পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা
ভারতের কচুয়ায় মন্দিরে পদপিষ্টে ৮ জনের মৃত্যু
জন্মাষ্টমীতে বাংলাদেশ লাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনার কচুয়ার লোকনাথ মন্দিরে জল ঢালতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে সর্বশেষ খবর অনুযায়ী ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন ২৭ জন।ভিড়ের চাপে ভেঙে পড়ে মন্দিরের পাশের দেওয়াল।
দু’বাংলাতেই অত্যন্ত প্রণম্য লোকদেবতা, বাবা লোকনাথের জন্মস্থান কচুয়া। সেখানেই লোকনাথধাম মন্দিরে জন্মাষ্টমীতে জল ঢালতে যান বহু ভক্ত। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই লাইন পড়ে গিয়েছিল। বৃষ্টিতে মাটি ভিজে থাকায় এবং ভিড়ের চাপে ভোর রাতে আচমকাই ভেঙে পড়ে মন্দিরের পাশের একটি দেওয়াল। দেওয়ালটি ভেঙে পড়ে পাশের কয়েকটি দোকানের ওপর। দেওয়ালে চাপা পড়ে যান বহু ভক্ত। আহতদের বসিরহাট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
তাদের মধ্যে ৯ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় তাদের কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে ৪ জনের মৃত্যু হয়, যার মধ্যে ২ জন মহিলা। একজনকে পাঠানো হয়েছে কলকাতার পি জি হাসপাতালে। আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জন্মাষ্টমী উপলক্ষে কচুয়ায় লোকনাথধাম মন্দিরে যাওয়ার পথে পদপিষ্ট হয়ে মৃত ও আহতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মৃতরা হলেন, দত্তপাড়ার বাসিন্দা অপর্ণা সরকার, হাসনাবাদের তরুণ মণ্ডল এবং রাজারহাটের পূর্ণিমা গড়াই আহতদের দেখতে প্রথমে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে মৃতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা, গুরুতর আহতদের পরিবারকে ১ লক্ষ টাকা ও সামান্য আহতদের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এই ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক, অন্যান্যবারের তুলনায় এবার কচুয়ায় বেশি ভিড় হয়েছিল। তার ওপর রাতে প্রচুর বৃষ্টিও হয়েছে। বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতেই অনেকে রাস্তার পাশে অস্থায়ী দোকানগুলিতে আশ্রয় নেন। হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। পাশেই পুকুর ছিল, অনেকে পুকুরে পড়ে যান। পাঁচিল ভেঙে যায়, এরফলে দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরপর এসএসকেএম-এও আহতদের দেখতে যান মুখ্যমন্ত্রীমমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অন্যদিকে, প্রত্যাক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী,জন্মাষ্টমী উপলক্ষে প্রত্যেক বছরই কচুয়াতে ভক্তদের ভিড় হয়। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই লোকনাথের মাথায় জল ঢালতে কচুয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন ভক্তরা। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তদের সমাগম হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত তিনটের সময় অতিরিক্ত ভিড় হয়ে যাওয়ায়, তা সামাল দিতে হিমশিম খায় পুলিশ ও নিরাপত্তারক্ষীরা।
খবর, রাত তিনটের সময় আচমকাই ভিড়ের চাপে ভেঙে যায় মন্দিরের সামনে পুকুরের ধারের পাঁচিল। হুড়মুড়িয়ে অনেকেই জলে পড়ে যান। পদপিষ্ট হয়ে যান বেশ কয়েকজন। খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন উদ্ধারকারীরা। জখমদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে অনেককেই কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, আর জি কর হাসপাতাল এবং এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে মৃত পূর্ণিমা দেবীর মেয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি জানিয়েছেন , দুর্ঘটনার পর মাকে খুঁজতে দেয়নি পুলিশ। তারা পুলিশকে যা জিজ্ঞাসা করেছেন, তার কোনও সঠিক জবাবও পাননি।
পিডিএসও/তাজ