reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৯ মার্চ, ২০১৮

‘আমি গরিব কেউ নই, অনেক ধনী মানুষ’

যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন চ্যানেল সিবিএসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সৌদি আরবে চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের পক্ষে ব্যাপক সাফাই গেয়েছেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। তবে সাক্ষাৎকারে তার সম্পদের বিষয়ে উপস্থাপকের প্রশ্নে পিছুটান দেন তিনি। এ সময় তিনি নিজেকে অনেক ধনী মানুষ বলে দাবি করেন।

উপস্থাপক সালমানকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি তো দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছেন, কিন্তু আপনার নিজের সম্পদ নিয়েও তো অনেক প্রশ্ন রয়েছে। সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ফ্রান্স উপকূলে আপনি অর্ধবিলিয়ন ডলার খরচ করে একটি বিলাসবহুল ইয়োট কিনেছেন।’

হুট করে এমন প্রশ্নে বিপাকে পড়ে যান সৌদি যুবরাজ। সরাসরি জবাব না দিয়ে পিছুটান দেন তিনি। বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আমি অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পছন্দ করি না। কোনো পত্রিকা যদি এ ব্যাপারে কিছু বলতে চায় এটা তাদের ব্যাপার। আর ব্যক্তিগত খরচের বিষয়ে বলব, আমি গরিব কেউ নই, আমি অনেক ধনী মানুষ। আমি গান্ধী কিংবা ম্যান্ডেলা নই। সৌদি আরবের জন্মেরও আগে থেকে থাকা একটি রাজপরিবারের সদস্য আমি। আমাদের বিশাল জায়গাজমি আছে। এখন থেকে ১০-২০ বছর আগে আমার ব্যক্তিগত জীবন যেমন ছিল, এখনও তেমনই আছে। তবে আমার দৈনন্দিন ব্যয়ের একটা বড় অংশ আমি দান করি। সম্পদের ৫১ শতাংশ ব্যয় করি মানুষের জন্য, আর বাকি ৪৯ শতাংশ ব্যয় করি আমার জন্য।’

যুবরাজ জানান, সম্প্রতি রিয়াদের রিটজ কার্লটন হোটেলে রাজপরিবারে সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী-আমলা-ব্যবসায়ীদের আটক রেখে তাদের কাছ থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি আদায় করা হয়েছে।

সৌদি নারীদের অবাধ স্বাধীনতা দেয়ার ব্যাপারেও অনেক কথা বলেছেন বিন সালমান। এছাড়া সৌদি আরবের পররাষ্ট্রনীতি, যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা রাষ্ট্রীয় নানা নিয়মের পরিবর্তন, ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক এবং পরমাণু ইস্যুতে কথা বলেন যুবরাজ।

আদৌ কি সৌদি আরবের নারীরা পুরুষের সমান সম্মান পাবেন? – এই প্রশ্নের উত্তরে সালমান জানান- সবাই সৃষ্টিকর্তার তৈরি মানুষ, কিন্তু স্বার্থান্বেষী কিছু মহল নারী-পুরুষে ভেদাভেদ টেনেছে। তিনি আরও বলেন, ইসলাম ধর্মেই স্পষ্টভাবে নারীর পোশাক কি হবে, সেই বর্ণনা দেয়া আছে। এ জন্য সমাজের আলাদা নীতিমালা প্রণয়নের প্রয়োজন নেই।

তার সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো-

নোরাহ ও’ডনেল : অনেকের ধারণা, সৌদিতে যে ধরনের ইসলাম অনুশীলন করা হয় তা খুবই কঠোর এবং অসহনশীল। এটা কি সত্যি?

