reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১১ আগস্ট, ২০১৮

যুক্তরাষ্ট্রকে ছেড়ে বিকল্প মিত্র বানানোর ঘোষণা এরদোগানের

তুর্কি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের মাত্রাতিরিক্ত শুল্কারোপের বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোগান নতুন মিত্র খুঁজে নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে তিনি বলেন, ওয়াশিংটন যদি একলা চলার এবং সম্মান না দেখানোর পথ ত্যাগ না করে, তাহলে তার দেশ নতুন বন্ধু ও মিত্র খুঁজে নেবে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার তুরস্কের ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর দ্বিগুণ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়ার পর এরদোগান এ হুশিয়ারি দেন।

শুল্ক বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্তের পর থেকে ডলারের বিপরীতে তুর্কি মুদ্রা লিরার ১৮ শতাংশ দরপতন হয়েছে। তুরস্ক একটি অর্থনৈতিক সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

এরদোগান নিউ ইয়র্ক টাইমসে লেখেন, যুক্তরাষ্ট্রকে তুরস্কের সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে।

এদিকে আঙ্কারায় এক জনসভায় দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, ‘ওদের যদি ডলার থাকে, তাহলে আমাদের আছে আমাদের জনগণ, আমাদের অধিকার এবং আমাদের আছেন আল্লাহ।’

ট্রাম্প শুল্ক বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করে টুইট করার কিছু পরই এরদোগান ফোনে কথা বলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে।

লিরার দর পতনের প্রেক্ষাপটে তুরস্কের ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রকরা এ নিয়ে একটি জরুরি বৈঠক করতে যাচ্ছেন- এমন এক খবর বের হলেও পরে নিয়ন্ত্রকরা তা অস্বীকার করেন।

এরদোয়ান ওয়াশিংটনের ওপর কয়েকটি কারণে ক্ষুব্ধ। কারণ তুরস্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত কুর্দি যোদ্ধাদের অস্ত্র দিচ্ছে আমেরিকানরা। এছাড়া নির্বাসিত ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনকেও তারা বিচারের জন্য তুরস্কের হাতে তুলে দিচ্ছে না।

এছাড়া আঙ্কারা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করে রাশিয়ার কাছ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা কেনার পরিকল্পনা করছে, তিক্ত সম্পর্কের সেটাও একটি বড় কারণ।

এছাড়া আঙ্কারার অভিযোগ, ফেতুল্লাহ গুলেন পেনসিলভানিয়ায় তার বাড়িতে বসে এরদোগানের বিরুদ্ধে এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানের কলকাঠি নেড়েছিলেন।

এরদোগান আরও বলেন, সন্ত্রাসের অভিযোগে তুরস্কে বিচারাধীন মার্কিন ধর্মযাজক এ্যান্ডু ব্রানসনের ব্যাপারে বিচারের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার অপেক্ষা না করেই ওয়াশিংটন পাল্টা ব্যবস্থা নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি করেছে।

ব্রানসনের বিরুদ্ধে তুরস্কের অভিযোগ, তার সঙ্গে কুর্দি ওয়ার্কার্স পার্টি এবং ফেতুল্লা গুলেনের সম্পর্ক আছে। আমেরিকার শক্তিশালী ইভানজেলিকাল খ্রিস্টান লবি এ নিয়ে হৈ চৈ শুরু করার পর তুরস্কের স্বরাষ্ট্র এবং আইনমন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ওয়াশিংটন।

তুরস্কের মন্ত্রীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কিছুদিন পরেই ট্রাম্প এই শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দিলেন।

এছাড়া আরও কারণ আছে। তুরস্ক তাদের প্রায় অর্ধেক তেল আমদানি করে ইরান থেকে। সে কারণে ইরানের ওপর পুনঃআরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুরস্কের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে মনে করা হয়।

তুরস্কের মাটিতে আছে ন্যাটো সামরিক জোটের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইনজারলিক বিমান ঘাঁটি। ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে আক্রমণের জন্য ন্যাটো এ ঘাঁটিটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে।

এ ঘাঁটি বন্ধ করে দেবার জন্য তুরস্কে অভ্যন্তরীণ চাপ আছে। তুরস্কের কিছু সরকার সমর্থক আইনজীবীর অভিযোগ, ইনজারলিকে মোতায়েন কিছু আমেরিকান সেনা কর্মকর্তা এরদোয়ান-বিরোধী অভ্যুত্থানের পেছনে ভূমিকা রেখেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে আদালতের কাছে গ্রেফতারি পরোয়ানাও চেয়েছিলেন তারা।

গত সপ্তাহে এক অভিযোগে এই আইনজীবীরা বিচারকের প্রতি ইনজারলিক থেকে সব বিমান উড্ডয়ন বন্ধ করে দেয়ার আবেদন জানান।

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
যুক্তরাষ্ট্র,মিত্র,এরদোগান
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close