পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা থেকে

  ১০ মে, ২০১৯

ভোটের প্রচারে কুকথার বন্যা

কুকথার বন্যা বইছে পশ্চিমবঙ্গে শেষ ২ দফার ভোটের প্রচারপর্বে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়—কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলতে নারাজ। আর সেই প্রচারে ভোটারদের মন জয় করতে জাতীয় রাজনীতির বিখ্যাত জনরা এমন সব ভাষা, শব্দ উচ্চারণ করছেন, তা দেখে প্রশ্ন উঠছে, দেয়ালে কার পিঠ ঠেকে গেছে, মোদি না মমতার?

প্রধানমন্ত্রীকে গণতন্ত্রের থাপ্পড় মারার কথা বলেছিলেন মমতা। বৃহস্পতিবার একধাপ এগিয়ে বলেছেন, কান ধরে ওঠবসের কথা! পাল্টা তোপ দেগেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

বলেছেন, আমাকে থাপ্পড়ের গালি দিয়েছেন দিদি। অভিধানের সব গালি হজম করার ক্ষমতা রয়েছে আমার। অসহায় হয়ে থাপ্পড় মারার কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, নিজের কুর্সি ছাড়া কিছুই বোঝেন না দিদি। দিদি বুঝেছেন পায়ের তলার মাটি সরছে।

এরপরই বাঁকুড়া-পুরুলিয়া যেখানে মোদি সভা করেছেন, সেখানে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুমকি দিয়েছেন, কয়লা মাফিয়া-গুন্ডাদের তাকে তার দল চলে প্রমাণ করতে পারলে রাজ্যের ৪২টি লোকসভার আসন থেকে সব দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেবেন। আর তারপরে তিনিও যে চুপ চাপ বসে নেই বোঝাতে গিয়ে বলেছেন, বিজেপি নেতাদের সঙ্গে গরু-কয়লা মাফিয়াদের যোগাযোগের সব তথ্য তার কাছে, পেন ড্রাইভে রয়েছে!

বাঁকুড়ার মাটিতে দাঁড়িয়ে পাল্টা তোপ দেগেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। বলেছেন, অহংকারে দিদি আমার ফোন ধরেননি। এই অহংকারই দিদির পতনের কারণ হবে। অসহায় হয়ে থাপ্পড় মারার কথা বলেছেন। প্রসঙ্গত, ৭ মে জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে বলেছেন, যখন মোদি বাংলায় এসে বলেন, মমতা দিদি তোলাবাজ। তখন মনে হয়, দিই একটা ঠাসিয়ে গণতন্ত্রের থাপ্পড়। এদিনের সভা থেকে তারই জবাব দিয়েছেন মোদি। আরো একবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে তিনি বলেছেন, দেশের প্রধানমন্ত্রীকে মানতে রাজি নন দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়)। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে মানতে চান। দিদি যতই রাগ দেখান, বিজেপি বিরোধিতা করবে। বাংলার সিন্ডিকেট-রাজ প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অভিযোগ, কেন্দ্রের টাকা লুট করে তৃণমূলের সিন্ডিকেট চলছে। ভাইপো আর তোলাবাজদের দিকে নজর দিদির। কয়লা খাদানেও তৃণমূল রাজ চলছে। জগাই মাধাইয়ের সরকার চলছে বাংলায়। রবীন্দ্রনাথের জন্মজয়ন্তীতে বাংলায় শান্তির কামনা করে বক্তব্য শেষ করেছেন মোদি।

