প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৪ জানুয়ারি, ২০২০

মিয়ানমারকে আইসিজে

রোহিঙ্গা হত্যা বন্ধ করুন, সুরক্ষা দিন

রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় মিয়ানমারকে জরুরি ভিত্তিতে একগুচ্ছ অন্তর্বর্র্তীকালীন পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিজে)। জাতিসংঘের এই সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বা কোনো পক্ষ এমন কিছু করতে পারবে না যা গণহত্যা হিসেবে পরিগণিত হতে পারে।

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে গাম্বিয়ার করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আইসিজের ১৭ সদস্যের বিচারক প্যানেল গতকাল বৃহস্পতিবার এই আদেশ দিয়েছেন। আইসিজের প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবদুলকাভি আহমেদ ইউসুফ নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় (বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টায়) আদেশ পড়ে শোনান। এ সময় ১৪ জন স্থায়ী বিচারপতি ও দুজন অ্যাডহক বিচারপতি আদালতকক্ষে উপস্থিত ছিলেন।

আদালতের চারটি আদেশ হলো জাতিসংঘ কনভেনশন অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দিতে হবে। গণহত্যার প্রমাণ ধ্বংস করা যাবে না। সশস্ত্র বাহিনী ফের কোনো গণহত্যা ঘটাতে পারবে না। ৪ মাস পরপর মিয়ানমারকে আদালতে প্রতিবেদন দিতে হবে যত দিন না পর্যন্ত বিচারের চূড়ান্ত রায় প্রকাশিত হয়।

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার অভিযোগ ছিল দুই বছর আগে রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে সেনাবাহিনীর অভিযানে যে বর্বরতা চালানো হয়েছে তার মধ্য দিয়ে ১৯৮৪ সালের আন্তর্জাতিক গণহত্যা কনভেনশন ভঙ্গ করেছে মিয়ানমার।

গতকাল মামলার আদেশ ঘোষণায় আদালত বলেন, গণহত্যা সনদের ৪১ ধারার আওতায় তিনটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশের শর্তসমূহ বিরাজ করছে। গাম্বিয়া সংখ্যালঘু এই গোষ্ঠীর সুরক্ষায় অন্তর্বর্তী যেসব ব্যবস্থার আদেশ চেয়েছে; সেগুলোর প্রথম তিনটির লক্ষ্য হচ্ছে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

এদিকে, তিন দিন আগে মিয়ানমারের তদন্ত কমিশন ২০১৭ সালে রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনীর অপারেশন ক্লিয়ারেন্সের সময় কিছু সৈন্য সেখানে যুদ্ধাপরাধ করলেও গণহত্যার মতো ঘটনা ঘটেনি বলে প্রতিবেদনে জানায়। তবে আইসিজে ওই প্রতিবেদনকে প্রতারণামূলক হিসেবে দেখছে।

অন্যদিকে, আদেশ ঘোষণার আগে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মতো ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে তিনি গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে লেখা এক নিবন্ধে তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা তাদের বিরুদ্ধে নিপীড়নের মাত্রাকে অতিরঞ্জিত হিসেবে তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে রাখাইনে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দেশীয় আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

যেভাবে আইসিজেতে রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলা : মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গত নভেম্বরে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ এনে মামলা করে গাম্বিয়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক এ আদালতে গণহত্যার দায়ে তৃতীয় মামলা এটি। গাম্বিয়া ও মিয়ানমার দুই দেশেই ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ। জেনোসাইড কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী হিসেবে শুধু গণহত্যা থেকে বিরত থাকা নয় বরং এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ এবং অপরাধের জন্য দেশগুলো বিচারের মুখোমুখি হতে বাধ্য।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে প্রথম জেনোসাইড কনভেনশন মামলা হয়েছিল সার্বিয়ার বিরুদ্ধে ১৯৯৩ সালে। এ মামলায় সার্বিয়া বসনিয়া হার্জেগোভিনিয়ায় গণহত্যা প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছিল বলে প্রমাণ হয়। কানাডা, বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া, তুরস্ক এবং ফ্রান্স জোর দিয়ে বলেছে যে, রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার গণহত্যা চালিয়েছে। ইসলামী দেশগুলোর সংগঠন ওআইসি তার ৫৭টি সদস্য দেশকে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক আদালতে তোলার কাজে সহায়তা করে।

যেভাবে মামলার তদন্ত : গত বছরের সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মিয়ানমারের বিচারের এখতিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আছে বলে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। চলতি বছরের মার্চে আদালতের প্রধান প্রসিকিউটর ফাতো বেনসুদা রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ৪ জুলাই তদন্ত শুরু করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের অনুমতি চান প্রসিকিউটর ফাতো বেনসুদা। জুলাই মাসে তার তদন্ত দল কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাছ থেকে ব্যাপক তথ্য সংগ্রহ করে।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত সামরিক অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। সামরিক বাহিনীর জ্বালাও-পোড়াও, খুন, ধর্ষণের মুখে ৭ লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। জাতিসংঘ মিয়ানমার সামরিক বাহিনী এই অভিযান গণহত্যার অভিপ্রায়ে পরিচালনা করেছে বলে মন্তব্য করেছে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রোহিঙ্গা গণহত্যা,রোহিঙ্গা,মিয়ানমার,আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close