থেকে বস্তুগত আলামত সংগ্রহ করা, ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাক্ষীদের শনাক্ত ও তাদের অভিযোগপত্রের কলামে সাক্ষী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে আসামিদের জবানবন্দি আদালতে রেকর্ড করার ব্যবস্থা করা, অপরাধ প্রমাণে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করা, সংশ্লিষ্ট দালিলিক সাক্ষ্য ব্যবহার করা, দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করার কথাও বলা হয়েছে।

পিবিআইয়ের সুপারিশে আরো বলা হয়েছে, তদন্তকালে ছোটখাটো ত্রুটি দেখা গেলে, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা পিআরবি ৪৪৪ বিধিমতে তা সংশোধনের ব্যবস্থা নিয়ে ট্রায়াল করুুলে মামলাটি ত্রুটিমুক্ত থাকবে। বিচারিক পর্যায়ে বাদী ও সাক্ষীদের প্রতি যথাযথভাবে সমন ইস্যু করা, সাক্ষীদের হাজির নিশ্চিত করা ও আদালতে সাক্ষ্য দিতে সাক্ষীদের প্রস্তুত করার ব্যবস্থা নিতেও সুপারিশে বলা হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, নিম্ন আদালতে যেসব মামলায় সাজা হয়েছে, সেগুলোর বিচারকার্যে গড়ে ৯৬ মাস এবং যেসব মামলায় আসামি খালাস পেয়েছেন, সেগুলোতে গড়ে ১৪৭ মাস সময় লেগেছে। অর্থাৎ আদালতে বিচারকাজ যত দীর্ঘায়িত হয়েছে মামলায় খালাসের পরিমাণ তত বেড়েছে।

পিবিআইয়ের চট্টগ্রাম মেট্রোর জনসংযোগ কর্মকর্তা পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম মহানগরের আদালতগুলোতে নিষ্পত্তি হওয়া ডাকাতি মামলায় সাজা ও খালাস প্রদান নিয়ে অনুসন্ধান করার নির্দেশনা আসে পিবিআই সদর দফতর থেকে। এই প্রেক্ষিতে অনুসন্ধান সমাপ্ত করে সম্প্রতি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনটি আমরা জমা দিয়েছি। মামলায় আসামি খালাস পেয়ে যাওয়ার পেছনে বিভিন্ন ভুল ও কিছু ত্রুটির কথা এতে উঠে এসেছে।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি রতন কুমার রায় বলেন, মামলা প্রমাণ করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন না করায় আসামি ছাড়া পেয়ে যান। বেশিরভাগ মামলায় আসামি খালাস পেয়ে গেলে এই বিচারের প্রতি মানুষের আস্থা থাকবে না। তাই সবপক্ষের জবাবদিহির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। দ্রুত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দিতে পারলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পিবিআই,মামলা,তদন্ত,ডাকাতি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist