পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা

  ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

এনআরসি : অমিত শাহকে উদ্বেগ জানালেন মমতা

অমিত শাহের সঙ্গে প্রথম বৈঠকেই জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি নিয়ে সরব হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে তিনি বলেছেন, আসামে প্রকৃত নাগরিকদেরও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গে এন আর সি নিয়ে নাকি কথা হয়নি অমিত-মমতা বৈঠকে।

বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টা নাগাদ নর্থ ব্লকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠক শেষে তিনি বলেছেন, অমিত শাহের হাতে একটি চিঠি তুলে দিয়েছেন। তাকে জানিয়েছেন, এন আর সি তালিকা থেকে যে ১৯ লক্ষ মানুষ বাদ পড়েছেন, তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই বাঙালি। এ ছাড়াও আছেন বহু গোর্খা, হিন্দিভাষী ও আসামের স্থানীয় মানুষ। বহু প্রকৃত ভোটারকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এই দিকটা দেখা উচিত। সরকারিভাবে একটি চিঠিও দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার কথা শুনেছেন ও দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন, এমনই দাবি করেছেন মমতা। বাংলার বহু মানুষ এনআরসি নিয়ে চিন্তিত বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে বাংলায় নাগরিকপঞ্জির ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে তার কোনো কথা হয়নি বলে জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছেন, আগেই এনআরসি নিয়ে তিনি তার স্ট্যান্ড জানিয়ে দিয়েছেন। বাংলায় নাগরিকপঞ্জির দরকার নেই।

অমিত শাহের সঙ্গে প্রথম বৈঠকেপশ্চিমবঙ্গের নাম বদল নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি-না প্রশ্ন করা হলে মমতা জানিয়েছেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে তিনি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিষয়টি বিবেচনা করবেন। মমতা আরও বলেছেন, এমনিতেই তার দিল্লিতে কম আসা হয়। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বলেছেন কিন্তু এর আগে অমিত শাহের সঙ্গে মমতার কথা হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন , একসঙ্গে কাজ করতে হয়, রাজ্যের সঙ্গে একাধিক আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে। বাংলা তাই এতো গুরুত্বপূর্ণ। সেই নিয়েই কথা হয়েছে তাদের মধ্যে। এটা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা।

দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর বুধবার প্রথম দিল্লি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এটাও প্রথম বার, বৃহস্পতিবার দুপুরে নর্থ ব্লকে বৈঠকে বসেন দু’জন।

এর আগে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কেন্দ্রের পাঠানো পরামর্শকে রাজ্যের এখতিয়ারে হস্তক্ষেপ বলে অভিযোগ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। মনোমালিন্য চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে মাওবাদী এলাকা থেকে আধা সেনা সরানো বা সারদা মামলায় পুলিশকর্তা রাজীব কুমারকে সিবিআই তলব নিয়ে। আর সম্প্রতি এনআরসি নিয়েও তিক্ততা তুঙ্গে উঠেছে। এই আবহের মধ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়ে দেশ জুড়েই আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মমতার সাক্ষাতের দিন থেকেই বিরোধিতার সুর চড়াচ্ছে সিপিএম ও প্রদেশ কংগ্রেস।

অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি নিয়েও আক্রমণ শানিয়েছে দুই বিরোধীদল। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তারা পুরনো অবস্থানেই অনড়।পশ্চিমবঙ্গে এনআরসির কোনও প্রয়োজন নেই। তাই এই নিয়ে আলোচনাও অপ্রাসঙ্গিক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে অসম এনআরসি নিয়ে কথা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পরই ,মোদীর পর অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকেও পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি নিয়ে মৌনতাকে বিঁধেছেন সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী।

সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, একবছর আগে এনআরসি ইস্যুতে প্রস্তাব গ্রহণ করেছে সিপিআইএম পলিটব্যুরো। কিন্তু মমতার বুঝতে এক বছর সময় লেগে গেল। প্রশ্ন তুলেছেন , রাজ্য বিধানসভায় সর্বসম্মতিক্রমে এনআরসি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। কিন্তু সেকথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অমিত শাহকে কেন বলতে পারলেন না? সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, মমতা নিজের জন্য গিয়েছিলেন। মানুষের জন্য যাননি।

এদিকে দেউচা-পাঁচমি কোল ব্লক প্রকল্প নিয়ে ঘোরতর আপত্তি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছেন, রাজ্যসভার মনোনীত সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত। প্রধানমন্ত্রী মোদীকে দিয়ে দেউচা-পাঁচমির কয়লাখনির উদ্বোধন গুরুতর কিছু সমস্যাকে রাজ্য প্রশাসনের ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা বলেও চিঠিতে চাঁছাছোলা ভাষায় সমালোচনা করেছেন তিনি।

মুখ্যমন্ত্রীর আবেদনে সাড়া দিয়ে কয়লাখনির উদ্বোধনে আসার আগে সবদিক ভালো করে খতিয়ে দেখার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে আবেদন করেছেন স্বপন দাশগুপ্ত। চিঠিতে সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত লিখেছেন, এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী মোদি যদি পুজোর পর কয়লাখনির উদ্বোধন করেন, তাহলে একটা ভুল বার্তা যেতে পারে মানুষের কাছে।

তাঁর মতে, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করার অর্থ, সব প্রক্রিয়া মেনে প্রকল্পের কাজ সবদিক থেকে সম্পূর্ণ হয়েছে, এমনটাই বোঝাবে।সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের সঙ্গে কয়লাখনির পরিবেশ ছাড়পত্র পাওয়া ও আদিবাসীদের পুনর্বাসনের বিষয়টি ধামাচাপাপড়ে যেতে পারে। এছাড়া আদিবাসীদের জমির উপর জমি-মাফিয়াদেরও নজর রয়েছে।তাই সেখানে বেআইনিভাবে টাকার লেনদেনের আশঙ্কাও রয়েছে বলে চিঠিতে জানিয়েছেন রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এনআরসি,মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়,অমিত শাহ,পশ্চিমবঙ্গ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close