স্বাভাবিকভাবেই বাঁকুড়ায় প্রধানমন্ত্রীর তীব্র কটাক্ষের পাল্টা জবাব দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছেন, আগে আরএসএস করতেন। হঠাৎ প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছেন। এখন সবাইকে ভয় দেখাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করেছেন মমতা। প্রশ্ন তুলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে সেন্ট্রাল বাহিনী দিয়ে ভয় দেখাচ্ছেন। কেন গুজরাটে কেন্দ্রীয় বাহিনী যাবে না? ওখানে ভোট লুট করবেন! তেলেঙ্গানা, বিহার, উত্তর প্রদেশে কেন কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠাবেন না! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, জঙ্গলমহলে কিছু বাহিনী ছিল। সেসব তুলে নেওয়া হয়েছে। ভোটের সময় সব বাহিনী পশ্চিমবঙ্গে! কেন! মমতা আরো বলেছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী ভোট দেয় না। সেন্ট্রাল ফোর্সের মারবার অধিকার নেই। লোকাল পুলিশ যেভাবে সেন্ট্রাল পুলিশকে চালায়, সেভাবেই চলবে। ভাববেন না, শিখিয়ে দিলেন আর ওরা গিয়ে মেরে দিয়ে এলো। তারপর কী হবে। ওদের বিরুদ্ধে মামলা হলে কে ওদের রক্ষা করবে! আপনি করবেন! প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধে মমতা আরো বলেছেন, বিজেপির দুর্নীতির বহু প্রমাণ তার কাছে রয়েছে। ভয় দেখিয়ে বাংলায় ভোট করতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদি। মমতার চ্যালেঞ্জ, প্রমাণ করুন কয়লা কেলেঙ্কারিতে তৃণমূলের কেউ জড়িত। প্রমাণ দিতে পারলে ৪২ প্রার্থীকেই তুলে নেব।

এর মধ্যে পুরুলিয়ায় মোদির জনসভায় চরম বিশৃঙ্খলা হয়েছে। কর্মী সমর্থকদের মধ্যে চেয়ার, জলের বোতল ছোড়াছুড়ি, ঠেলাঠেলিতে আহত হয়েছেন কয়েকজন কর্মী সমর্থক। পুলিশকে লক্ষ্য করেও ছোড়া হয় জলের বোতল। বাঁকুড়ার পর পুরুলিয়ায় গেছেন প্রধানমন্ত্রী, প্রচারে। পুরুলিয়াতে গতকাল ছিল ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা। প্রখর রোদের মধ্যেই হাজির ছিলেন কর্মী সমর্থকরা। সভাস্থলে কর্মী সমর্থকদের জন্য একটি ছাউনির ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে বেশ কিছু চেয়ারও রাখা হয়েছিল কর্মী সমর্থকদের বসার জন্য। সভায় উপস্থিত সব কর্মী সমর্থকই ছাউনির নিচে আসার চেষ্টা করেন। তা নিয়েই শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। কর্মীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। সকলে জলের বোতল, চেয়ার ছোড়াছুড়ি করতে থাকেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে জনতা আরো ক্ষেপে যায়। পুলিশকে লক্ষ্য করেও চলতে থাকে ছোড়াছুড়ি। মুহূর্তে পুরুলিয়ায় মোদির সভাস্থলে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা।

অন্যদিকে, রোববার ষষ্ঠ দফায় ১০০ শতাংশ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার দাবিকে নির্বাচন কমিশনের সামনে ধরনার বসেছেন বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খান। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবের সঙ্গে দেখা করে আরো বাহিনী চেয়েছেন বিজেপি প্রার্থী, প্রাক্তন দুঁদে পুলিশ অফিসার ভারতী ঘোষ। মামলার গেরোই পড়ে ভালোভাবে প্রচারই করতে পারেননি বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খান। বৃহস্পতিবার তিনি বলেছেন, ভোট লুটের চেষ্টা চলছে। প্রতি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী বা সেন্ট্রাল ফোর্স দিতে হবে। মানুষ যাতে সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। যতক্ষণ এ ব্যবস্থা না হবে, ততক্ষণ ধরনা চলবে। এদিকে ষষ্ঠ দফা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী ৬১৩ কোম্পানি থেকে বেড়ে হয়েছে ৭১৩ কোম্পানি। তবে এর পরও সব বুথে থাকছে না কেন্দ্রীয় বাহিনী। ৮০ দশমিক ৭৭ শতাংশ বুথে থাকবে বাহিনী। এ ছাড়া ২৭ কোম্পানি ব্যবহার হবে স্ট্রং রুমে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পশ্চিমবঙ্গ,ভোটের প্রচার,কুকথা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close