রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থ জোগাড় কঠিন হবে : জাতিসংঘ
কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বর্তমান লোকসংখ্যা ১১ লাখেরও বেশি। আর এত লোকের খাদ্য, চিকিৎসা এবং বাসস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সিপ্পো বলেছেন, যে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালু ছিল সেটি ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়েছে। চলতি মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত নতুন যৌথ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। আর এজন্য নতুন করে অর্থ জোগাড় করা চ্যালেঞ্জিং হবে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য আগামী ১০ মাসে ৯৫০ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় ৮০০০ কোটি টাকার প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে থেকে এই অর্থ জোগাড়ের আশায় জাতিসংঘ চলতি সপ্তাহেই জেনেভাতে একটি বৈঠক ডেকেছে। কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন অর্থ সহায়তার মধ্যে স্থানীয় বাংলাদেশিদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাদের জীবিকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রয়োজনীয় ৮০০০ কোটি টাকার ২৫% খরচ হবে স্থানীয় বাংলাদেশিদের জন্য, যাদের বসবাস শরণার্থী ক্যাম্পের আশপাশে। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন, রোহিঙ্গাদের জন্য প্রায় ৩.৫ লাখ স্থানীয় বাংলাদেশির জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসনবিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম বলেছেন, রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় বাংলাদেশীদের জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও অনুধাবন করেছে।
গত বছর আগস্টের শেষ দিকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢল শুরু হলে সেসময় ছয় মাসের জন্য তাদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিশ্বের বিভিন্ন সংগঠন। খাদ্যের পাশাপাশি অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়ার সে মেয়াদ এই ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়েছে। এখন নতুন করে আরও অর্থ এবং সহযোগিতা প্রয়োজন।
কর্মকর্তারা জানান, ৯৫০ মিলিয়ন ডলারের একটি বড় অংশ ব্যয় হবে খাদ্য সহায়তার জন্য। বাকি অংশ স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ আরও কয়েকটি খাতে ব্যয় করা হবে। বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলছেন, রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশি মিলিয়ে প্রায় ১৩ লাখ মানুষের সহায়তার জন্য তারা এই হিসেবে করেছেন।
রোহিঙ্গা সংকটের ছয় মাস পার হলেও এটি সমাধানের আশু কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য অর্থ দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আগ্রহ কতদিন টিকে থাকবে? এমন প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘ কর্মকর্তা মিয়া সিপ্পো বলেন, আমার মনে হয় জাতিসংঘ নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে তাদের ভূমিকা রেখে আসছে। বাংলাদেশ সরকারও এ সংকটের বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরে এনেছে। বিষয়টি আমাদের ধরে রাখতে হবে। যাতে বিশ্ব সম্প্রদায়ে ভুলে না যায় যে কক্সবাজারে কী ঘটছে।
গত আগস্ট মাসে রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল যখন শুরু হয়েছিল তখন বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে যেসব ত্রাণ আসছিল সেটি এখন অনেকটাই কমে এসেছে। কর্মকর্তারা বলছেন, সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হচ্ছে খাদ্য এবং চিকিৎসা সাহায্য। রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘায়িত হবে বলেই অনেকে আশংকা প্রকাশ করছে।
পিডিএসও/হেলাল