অলোক আচার্য, সংবাদকর্মী

  ২৬ আগস্ট, ২০১৯

স্মৃতির মানসপটে ’তন্ময় ছাত্রাবাস’

‘তন্ময় ছাত্রাবাস’ নামটি আমার কাছে কেবলমাত্র একটি নামই নয় বরং এটি একটি আবেগ। যে আবেগ শুরু হয়েছিল আজ থেকে পনেরো বছর আগে। আমার স্বপ্নের জীবনের একটি অংশ কেটেছে এই স্থানে। আমি তখন ইন্টারমিডিয়েট পাস করে বের হই। বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পেয়ে ভর্তি হই সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের ব্যাবস্থাপনা বিভাগে। আমার বাড়ি থেকে পাবনার দুরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার হওয়ায় প্রথম উঠি আজাদ ছাত্রাবাসে। মাস ছয়েক সেখানে থাকার পর আমার এলাকার বড় ভাইদের সাথে আস্তানা গড়ি তন্ময় ছাত্রাবাসে।

তখন ২০০২ সালের শেষ দিক। অনার্স প্রথম বর্ষ শেষের দিকে। পরিবার ছেড়ে একাকীত্ব আমাকে গ্রাস করে। আমি সেখান থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় খুঁজি। শুরু করি লাইব্রেরি ওয়ার্ক। পাবনার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত অন্নদা গোবিন্দা পাবলিক লাইব্রেরিতে ছিল আমার নিয়মিত যাতায়াত। শতশত বই, অসংখ্যা স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক, রেফারেন্স বই দিয়ে সাজানো ছিল সেই লাইব্রেরি। আমরা কাছে যা ছিল প্রায় স্বর্গসম। প্রতিদিন বিকেলে গিয়ে সন্ধ্যার পর ফিরে আসতাম মেসে। এভাবে চলতে লাগলো। লাইব্রেরিতে যাওয়া আসা করার সময় লেখালেখি করার চিন্তা মাথায় আসে। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে পাঠকের জন্য লেখার জায়গাতে আমি লেখা পাঠাতে আরম্ভ করলাম। প্রথম দিকে লেখা ছাপা না হলেও এর কিছুদিনের মধ্যেই আমার লেখা আসতে লাগলো।

এ সময় আজকের কাগজে (বর্তমানে বন্ধ) প্রতি মঙ্গলবার ‘প্রেম একটি লাল গোলাপ’ নামে একটি বিভাগ চালু হয়। যেখানে দেশের বিভিন্ প্রান্ত থেকে ছেলেমেয়েরা তাদের মনের কথা লিখে পাঠাতে লাগলো। আমিও সেখানে লেখা শুরু করলাম। এখানে লেখার সুবাদে আমার সাথে দেশের বিভিন্ন স্থানের ছেলেমেয়ের পরিচয় হয়। বলাই বাহুল্য এর সবই ছিল পত্র মাধ্যম। কারণ আজকের মতো মোবাইল এত সহজলভ্য তখনো হয়নি। পত্রমিতালী করার যে আনন্দ তা এখনকার ছেলেমেয়েরা না বুঝলেও আমরা বুঝেছি। অপেক্ষার প্রহর যেমন কষ্টকর তেমনি প্রশান্তিদায়ক। তন্ময় ছাত্রাবাসের প্রতিটি বাসিন্দা যেন একেবারে আপন ছিল। সারাক্ষণ হৈ হুল্লোড়ে মেতে থাকাই ছিল এদের কাজ। এখান থেকেই আমরা প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরে বেরিয়েছি। একজন আরেকজনের দুঃখ কষ্টে সবসময় পাশে থেকেছি। একসময় দেখলাম সময় হলে একে একে সবাই বিদায় নিচ্ছে সেখান থেকে কর্মজীবনের উদ্দেশ্যে। বুঝলাম আমাকেও যেতে হবে।

এভাবে দেখতে দেখতে আমার পড়ালেখা শেষদিকে চলে এলো। আমারও বিদায় নেবার পালা। চলে এলাম প্রিয় তন্ময় ছাত্রাবাস ছেড়ে। পেছনে ফেলে এলাম আমার মুক্ত জীবনের সোনালী সময়। আমি জানি আজ অন্য কেউ সেখানে রয়েছে। আমার সেই টেবিল, প্রিয় জানালা, ছাদ সবকিছুই আমার মানসপটে বন্দি। আজও মাঝে মাঝে সেদিনের সেই স্মৃতিগুলো রোমন্থন করি আর আবেগে আপ্লুত হই। সেই পত্রমিতালীর চিঠিগুলোও আজ আর নেই। দু’একটি চিঠি সযতনে রেখেছি ব্যক্তিগত ডায়েরির ভেতর। মাঝে মাঝে সেই চিঠি খুলে দেখি। আবার ভাঁজ করে রেখে দেই। পাছে নষ্ট হয়ে যায়। থাক না কিছু স্মৃতি স্মৃতির পাতায়!

পিডিএসও/রি.মা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
তন্ময় ছাত্রাবাস,স্মৃতি,আমার আমি
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close