আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০২ এপ্রিল, ২০২০

এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড

যুক্তরাষ্ট্রে ২ লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা

করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক লাখ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ২২ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে এই ভাইরাস। তবে হোয়াইট হাউসের করোনা টাস্কফোর্সের কর্মকর্তা ডা. ডেবোরা ব্রিক্স বলছেন, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হলেও এক লাখ মৃত্যু কিছুতেই এড়াতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র।

গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের ব্রিফিংয়ে তিনি বলেছেন, লোকজন সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করলেও যুক্তরাষ্ট্রে এ ভাইরাসে কমপক্ষে ১ লাখ থেকে ২ লাখ ৪০ হাজার পর্যন্ত মানুষের মৃত্যু হতে পারে।

এদিকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন অন্তত ৭৭০ জন। এখন পর্যন্ত এটাই দেশটিতে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এতে মৃত্যু সংখ্যাতেও চীনকে ছাড়িয়ে গেছে। দেশটিতে বর্তমানে মোট মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ৭৭৪ জন। বিপরীতে চীনে মারা গেছেন ৩ হাজার ৩০৫ জন।

ডা. ডেবোরা ব্রিক্সের শঙ্কা বাস্তবে রূপ নিলে তা ভিয়েতনাম যুদ্ধে নিহত মার্কিন সেনাদের সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যাবে। তবে এর চেয়েও বড় ভয়ের কথা শুনিয়েছেন তিনি। বলেছেন, সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মেনে চলা না হলে যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা হবে ১৫ লাখ থেকে ২২ লাখ পর্যন্ত।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস মোকাবিলার উদ্যোগে একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের পরিচালক ডা. অ্যান্থনি ফাউসি। তিনি বলেছেন, এ পরিস্থিতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ঠান্ডা মাথায় প্রস্তুত থাকা উচিত। তবে তার প্রত্যাশা, মৃতের সংখ্যা এত বেশি বাড়বে না।

এর আগে গত রোববার সিএনএনের সঙ্গে আলাপকালে যুক্তরাষ্ট্রে এ ভাইরাসে ১০ লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত এবং দুই লাখ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা প্রকাশ করেন ডা. অ্যান্থনি ফাউসি।

করোনাভাইরাসকে ‘বাঁচা-মরার ইস্যু’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এটির বিস্তার ঠেকাতে সরকারের প্রচেষ্টার কথাও জানান তিনি। জনগণের প্রতি আহ্বান জানান, তার প্রশাসনের সামাজিক দূরত্বের দিকনির্দেশনাগুলো মেনে চলতে। জনগণকে দুই সপ্তাহের জন্য ঘরে থাকারও পরামর্শ দেন ট্রাম্প। এ সময় তিনি আশাবাদ জানিয়ে বলেন, তার দেশ শিগগির বিদ্যমান বৈশ্বিক বিপর্যয়ের ‘সুড়ঙ্গের শেষের আলো’ প্রত্যক্ষ করবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি চাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক আসন্ন কঠিন দিনগুলোর জন্য প্রস্তুত থাকুক। আমরা খুব কঠিন দুটি সপ্তাহ পার করতে যাচ্ছি।’

এর আগে গত রোববার সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা-সংক্রান্ত নির্দেশনার মেয়াদ আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দেন ট্রাম্প। ওই নির্দেশনায় করোনার বিস্তার ঠেকাতে লোকজনকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও ঘরে থেকে কাজ করার মতো কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়। গত মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে এ-সংক্রান্ত বিশদ নির্দেশনা প্রকাশ করেন তিনি।

ট্রাম্পের এমন অবস্থানকে তার আগের অবস্থানের বিপরীত হিসেবে উল্লেখ করেছে আল-জাজিরা। কেননা, করোনা মহামারির মধ্যেই গত সপ্তাহে তিনি ইস্টার সানডের প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট সময় ব্যয় করেছেন। আগামী ১২ এপ্রিল খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান এ ধর্মীয় উৎসব পালিত হওয়ার কথা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজ্য ও স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে লোকজনের অবাধ চলাচল ও জমায়েতের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। এ ব্যাপারে সবচেয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে নিউইয়র্ক। সেখানে করোনায় মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই দেড় হাজার ছাড়িয়েছে। তবে ইলিনয়, লুজিয়ানা, মিশিগান ও ফ্লোরিডাসহ যুক্তরাষ্ট্র জুড়েই বিভিন্ন স্থানে নতুন করে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারের জন্য আরেকটি সংকটময় দিন অতিবাহিত হওয়ার পরই মঙ্গলবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক মন্তব্য করেন ট্রাম্প। এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ইতোমধ্যে মার্কিন অর্থনীতি প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ।

মার্কিন স্টক এক্সচেঞ্জগুলোতে তালিকাভুক্ত ৩০টি বড় কোম্পানির গড় সূচক কমেছে ৪০০ পয়েন্টেরও বেশি। অর্থাৎ, বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর সূচক কমেছে ১ দশমিক ৯ শতাংশ। গত ১৩৫ বছরের মধ্যে এতটা খারাপ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি তাদের। সূত্র : আল-জাজিরা।

যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড

ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য মতে, যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৮৫ হাজার ২৭০ জনের শরীরে নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২০ হাজারেরও বেশি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, করোনা মহামারিতে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য আগামী দুই সপ্তাহ অত্যন্ত কঠিন হতে চলেছে। আমি চাইয়ের জন্য সবাই প্রস্তুত থাকুক।

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ৪১ হাজার ছাড়িয়েছে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৮ লাখ ৩৮ হাজার ৬১ জন। চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ১৭১ জন।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
যুক্তরাষ্ট্র,করোনায় মৃত্যু,হোয়াইট হাউস,করোনাভাইরাস
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close