রাশেদুল বারী, ঢাবি শিক্ষার্থী

  ২৯ জুলাই, ২০১৯

পাঠাগার প্রতিষ্ঠা হোক ছাত্রসংগঠনের কর্মসূচি

যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত। জাতির উন্নতির সাথে শিক্ষার আছে নিবিড় সম্পর্ক। জাতিকে শিক্ষিত করার জন্য প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি বাস্তবিক কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিশেষত শিক্ষা সংকটে থাকা এলাকায় পাঠাগার প্রতিষ্ঠার মতো একটি কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। মফস্বল এলাকায় কিংবা উন্নত এলাকায়ও শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি জাগতিক অন্যান্য জ্ঞানার্জন থেকে। যা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। একজন জ্ঞানার্থীর সুন্দর মূল্যবোধ, উন্নত মানসিকতা এবং চিন্তা চেতনার প্রসারতা অর্জন শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দ্বারা অসম্ভব। শিক্ষার্থীর পূর্ণ সুন্দর মানসিকতা তৈরিতে বিচিত্র বইয়ের সমাহারে গড়া পাঠাগারের বিকল্প নেই।

একাত্তরের পূর্ব এবং পরবর্তী সময়ে এ বাংলাদেশে ছাত্রভিত্তিক নানা সংগঠন গড়ে উঠে। রাজনীতিক, সমাজসেবী, সাংস্কৃতিক কিংবা অন্য কোনো প্রেক্ষিতে গড়ে উঠে ছোট বড় বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন। তবে বর্তমান বাংলাদেশে ছাত্রদের বড় অংশ জড়িয়ে আছে রাজনীতিক ছাত্রসংগঠনের সাথে। আর এসব ছাত্রসংগঠনের শিক্ষাবান্ধব কর্মসূচি নেওয়া কর্তব্যে থাকলেও অধিকাংশ সংগঠনে তা উপেক্ষিত। মূলত মুরব্বি সংগঠনের এজেন্ডা বাস্তবায়ন, আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্বদান, দেশীয়-আন্তর্জাতিক-দলীয় কর্মসূচির গণ্ডি পেরুতে পারে খুব কম সংগঠনই। বুদ্ধিভিত্তিক আন্দোলন, শিক্ষাবান্ধব কর্মসূচিতে এসব সংগঠনের নীরব অবস্থান বারংবার সাধারণ ছাত্রদের হতাশ করেছে। অথচ রাজনীতিক ছাত্রসংগঠন চাইলেই শিক্ষাবান্ধব কর্মসূচি হাতে নিয়ে জাতিকে আলোর দিশা দিতে সক্ষম। কারণ, রাজনীতিক ছাত্রসংগঠনগুলোর আছে বিশাল কর্মীবাহিনী, আছে মোটা অংকের অর্থফান্ড, আছে তারুণ্য-যুবশক্তি।

প্রতিবছরই ছাত্রসংগঠনগুলো আগামী একবছরের জন্য কোটি ডিজিটের বাজেট পরিকল্পনা করে। অনেক সময় প্রস্তাবিত বাজেটের চেয়ে অনেক বেশিই আয় এবং ব্যয় করে। ছাত্রসংগঠনগুলোর আয়ের উৎস—জাতীয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, শুভাকাঙ্ক্ষী, স্থায়ী ফান্ড, সংগঠনের সম্পত্তি, সাবেক নেতাকর্মী এবং অন্যান্য খাত। আর ব্যয়ের খাত—সাংগঠনিক কর্মসূচি, জাতীয় সংগঠন ঘোষিত কর্মসূচি এবং অন্যান্য আচার-অনুষ্ঠান কিংবা দিবস উদযাপনে মূলত সংগঠনগুলো অর্থ ব্যয় করে।

তবে বর্তমানে দেশের আবহমান শিক্ষা সংকট থেকে উত্তরণের জন্য, মফস্বল এলাকায় শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানের জন্য অন্তত একটি ছাত্রসংগঠনের এগিয়ে আসা উচিত। আগামী কয়েকটি বছরের সাংগঠনিক পরিকল্পনায় অন্যান্য কর্মসূচি সীমিত ব্যয়ে পালন করে পুরো বাংলাদেশের প্রায় আটাশি হাজার গ্রামে কিংবা ৪৫৫৪টি ইউনিয়নে একটি করে পাঠাগার প্রতিষ্ঠার যুগোপযোগী কর্মসূচি হাতে নিতে পারে। এ কর্মসূচি কেবল সরকার কিংবা ছাত্রসংগঠনের দ্বারাই বাস্তবায়ন সম্ভব। কারণ, বৃহৎ ছাত্রসংগঠনগুলোর আছে জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন-ওয়ার্ড তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি। যা এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের সবচেয়ে ইতিবাচক এবং বড় শক্তি।

কেন্দ্রীয় কমিটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠার কর্মসূচি ঘোষণা দিলে প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মী তা স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করবে নিশ্চিত। কেননা, এমন কর্মসূচি শিক্ষিত জাতি গঠন, সাধারণ ছাত্রদের সংগঠনের প্রতি আগ্রহীকরণ, জাতির কাছে সংগঠনের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে নিঃসন্দেহে। ছাত্রসংগঠনের নেতারা এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন সে কামনায় করি।

বাংলাদেশজুড়ে পাঠাগার প্রতিষ্ঠা নিঃসন্দেহে অনেক বড় ব্যাপার। যা কষ্টসাধ্য আর বহু সময়ের ব্যাপার। তবে ইতিহাস বলছে, ছাত্রসংগঠনগুলো তাদের কর্মসূচি বাস্তবায়নে পূর্ণ সফল। তরুণদের জন্য অসম্ভব কিছু নেই। চেষ্টা করলে সবই সম্ভব। কোনো ছাত্রসংগঠন পাঠাগার প্রতিষ্ঠার সময়োচিত উদ্যোগটি নিলে তা বাস্তবায়নও সম্ভব হবে। সুচিন্তিত পরিকল্পনা, দক্ষ ছাত্রশক্তিকে কাজে লাগিয়ে জাতির উন্নয়নে পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। শুধু প্রয়োজন সংশ্লিষ্টদের সুন্দর মানসিকতা, সময়োচিত চিন্তা-ভাবনার, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার। সরকারিভাবে পাঠাগার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়াটাও সময়ের দাবি।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ছাত্রসংগঠন,পাঠাগার,মতামত
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close