মোহাম্মদ বিন সালমান : ১৯৭৯ সালের পর থেকে এটিই আসলে সত্য। আমরা এর ভুক্তভোগী। বিশেষ করে আমার প্রজন্মকে সবচেয়ে বেশি এ বিষয়টি কারণে ভুগতে হয়েছে।

(১৯৭৯ সালে ইরানে আয়াতুল্লাহ খামেনির নেতৃত্বে ইসলামি বিপ্লব হয়। এরপর দেশটিতে ধর্মীয় শাসন জারি করা হয়। একই বছর কাবা শরিফ অবরোধ করে সৌদি আরবের ধর্মীয় কট্টরপন্থীরা। তাদের শান্ত রাখতে এরপর সৌদি আরবকে ধীরে ধীরে কট্টরবাদী ধর্মীয় চর্চার দিকে নিয়ে যায়। এবং দৈনন্দিন জীবনে নারীদের আলাদা করে ফেলা হয়। যুবরাজ বিন সালমান মূলত এ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।)

প্রশ্ন : গত ৪০ বছরের সৌদি আরব যেমন ছিল, এটাই কি প্রকৃত সৌদি?

মোহাম্মদ বিন সালমান : অবশ্যই না। এটা প্রকৃত সৌদি আরব নয়। দর্শকদের (টিভি দর্শকদের উদ্দেশে) প্রতি আমার অনুরোধ তারা যেন প্রকৃত সৌদি আরবকে দেখতে নিজেদের স্মার্টফোনের একটু সহায়তা নেন। তারা গুগল করলেই জানতে পারবেন ৬০ বা ৭০ দশকের সৌদি আরব কেমন ছিল? ওই সময়কার কিছু ছবি দেখলে সহজেই বুঝতে পারবে প্রকৃত সৌদি আরব কেমন।

প্রশ্ন : তাহলে ১৯৭৯ এর আগের সৌদি কেমন ছিল?

মোহাম্মদ বিন সালমান : তখন আমরা উপসাগরীয় অন্যান্য দেশেগুলোর মতো খুবই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতাম। নারীরা গাড়ি চালাতে পারত। দেশজুড়ে সিনেমা হল ছিল। নারীরা সবখানেই কাজ করত। ৭৯ সালের ঘটনার আগ পর্যন্ত আমরা বিশ্বের অন্যান্য যে কোনো দেশের মতোই স্বাভাবিক মানুষ ছিলাম।

প্রশ্ন : নারীরা কি পুরুষদের সমান?

মোহাম্মদ বিন সালমান : অবশ্যই। আমরা উভয়েই আদম সন্তান এবং আমাদের মধ্যে মানুষ হিসেবে কোনো পার্থক্য নেই।

প্রশ্ন : আপনি বলেছিলেন যে, আপনি ‘সৌদি আরবকে সেই মডারেট ইসলামে ফিরিয়ে নিতে চান যেখানে এটি ছিল।’ এটা দিয়ে আসলে কী বুঝাতে চেয়েছেন?

মোহাম্মদ বিন সালমান : আমাদের এখানে উগ্রপন্থীরা আছে যারা নারী-পুরুষদের মেলামেশায় বাধা দেয়। তারা আসলে দুইজন নারী-পুরুষের নির্জনে মিলিত হওয়া আর নারী-পুরুষরা কর্মক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করার বিষয় দুটিকে আলাদা করতে পারে না। (তাদের) এ রকম অনেক চিন্তা মহানবী (স.)ও খলিফাদের সময়ের জীবনধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ওই জীবনাচরণই (ইসলামের) সত্যিকারের মডেল।

(যুবরাজ বিন সালমান দায়িত্ব নেয়ার পর সৌদি আরবের ‘ধর্মীয় পুলিশ’ এর ক্ষমতা কমিয়েছেন। এই পুলিশরা জনপরিসরে মুখ ঢেকে না চললে নারীদের গ্রেফতার করার ক্ষমতা রাখত)।

মোহাম্মদ বিন সালমান : আইন খুবই স্পষ্ট, এবং তা শরিয়া আইনেই আছে যে, নারীরা পরুষের মতোই শালীন কাপড় পরবে। এর মানে এটা নয়, শুধুই কালো রঙের আবায়া বা কালো হিজাব পরতে হবে। কোন ধরনের শালীন ও সম্মানজনক কাপড় সে পরবে এটা নারীদের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

বিন সালমানের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সিবিএস এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘তার কথাগুলো খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এখন পর্যন্ত সে দেশের ধর্মীয় নেতারা চুপ করে আছেন, এবং এই তরুণ যুবরাজের কাছে আনুগত্যের শপথ করেছেন।’

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
গরীব,ধনী,যুবরাজ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist