পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা

  ০৮ জুলাই, ২০১৯

চিট ফান্ড মামলায় তৃণমূল এমপি শতাব্দীকে তলব

সারদা চিট ফন্ডে (মাত্রাতিরিক্ত সুদের লোভ দেখিয়ে জনগণের কাছ থেকে লগ্নির মূলধন সংগ্রহ) কয়েক হাজার কোটি রুপির আর্থিক দুর্নীতি মামলায় সিবিআইয়ের পাশাপাশি এবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে তৃণমূলের লোকসভার সদস্য শতাব্দী রায়কে। ১২ জুলাই শতাব্দীকে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে।

জানা যাচ্ছে, সিজিও কমপ্লেক্সে দুপুর ১২টার মধ্যে বীরভূমের দুবারের তৃণমূলের সংসদ সদস্য শতাব্দী রায়কে ডাকা হয়েছে। সারদার একটি সংস্থার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর ছিলেন শতাব্দী। ওই সংস্থার সঙ্গে আর্থিক লেনদেন হয় বলে দাবি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার। কী কারণে আর্থিক লেনদেন হয়েছে, তা জানতেই তলব বলে সূত্রে খবর। সারদা চিট ফান্ড আর্থিক দুর্নীতি মামলায় এর আগেও শতাব্দী রায়কে ডাকা হয়েছে। সম্প্রতি সারদা ও রোজভ্যালি নিয়ে তৎপর হতে দেখা গেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইকে। দুদিন আগে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরা দিয়েছেন চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন এবং প্রাক্তন সিপিএম নেতা লক্ষণ শেঠ। সারদা কান্ডে শুভাপ্রসন্ন জড়িত রয়েছে বলে দাবি তদন্তকারীদের। একটি চ্যানেলে যুক্ত থাকার সুবাধে সারদা সংস্থার সঙ্গে কোনো আর্থিক লেনদেন হয়েছিল কি না, তা নিয়ে প্রায় ৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ চলে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে জুলাইয়ে বীরভূমের সংসদ সদস্য (লোকসভা সদস্য) শতাব্দী রায়কে তলব করেছিল সিবিআই। তার বাড়িতে গিয়ে ৩ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে ছিল তদন্তকারীরা।

অন্যদিকে সারদা এবং রোজভ্যালি চিট ফান্ড মামলায় কয়েক হাজার কোটি রুপির আর্থিক দুর্নীতির ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-মন্ত্রীদের যে আবার জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব শুরু হতে যাচ্ছে, তা স্পষ্ট। সারদা তদন্তে সিবিআইয়ের নজর এবার রাজ্য সচিবালয় নবান্নের দিকে। প্রয়োজনে নবান্নের তিন শীর্ষ কর্তাকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ডাকতে পারে বলে সূত্রের খবর।

সিবিআই সূত্রের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রাজ্যকে বারবার বে-আইনি অর্থলগ্নি সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছিল। সেসব নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে কী পদক্ষেপ করা হয়েছিল, রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের ডেকে সেসবই জানতে চাওয়া হবে। সিবিআইয়ের দাবি, রিজার্ভ ব্যাংক, সেবি, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং সর্বোপরি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের দফতর বারবার চিঠি লিখে রাজ্য সরকারকে ব্যবস্থা নিতে বলেছিল। তার পরও আরো প্রায় তিন বছর জনগণের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা তুলেছিল অর্থলগ্নি সংস্থা, সারদা এবং রোজভ্যালি চিট ফান্ড। তার পরও কেন সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

সিবিআইয়ের খবর, তাদের কাছে জমা পড়া অভিযোগের ভিত্তিতে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চেয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর দফতর। সেই রিপোর্ট দিতে তিন বছর লেগে ছিল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজ্য পুলিশকে সতর্ক করে অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে বলেছিল। পুলিশপ্রধান সিআইডিকে দিয়ে সে ব্যাপারে তদন্ত করান। তদন্তের পর বলা হয়, রাজ্যের হাতে এমন কোনো বিশেষ আইন নেই, ফলে রাজ্য সরকার ব্যবস্থা নিতে অপারগ। একইভাবে সেবি, রিজার্ভ ব্যাংক এবং অর্থমন্ত্রীর অধীন আর্থিক পরিষেবা বিভাগ এবং এসএফআইও বেশ কয়েকটি চিঠি পাঠিয়ে রাজ্যের শীর্ষ আমলাদের কাছে রিপোর্ট চেয়েছিল। সিবিআইয়ের অভিযোগ, কোনো ক্ষেত্রেই অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে তৎপরতা দেখায়নি রাজ্য সরকার।

পিডিএসও/রি.মা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চিট ফান্ড,তৃণমূল এমপি,শতাব্দী রায়,তলব
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close