জাপানের আধ্যাত্মিক গুরুর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
জাপানে ১৯৯৫ সালে পাতাল রেলে সারিন গ্যাস হামলাকারী ‘ওম শিনরিকিও’ আধ্যাত্মিক গোষ্ঠীর নেতাসহ ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। রাজধানী টোকিওর পাতাল রেলে চলানো ওই হামলা দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা বলে বিবেচিত হয়। হামলায় ১৩ জন নিহত এবং হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছিল।
স্থানীয় সময় শুক্রবার টোকিওর একটি কারাগারে ‘ওম শিনরিকিও’ নেতা শোকো আসাহারা ও তার ছয় অনুসারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় বলে জানায় কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।
যদিও মৃতুদণ্ড কার্যকরের বিষয়ে আগাম কোনো নোটিস দেওয়া হয়নি। শুক্রবার দেশটির বিচার মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। দলের আর ছয় সদস্যের মৃত্যুদন্ড শিগগিরই কার্যকর করা হবে বলেও জানানো হয়। এ বছর জানুয়ারিতে এ মামলার যাবতীয় বিচার কার্যক্রম শেষ হয়। শোকো আসাহারা ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে আরো বেশ কয়েকটি হত্যাকান্ডের অভিযোগ আছে।
১৯৯৪ সালের সারিন গ্যাস হামলার জন্যও তাদের দায়ী করা হয়। ওই হামলায় ছয়জন নিহত এবং ছয় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছিল। ১৯৯৫ সালের ২০ মার্চ আধ্যাত্মিক গোষ্ঠীটির সদস্যরা টোকিওর পাতাল রেলের লাইনে সারিন গ্যাস ভর্তি কয়েকটি ব্যাগ ফেলে রেখে যায়, যেগুলোতে ফুটো করা ছিল। ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজন কিছু বুঝে উঠার আগেই অসুস্থ হয়ে পড়তে শুরু করে। এ ঘটনায় ১৩ জন নিহত হওয়া ছাড়াও অনেকে অন্ধ হয়ে যায়, কেউ কেউ চলাচলের শক্তি হারিয়ে ফেলে। অপরাধের নিম্নহার ও সুশৃঙ্খল সমাজব্যবস্থার জন্য গর্বিত জাপানের জনগণ এ হামলা হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিল।
পরবর্তী কয়েক মাসে দলটি আরো কয়েকটি রেলস্টেশনে রাসায়নিক হামলার চেষ্টা করে। ‘ওম শিনরিকিও’র ১৯ সদস্য এ হামলা চালানোর অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হন।তাদের মধ্যে নেতা আসাহারাসহ ১৩ জন মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হন। বাকি ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ‘ওম শিনরিকিও’র অর্থ ‘চূড়ান্ত সত্য’। গত শতকের ৮০’র দশকে আধ্যাত্মিক গোষ্ঠী হিসেবে ‘ওম শিনরিকিও’র যাত্রা শুরু হয়। এর অনুসারীরা হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের মিশেলে নতুন এক বিশ্বাসের দীক্ষা নেয়।
আঞ্চলিক সংগঠন হিসেবে ১৯৮৯ সালে জাপান ‘ওম শিনরিকিও’র স্বীকৃতি দিয়েছিল। এক সময় বিশ্বজুড়ে আসাহারার হাজার হাজার অনুসারী ছিল। ১৯৯৫ সালের হামলার পর সংগঠনটির সদস্যরা আত্মগোপনে চলে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রসহ আরো অনেক দেশে একে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে। এখনো হাজার হাজার মানুষ ‘ওম শিনরিকিও’ বিশ্বাসের অনুসরণ করে বলে ধারণা করা হয়।
পিডিএসও/তাজ