ইসমাইল রিফাত, শিক্ষার্থী (বেরোবি)

  ২৯ এপ্রিল, ২০২০

সচেতনতাই পারে একসাথে বাঁচাতে

মরণঘাতি করোনাভাইরাস থমকে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে। থেমে গেছে সব ব্যস্ততা। নীরবতায় কাটছে পুরো বিশ্ব। বাংলাদেশ এর বাহিরে নয়। বাংলাদেশকেও ছাড় দিচ্ছেনা এই মরণঘাতি করোনাভাইরাস। করোনা নামক মহামারি বাংলাদেশকেও ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো করোনা মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে। আমেরিকা থেকে শুরু করে ইউরোপের দেশগুলোতে থামছেই না লাশের মিছিল। যেন পুরো বিশ্বকে গিলে খাচ্ছে এ অদৃশ্য শত্রু করোনাভাইরাস। অচেনা এক ভয়াবহতায় শিকার পুরো বিশ্বের মানুষ। যার শুরুটা চীনের উহান নামক এলাকা থেকে। যা এখন অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে এই ভাইরাস মোকাবেলায়। তারা মরণঘাতি করোনাকে হার মানিয়েছে নিজেদের শক্তি দিয়ে। রাতারাতি হাসপাতাল বানিয়ে চিকিৎসা দিতে সক্ষমতা অর্জন করে দেশটি। আক্রান্ত মানুষগুলোকে সুস্থতার দিকে নিয়ে আসতে কঠিন বেগ পোহাতে হয়েছে তাদের। তবে এ সফলতার পিছনে রয়েছে চিকিৎসক, নার্সদের দিনরাত সমান পরিশ্রম। এক্ষেত্রে ভালোবাসা আর সম্মান সাথে সাথে পেয়েছে দেশটির সকলশ্রেণির মানুষের সমর্থন। সকলের ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতায় এমন কঠিন পরিস্থিতিতেকে কাটিয়ে তুলতে পেরেছে ।

দেশে করোনা হালচাল

তবে ভিন্ন দৃশ্য বাংলাদেশে । আমাদের দেশে এই করোনা মোকাবেলায় সব চেয়ে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছি আমি, আমরা । সরকার যখন লকডাউন দিয়ে সব কিছুর পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার চেষ্ঠা করছে তখন আমরা সহস্রাধিক লোক সমাগমে গ্রাম বিভেদে মারামারি করছি, জনসমুদ্রে জানাজা নামায পড়ছি, বস্তা বস্তা চাল চুরি করছি, তেল চুরি করছি, সব কিছুর দাম দিগুণ করছি । সব কিছুর বেগতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে করোনা ভাইরাস যতটা মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করেছে তার চেয়ে অনেক বেশি এ দেশের মানুষকে বিপর্যস্ত করেছে এসব কার্যক্রম ।

অন্যদিকে অনেক বিত্তবান মানুষেরা সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে দিয়েছে দুস্থ, অসহায়দের দিকে । এ ক্রান্তিকাল মোকাবেলা সহজ করে দিয়েছে দেশের নামি দামি কোম্পানি গুলো তারা দেশের মানুষের সহযোগিতায় আলাদা করে হাসপাতাল তৈরীতে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে । দেশের মানুষকে সকল তথ্য প্রকাশে জীবনকে বাজি রাখছে গণমাধ্যমকর্মীরা । পুলিশ প্রশাসন দেশের এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন । তাদের অবদান আজকের এই বাংলাদেশের মানুষ ভাষায় বর্ণনা করতে পারবে বলেও মনে হয় না । যেখানে করোনায় মৃত্যু ব্যক্তির পরিবার পরিজনের দেখা মিলছে না, কেউবা রেখে যাচ্ছে মরদেহ আবার কেউতো করোনা সন্দেহের জেরে মাকে রেখে আসছে গভীর বনে । এমন ভয়াবহতায় সবচেয়ে পরম বন্ধুর ভূমিকায় পুলিশ প্রসাশন । আবার দেশ রক্ষায় অসীম চেষ্টা করে যাচ্ছে সেনাবহিনী থেকেও । মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত আহবানে গ্রাম পুলিশ থেকে শুরু করে উর্দ্ধতন পর্যায়ে সজাগ ভূমিকা রাখছে ।

