এহসান বিন মুজাহির, গণমাধ্যমকর্মী

  ৩১ জুলাই, ২০১৯

স্বপ্ন পূরণে নিমগ্ন সাধনার বিকল্প নেই

পথ চলতে গিয়ে যে কেউ ব্যর্থতার চোরাবালিতে হারাতে পারে। সফল ও ব্যর্থ মানুষের মধ্যে কোনো বাহ্যিক বা কাঠামোগত অথবা শারীরিক কোনো পার্থক্য নেই। প্রত্যেকেরই সমান সংখ্যক হাত-পা-মাথা রয়েছে, পার্থক্যটা দৃষ্টিভঙ্গিতে। সততা, আদর্শ, আত্মবিশ্বাস, দায়িত্বশীলতা, অধ্যবসায় আর পরিশ্রম মানুষের স্বপ্ন পূরণের পথ সহজ করে দেয়। মানুষকে সেখানেই নিয়ে যায়, যেখানে সে যেতে চায়। বাধাকে বড় মনে না করে সেই কাজে লেগে থাকলে সফলতা আসবেই। নিজের স্বপ্নটাকে স্বচ্ছ সুন্দর রাখলে আর পরিশ্রম দিয়ে তা অর্জন করতে চাইলে স্বপ্ন পূরণ হবেই।

স্বপ্ন মানুষ দুইভাবেই দেখে- জেগে এবং ঘুমে। ঘুম মৃত্যুর বন্ধু। তাই ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখা আর মৃত্যুর কোলে বসে স্বপ্ন দেখা একই কথা। তারপরও পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই ভালোবাসে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখতে। এই অলস স্বপ্নের মজাই আলাদা। মুহূর্তের রাজা! তবে ঘুমিয়ে যে স্বপ্ন দেখা হয় সেটা কখনোই পূরণ করা সম্ভব না। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ.পি.জে আব্দুল কালাম একবার বক্তৃতায় বলেছিলেন-‘মানুষ ঘুমে যে স্বপ্ন দেখে সেটা কোনো স্বপ্নই নয়। জেগে বসে সজাগ মস্তিষ্ক যে স্বপ্ন দেখে সেটাই স্বপ্ন’। স্বপ্ন পূরণ করতে হলে জেগে স্বপ্ন দেখে তা পূরণের জন্য অবিরত সংগ্রাম করে যেতে হবে।

ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল কালাম শৈশব থেকেই স্বপ্ন দেখতেন বড় হওয়ার। শিশুকাল থেকেই তিনি স্বপ্ন পূরণের জন্য চেষ্টাও করে গেছেন। আব্দুল কালাম’র সহোদরা ফাতেমা বেগম থেকে জানা যায়- আব্দুল কালাম তখন ৮ বছরের বালক। বাবার পাগড়ি মাথায় বেঁধে বোনদের বলতেন সরে দাঁড়াও তোমরা! দিল্লির মাওলানা আসছেন। দেখো দেখো-তিনি তো চলে এসেছেন..। তারপর ঘরের বাক্সের ওপর দাঁড়িয়ে বক্তৃতা শুরু করতেন। একটু থেমে বোনদের বলতেন- ধরো, আমাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য অনেক লোক এসেছে। খানিক পরে আবার বলতেন- তোমরা সবাই আমার চারপাশে এসে দাঁড়াও। ‘জিন্দাবাদ’ বলে স্লোগান দাও। বোনেরা প্রতিবাদ করে বলত-এখানে তো আমরা তিন-চারজন মাত্র। হাজার হাজার মানুষ কোথায়? আব্দুল কালাম বলতেন এটা তো একটা খেলা। খেলায় অনেক কিছুই ধরে নিতে হয়। এটা ছিল শিশু অবস্থায় এ.পি.জে অবস্থায় আব্দুল কালামের স্বপ্ন! স্বপ্নের আকাশে নিজেকে এঁকেছিলেন দিল্লির বড় মাওলানারুপে। এই স্বপ্ন আব্দুল কালাম আজাদকে ভারতের রাষ্ট্রপতির আসনে সমাসীন করেছিল।

নিমগ্ন সাধনা যদি ঠাঁই পায় কারও জীবনে তাকে আর হার মানতে হবে না ব্যর্থতার কাছে। সাফল্য পদচুম্বন করবেই। যে সাধনায় লিপ্ত থাকে সেই জয় করতে পারে লক্ষ্য। জীবন যদি লক্ষ্যহীন হয় তাহলে ব্যর্থতার জন্য আর আলাদা আয়োজন করতে হয় না। লক্ষ্যে পথচলা যেমন সহজে এবং দ্রুত মানুষকে তার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়, লক্ষ্যহীন পথচলা তেমনি কঠিন করে তোলে গন্তব্যে পৌঁছাকে। কাজেই জীবনে সাফল্য অর্জনের পূর্বে লক্ষ্য নির্ধারণ করে এরই আলোকে সাধনা করে যেতে হবে। জীবনে চলার পথে হাজারো চাওয়া-পাওয়া নিয়ে আমরা জীবন সাজাই। তবে আসলে পূরণ হওয়ার নয়। তাই জীবনে সফলতা যেমন থাকবে তেমনি ব্যর্থতাও। জীবনে মূলত তিনিই সফল যিনি ব্যর্থতার ছাই থেকে নিজেকে টেনে তুলতে পারেন। তবে সাফল্যের পথে রয়েছে হাজারো বাধা ও মরীচিকা। স্বপ্ন এবং প্রচেষ্টাই পারে মানুষকে তার গন্তব্যে নিয়ে যেতে। তখন চারপাশের বাধা আর বাধা মনে হয় না। কোনো প্রতিবন্ধকতাই মানুষকে দমিয়ে রাখতে পারে না। জীবনে যারা জেগে বসে স্বপ্ন দেখে, পৃথিবীতে তারাই একদা মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। তাদের পরশে ধন্য হয় কাল। গর্ব করে পৃথিবী।

পিডিএসও/রি.মা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
স্বপ্ন পূরণ,আমার আমি
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close