পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা

  ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯

পশ্চিমবঙ্গেও অশান্তির আঁচ, চলছে বিক্ষোভ

উত্তর-পূর্বের মতোই নাগরিকত্ব আইন বিতর্কে শুক্রবার থেকেই উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ; যা আরো বাড়ছে শনিবারেও। আইন-বিরোধী আন্দোলনের উত্তাপ আরো বেড়েছে। সকাল থেকেই বিক্ষোভকারীরা কোথাও রেললাইন অবরোধ করে ট্রেনে আগুন দিয়েছেন, কোথাও জাতীয় সড়কে সরকারি বাসে আগুন ধরানো হয়েছে। কোথাও জাতীয় সড়কে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করে। কোথাও আবার টায়ার জ্বালিয়ে এবং কুশপুতুল পুড়িয়েও প্রতিবাদ চলছে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কখনও লাঠিচার্জ, কখনও বা টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটাতে হয়েছে পুলিশকে।

এদিকে, প্রথমে পশ্চিমবঙ্গ। তারপর দিল্লি, এরপর একে একে পাঞ্জাব, ছত্তিসগড়, কেরালার পরে মধ্যপ্রদেশ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে এসব বিরোধী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও এখন বলেছেন, নরেন্দ্র মোদি সরকারের নতুন নাগরিকত্ব আইন কোনও ভাবেই তাদের রাজ্যে প্রয়োগ হতে দেবেন না। এমনকি মহারাষ্ট্রে শিবসেনা সরকারের শরিক কংগ্রেসের এক মন্ত্রীও বলেছেন, সে রাজ্যে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন প্রয়োগ করতে দেবেন না।

তৃণমূল, আপ, সিপিএম এবং শেষে কংগ্রেসশাসিত রাজ্যগুলি থেকে একসুরে প্রতিবাদের ডাক উঠায় তড়িঘড়ি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে , এটি একটি কেন্দ্রীয় আইন। তাই ওই আইন সব রাজ্যেই প্রযোজ্য হবে। কোনো রাজ্য সরকারের তা আটকানোর অধিকার নেই।

অন্যদিকে আসাম, ত্রিপুরাসহ উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে তুমুল বিক্ষোভ অব্যাহত। যার জেরে নিজেদের দেশের নাগরিকদের উদ্দেশে ট্রাভেল অ্যাডভাইজ়রি জারি করেছে আমেরিকা এবং ব্রিটেন। ওই অ্যাডভাইজ়রিতে নাগরিকদের সতর্ক থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে। ভারতে কর্মসূত্রে বা ভ্রমণের উদ্দেশে ব্রিটেন থেকে যারা এসেছেন, তাদের উদ্দেশে ওই অ্যাডভাইজ়রিতে বলা হয়েছে, নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ভারতের বেশ কিছু অংশে বিক্ষোভ চলছে।উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে হিংসার খবরও মিলেছে। গুয়াহাটিতে জারি রয়েছে কারফিউ।

আসামে দশ জেলায় ইন্টারনেট বন্ধ। পরিবহনেও তার প্রভাব পড়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির খবর জানতে স্থানীয় রিপোর্টারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশিকা মেনে তাদের কর্মসূচি তৈরি করা উচিত বলে জানানো হয়েছে। মার্কিন অ্যাডভাইজ়রিতেও কার্যত একই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, শুক্রবার দুপুর থেকেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে বলে দাবি করেছে আসাম প্রশাসন। কয়েকটি জায়গায় কারফিউ শিথিলও করা হয়েছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে শুধু আসাম, ত্রিপুরা নয় অন্যান্য রাজ্যেও তার আঁচ পড়েছে।

পশ্চিমবঙ্গে, শনিবারে সকাল থেকেই প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখা গিয়েছে কলকাতা লাগোয়া হাওড়ার কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে। সকাল থেকে জাতীয় সড়ক কার্যত অচল করে দিয়ে চলে অবরোধ। কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে বিক্ষোভকারীদের হটাতে গেলে, ইটের আঘাতে জখম হন হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (সাউথ)। পরে বিক্ষোভকারীদের হটাতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। ফাটানো হয় টিয়ার গ্যাসের শেলও। হাওড়ায় একাধিক বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

শনিবার সকাল থেকেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে প্রতিবাদ দেখা গিয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন অংশে। উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি ও হাসনাবাদ শাখায় ট্রেন অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে অবরোধের জেরে আমডাঙায় ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে বেড়েছে যাত্রী-ভোগান্তি। অন্যদিকে, হাসনাবাদ শাখায় হাড়োয়া রোড, চম্পাপুকুর, সন্ডালিয়া, কাঁকরা, মির্জানগর, লেবুতলাতেও ট্রেন অবরোধ হয়। কাঁকরা-মির্জানগরের অবরোধ যদিও পরে উঠে যায়। তবে অন্য জায়গাগুলিতে লাইনের উপর দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন অবরোধকারীরা।

এদিকে, শিয়ালদা দক্ষিণে লক্ষ্মীকান্তপুর-নিশ্চিন্দাপুরের মাঝেও ট্রেন চলাচল কার্যত ব্যাহত করে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। নিয়মিত অবরোধ চলছে বাংলাদেশ লাগোয়া মুর্শিদাবাদেও। রঘুনাথগঞ্জের একাধিক জায়গায় কয়েক ঘণ্টা ধরে পথ অবরোধ চলছে। সেখানে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয়রা। প্রধানমন্ত্রী মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে স্লোগানও দেওয়া হয়।

যদিও বিক্ষোভকারীদের দাবি, এই বিক্ষোভ সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ বাহিনী। বাস ভাঙচুর করা হয়েছে মুর্শিবাদের সুতিতেও। এছাড়া সাগরদিঘির পোড়াডাঙা, নিমতিতাতে চলছে রেল অবরোধ। বিক্ষোভের জেরে আটকে যায় মালদা-হাওড়া ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস, নবদ্বীপধাম এক্সপ্রেস।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নাগরিকত্ব আইন,ভারত,পশ্চিমবঙ্গ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close