যেখানে স্পর্শহীনভাবে, দুরত্বে থেকেই এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বে সময় যাচ্ছে । মূলত এটি হচ্ছে এই ভাইরাস মোকাবেলায় নিজেকে বাঁচার অন্যতম অস্ত্র । কিন্তু উল্টো দৃশ্য বাংলাদেশে । আমরা নিজেরা ত্রাণের জন্য বিক্ষোভ মিছিল করছি , হুমড়ি খেয়ে সরকারি চাল নিচ্ছি গা উপর গা দিয়ে , ভীর করে ত্রাণ নেয়ার মত ঘটনা ঘটছে হরহামেশে । যদি নিজে বেঁচে থাকার জন্য ত্রাণ বা সরকারি প্রণোদনার জন্য ভীড় হয়েই থাকে তাহলে বড় ক্ষতির দিকে যাবে বাংলাদেশের এসব মানুষ । হয়ত সরকারি ত্রাণে বা প্রণোদনা নিশ্চিত পেয়ে গেলেও মানুষগুলো বাঁচবে কয়েক দিন বা মাস কিন্ত এসব ভীরের বা অসচেতনতার কারণে করোনায় আক্রান্ত হলে এই জীবন বাঁচানো যাবে কিনা সেটা এখন পর্যন্ত সন্দিহান । যদি জীবন বাঁচাতে গিয়ে মরণের কারণ হয়ে যায় সেটি হবে সব চেয়ে বড় ভয়ংকর ।

মধ্যবিত্তরা বিপাকে এদিকে বিপাকে মধ্যবিত্ত মানুষেরা । যারা সমাজের চোখে কারো সহযোগিতা নেয়ার পর্যায়ে নয় । তাদের সব চেয়ে বড় বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে লজ্জ্বা । হয়ত সমাজ মনে করছে তাদের সহয়তার প্রয়োজন নেই কিন্ত তারা আজ বড় বিপদে । বিশেষ করে কাপড় বিক্রেতা, কসমেটিক্স বিক্রেতা, কার বা মাইক্রো এমন পরিবহনের চালকরা, স্কুল কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক মুদি ব্যবসায়ীরা , চায়ের দোকানী, শহরে ঘুরে বেড়ানো ঝাল মুড়ি বিক্রেতা, বাদাম বিক্রেতা , আবার যারা টেউশনি বা কোচিং ক্লাস নিয়ে করে নিজের জীবিকা নির্বাহ করতো। সেদিন এক বড় ভাইয়ের মুখে শুনলাম পরিচিত এক কসমেটিকস পণ্য বিক্রেতা ফোন দিয়ে বলছে, ভাবির জন্য কিছু লাগবে কি? খুব অভাবে আছি ভাই! দোকার বন্ধ থাকায় বেচা কেনাও নাই হাত ফাকা হয়ে গেছে । কিছু লাগলে বলিয়েন । ভাবুন! কতটা নিরুপায় হয়ে গেলে এভাবে ফোন দিয়ে পণ্য কেনার জন্য বলতে পারে । বিপাকে পড়েছে এমন শ্রেণির মানুষগুলো । জানা নাই সরকারিভাবে এদের ব্যবস্থা কি হতে পারে?

এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক আদৌ বের হবে কিনা জানা নেই কারো । এর আগে অনেক ভাইরাসের প্রতিশোধক আবিষ্কারে গেছে অনেক সময় । তবে কি এই দেশ গুলো থেমে থাকবে এভাবে যতদিন না প্রতিষেধক আবিষ্কার হচ্ছে? আর কয় দিনেই বা এভাবে লকডাউন থাকার পরিস্থিতে থাকতে পারবে দেশের মানুষ ? তাহলে সুরাহা কি নেই? নেই কি বিকল্প উপায়? আর কবেই যে এর সমাধান পাবে দেশের মানুষ ?

এসব হরেক প্রশ্ন সকলের মস্তিস্কে ঘুরপাক খাচ্ছে । এসব উত্তরে চেয়ে এখন সব চেয়্র বেশি জরুরি নিজেদের সচেতনতা। সংক্রমণ এড়াতে প্রয়োজন ঘরে থাকা। এই সময়ে সারাজীবন বেঁচে থাকার বড় উপায় হচ্ছে ঘরে থাকা।

আসুন তিন বেলার খাবারটি না খেয়ে দু বেলা খাই অথবা দুই বেলার খাবারটি তিন বেলা করে খাই। অবশিষ্ট এক বেলার খাবারটি পাশের দুস্থ ভাইটির জন্য রেখে দেই । এভাবে দেশের সকল স্তরের মানুষের ভিতরে এমন ইচ্ছেই পেতে পারি সুস্থ দেশ । তবুও বলতে হবে বেঁচে থাকার জন্য সচেতনতার খুব জরুরী । সবার পরিচ্ছন্ন মানসিকতা এই মুহুর্তে খুব বেশি প্রয়োজন । বিশুদ্ধ চিন্তায় বেঁচে যেতে পারে দেশের মানুষ । মানুষ বাঁচলে দেশ বাচঁবে । আসুন সকলেই এক সাথে বাঁচি ।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আমার আমি,সচেতনতা,করোনা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close