reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৪ মার্চ, ২০১৮

ফ্রান্সে জিম্মি সঙ্কটের নাটকীয় অবসান

ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এক সুপারমার্কেটে জিম্মি সঙ্কটের নাটকীয় অবসান ঘটেছে পুলিশের গুলিতে হামলাকারীর মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে।

বিবিসি জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে কারকাসোন ও পাশের থ্রেব শহরে মরোক্কান বংশোদ্ভূত ওই হামলাকারীর গুলিতে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন।

ফরাসি এলিট পুলিশের এক সদস্য একজন জিম্মির বিনিময়ে নিজেকে হামলাকারীর হাতে তুলে দেওয়ার পর ঝটিকা অভিযানে নিহত হয় হামলাকারী।

রেদোয়ান লাকদিম নামের ২৬ বছর বয়সী ওই তরুণে আগ্নেয়াস্ত্রের পাশাপাশি ছুরি আর গ্রেনেড সঙ্গে নিয়ে এই হামলায় নামে।

সুপারমার্কেটে থাকা কর্মী ও ক্রেতাদের জিম্মি করে সে ২০১৫ সালের প্যারিস হামলার অন্যতম সন্দেহভাজন সালাহ আব্দেস্লামের মুক্তি দাবি করে। পরে এ হামলার দায় স্বীকার করে মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গিদল আইএস।

ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরার কুলুম্ব বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, হামলাকারী ওই তরুণ ছোটখাটো অপরাধের জন্য কর্তৃপক্ষের নজরে থাকলেও কখনও তাকে জঙ্গি বলে সন্দেহ করা হয়নি। এ হামলায় সে একাই অংশ নেয় বলে পুলিশের ধারণা।

২০১৫ সালে আইএসএর হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়ার পর থেকে ফ্রান্সে এ পর্যন্ত ২৪০ জনের প্রাণ গেছে বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলায়। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ শুক্রবারের ঘটনাটিকেও জঙ্গি হামলা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

ঘটনা যেভাবে ঘটলো

সাড়ে তিন ঘণ্টার রূদ্ধশ্বাস এই ঘটনাপ্রবাহের সূচনা হয় বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ প্রাচীন পর্যটন শজর কারকাসোনে। যেখানে ওই হামলাকারী এক যাত্রীর মাথায় গুলি করে হত্যা এবং চালককে আহত করে একটি গাড়ি ছিনতাই করে।

কাছেই জগিং করতে থাকা এক পুলিশ সদস্যদের দিকেও গুলি করে ওই হামলাকারী। সেখানে এক পুলিশ আহত হন।

ওই গাড়ি নিয়ে আট কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে হামলাকারী উপস্থিত হন পাশের থ্রেব শহরের সুপার ইউ নামের একটি সুপারমার্কেটে।

প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে থ্রেব শহরের মেয়র এরিক মেনাসি স্থানীয় একটি টেলিভিশনকে বলেন, আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিয়ে হামলাকারী ওই সুপারমার্কেটে ঢোকে এবং ভেতরে থাকা ক্রেতা ও কর্মীদের জিম্মি করে।

চিৎকার করে সে নিজেকে আইএস-এর যোদ্ধা বলে দাবি করে এবং সবাইকে হত্যা করার হুমকি দেয়। সেখানে অন্তত দুইজন তার হাতে খুন হয়।

এদিকে ফ্রান্সের পুলিশ ও বিশেষ বাহিনী জোনদার্মের কয়েকশ সদস্য ওই সুপার মার্কেট ঘিরে ফেলে। আকাশে টহল দিতে থাকে হেলিকপ্টার।

নাটকীয় মোড়

সুপার ইউ থেকে বেঁচে ফিরে আসা ক্যারল নামের এক নারী স্থানীয় একটি রেডিওকে বলেছেন, হামলাকারী তরুণ ভেতরে ঢুকে গুলি শুরু করার পর তিনিসহ দশজন সুপারমার্কেটের একটি কোল্ড স্টোরেজে ঢুকে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করেন।

ঘণ্টাখানেক সেখানে থাকার সময় আরও গুলির শব্দ পান ক্যারল। পরে তারা পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতে সক্ষম হন।

ওই সুপারমার্কেটের এক কর্মী রয়টার্সকে বলেছেন, কাজের মধ্যে গুলির শব্দ শুনে তিনি কী হয়েছে দেখতে এগিয়ে গিয়েছিলেন। তখনই তিনি অস্ত্র হাতে হামলাকারীকে দেখতে পান।

“সে আবার গুলি শুরু করলে আমি দৌড় দিই। শুনতে পাই, সে আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিচ্ছে এবং ইসলামিক স্টেটের কথা বলছে।”

নিজে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সুপার মার্কেট থেকে জনা বিশেক ক্রেতাকে বের করে নিতে পেরেছিলেন বলে জানিয়েছেন ফ্রাঁসোয়া নামের ওই কর্মী।

ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বিএফএম টিভির খবরে বলা হয়, হামলাকারী ওই তরুণ ২০১৫ সালের প্যারিস হামলার সন্দেহভাজন সালাহ আব্দেস্লামের মুক্তি দাবি করে। প্যারিসে ওই হামলায় ১৩০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে বিবিসি লিখেছে, সঙ্কটের এক পর্যায়ে জোনদার্ম বাহিনীর ৪৫ বছর বয়সী একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল একজন জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে নিজেকে হামলাকারীর হাতে তুলে দেন। নিজের ফোন তিনি ফেলে রাখেন কল চালু অবস্থায়, যাতে বাইরে থাকা সহকর্মীরা পরিস্থিতি বুঝতে পারেন।

ওই ফোন লাইনে গুলির শব্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নিতে ভেতরে ঢুকে পড়েন। ওই সময়ই পুলিশের গুলিতে হামলাকারীর মৃত্যু হয়।

ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জোনদার্ম বাহিনীর ওই সদস্যকে একজন ‘নায়ক’ হিসেবে বর্ণনা করে জানান, তিনি নিজে এখন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ফ্রান্স,জিম্মি সঙ্কট,অবসান
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist