এম. মনসুর আলী, গণমাধ্যমকর্মী

  ১৪ জুলাই, ২০১৯

শুধু নাই নাই...

কলেজে ভর্তি হতে গেলে আসন নাই, ডাক্তারের কাছে গেলে সিরিয়াল নাই, রেলে গেলে টিকেট নাই, বাসে উঠলে বসার সিট নাই, ইন্টারভিউ দিচ্ছে- চাকরি নাই। এ সবই একটি দেশের জনসংখ্যা বিস্ফোরণের লক্ষণ। বর্তমানে বাংলাদেশে যে একটা জনসংখ্যা বিস্ফোরণ চলছে তা চারদিকে তাকালেই বুঝা যায়। আনাচে কানাচে সর্বত্র যে বিপুল পরিমান মানুষ দেখা যায় পৃথিবীর অন্য কোনও দেশে তা চোখে পড়েনা।

জনসংখ্যা আজ বিশ্বের শীর্ষ সমস্যা। বাংলাদেশে বর্তমানে যতগুলো সমস্যা আছে তার মধ্যে এক নম্বরে আছে জনসংখ্যা সমস্যা। প্রতি এক মিনিটে জন্ম নিচ্ছে ৯ জন শিশু। বাড়তি জনসংখ্যার নেতিবাচক চাপ পড়ছে দেশের সব সেক্টরে এবং জনজীবনে। ফলে দারিদ্রতা আমাদের খামচে ধরে রেখেছে শুকুনের মতো। কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। রাঁধতে গেলে বউ বলে ড্রামে চাল নাই।

গত ঈদে আমার স্কুল পড়ুয়া মেয়ে সাবরিনা কায়সার ইজার আবদারে স্থানীয় একটি বাজারের কয়েকটি কাপড়ের দোকানে ঈদ উপলক্ষে একটা পাঞ্জাবি কিনতে গিয়েছিলাম। পাঞ্জাবি কেনা তো দূরের কথা জনজটের কারণে দাঁড়াতেই পারলাম না। বিরক্ত হয়ে ফিরে আসলাম। প্রতিটা দোকানে যানজটের মতো মহা জনজট। দোকানে বসার জায়গা নাই। এখনই এই দৃশ্য!! ৩০বছর পর কি হবে? দেশটা আমাদের। তাই দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত।

খাইতে বসলে প্লেট নাই, নদীতে মাছ নাই, সভায় গেলে জায়গা নাই এই সব জনসংখ্যা বিস্ফোরণের লক্ষণ। বাংলাদেশের আয়তন মাত্র ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটার। স্বাধীনতার পর দেশের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৭ কোটি। বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। প্রতি বছর ৩০ লাখ নতুন মুখ যোগ হচ্ছে এই মোট জনসংখ্যার সাথে। এই হারে জনসংখ্যা বাড়তে থাকলে ২০৫০ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ২৫ কোটিতে দাঁড়াবে। যদি প্রতি বছর ৩০ লাখ লোক বাড়ে, তাহলে ৩০ বছর পর দেখা দেবে যানজটের মতো মহা জনজট বা মানুষজট।

মাঝে মধ্যে যখন বিশেষ কাজে জেলা শহর কিংবা রাজধানীতে যাই তখন অবাক হয়ে দেখি রেল লাইনের পাশে কিংবা যেখানে শহরের ময়লা আবর্জনা ফেলা হয় তার পাশেই মানুষ বাড়ি-ঘর তৈরি করে ভয়াবহ দুর্গন্ধের মধ্যে বসবাস করছে। কোথাও তাদের থাকার জায়গা নাই। তাই নিরুপায় হয়ে দূর্গন্ধের মধ্যেই বসবাস করছে ওরা। সেদিন বেশি দূরে নয়- যেদিন মানুষ স্থলে জায়গা না পেয়ে নদীতে, সাগরে ভাসমান বাড়ি তৈরি করে থাকবে। তখন মল-মূত্রে নদীর পানি হয়ে যাবে বিষ। এর একটাই কারণ জনসংখ্যা বিস্ফোরণ।

এই ক্ষুদ্রায়তনের দেশে জনসংখ্যা ভয়াবহ হারে বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে বাল্যবিয়ে, শিক্ষার অভাব, সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কার, জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে অজ্ঞতা, মৃত্যুহারের চেয়ে জন্মহার বেশি ইত্যাদি। জন্ম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কথা বললে অনেকেই বলেন, আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে পাঠানোর আগেই রিজিক পাঠিয়েছেন। আবার অনেকেই ছড়ার আঙ্গিকে বলেন, "মুখ দিয়েছেন যিনি, খাবার দেবেন তিনি"। কেউ কেউ বলেন, 'জন যার লাঠি তার'। দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশের নব্বই ভাগ লোক অধিক সন্তান জন্ম দেয়ার কুফল সম্পর্কে কখনো ভাবেন না। ফলে পরিবারে ও দেশে জনসংখ্যা অতি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জাতির ভবিষ্যৎ ক্রমেই অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। দেশে মানুষ বাড়ছে, সেই সঙ্গে খাদ্য সমস্যা প্রকট হচ্ছে। জনসংখ্যা রোধে দেশব্যাপী ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। প্রয়োজনে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ আইন করতে হবে। চীনে জন্মনিয়ন্ত্রণ রোধে আইন আছে, এক সন্তানের বেশি হলে ওই পরিবারকে শহরে থাকতে দেয়া হয় না। ফলে চীন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সফল হয়েছে। বর্তমানে দেশের খাদ্য সমস্যা, বেকার সমস্যা, পতিতাবৃত্তি, ভিক্ষাবৃত্তি, ঘুষ, দুর্নীতি, চুরি, ছিনতাই, প্রতারণা, সন্ত্রাস, খাদ্যে ভেজাল ইত্যাদির প্রধান কারণ অধিক জনসংখ্যা। তাই দেশের এ পরিস্থিতিতে ভবিষ্যৎ মঙ্গলের কথা বিবেচনা করে চীনের মতো আইন করে এক সন্তান নীতি চালু করা অতি জরুরি।এক সন্তান নীতি চালু করলে আগামী ৪৫ বছরে বাংলাদেশের জনসংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসবে।

সতেরো কোটি মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া যে কোনও সরকারের পক্ষে অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ। মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া দরিদ্র দেশ, কিন্তু জনসংখ্যা কম হওয়ার কারণে, যে কোনও পরিস্থিতি তারা মোকাবেলা করতে পারে। আমরা পারিনা। দ্রব্য মুল্যের উর্ধ্বগতি বলে দেশের মানুষ যে চিৎকার করছে তার মূল কারণ অধিক জনসংখ্যা। ১০ বছর আগে আমাদের বাড়িতে মাত্র দুইটি বৈদ্যুতিক বাতি ছিল। আর এখন আমাদের পাঁচ ভাইয়ের ঘরে মোট ২৫টি বাতি। তাহলে লোডশেডিং এর জন্য দায়ী কারা? অধিক জনসংখ্যা নিশ্চয়। এ রকম হাজারো সমস্যার জন্য দায়ী অধিক জনসংখ্যা।

আমি দেশ সঞ্চালকদের বিশেষভাবে অনুরোধ করছি, আপনারা সময় করে একবার গ্রামে আসেন। দেখে যান কৃষি জমির এক বিরাট অংশই বাড়ি-ঘর তৈরিতে দখল হয়ে গেছে। আগে যেসব জায়গাতে খেলার মাঠ ছিল সেখানে মাটি ভরাট করে ঘর-বাড়ি বানানো হয়েছে। খোলা ধানক্ষেতের মধ্যেও দেদারসে বাড়ি ঘর তৈরি করছে। মোট কথা জনসংখ্যা বাড়ার ফলে সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ছে দেশের চাষযোগ্য জমির ওপর। একসময় চাষের জমি কমতে কমতে শূণ্যের কোঠায় চলে যাবে। তখন মানুষকে ভাতের পরিবর্তে শুধু পানি পান করতে হবে। নতুবা এক মুঠো ভাতের জন্য বিদেশিদের কাছে হাত পাততে হবে।

পিডিএসও/রি.মা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শুধু,নাই নাই,আমার আমি
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close