সাজ্জাদ হোসেন, সংবাদকর্মী

  ০৪ জুলাই, ২০১৯

দিবালোকে কুপোকাত : আমাদের নিরাপত্তা দেবে কে?

ফেসবুকের নিউজফিড সেজেছে এক নতুন আঙ্গিকে। এ সাজটি একটু ভিন্ন ঢালের। রক্তমাখা ছবি আর একদিকে মানুষরুপী নরপশুদের কুপোকাতে নির্মমভাবে মৃত্যুর কোলে রিফাতের ঢলে যাওয়ার ভিডিওটির ভাইরাল হওয়াটা দেখে মনে হচ্ছে যেন কোনও অনলাইন প্রদর্শনী। যেখানে ধুম পড়েছে আলোকচিত্র প্রদর্শনী প্রতিযোগিতার। আমি চলচিত্রের কাহিনীর মতোন ঘটে যাওয়া বরগুনায় রিফাত শরীফের হত্যাকাণ্ডের কথাই বলছি। যেখানে শত শত লোকের উপস্থিতিতে স্ত্রীর সামনে স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।

ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওতে দেখা যায়, ধারালো অস্ত্র দিয়ে রিফাতকে একের পর এক কোপ দিতে থাকে দুই যুবক। ওই সময় রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি দুই যুবককে বারবার প্রতিহতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এদিক থেকে ঘটনার কার্যকারণ ব্যাখা নিয়ে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ দর্শক সমাজে। তবে হত্যাকাণ্ডের পিছনে রহস্য কি তা নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই। আমার ভাবনার জায়গাটা জনসাধারণের নিরাপত্তা নিয়ে। এরকম অপ্রীতিকর ঘটনা দেশে প্রথম নয় বরং এর আগেও বারংবার সংঘটিত হয়েছে। এর আগে ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে বিশ্বজিৎ দাস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। সেইদিন প্রকাশ্য-দিবালোকে শত শত মানুষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দেশের মানুষ কতোটুকুই স্বাধীন? নেই কোনও গৃহযুদ্ধ। নেই কোনও পরাশক্তির আক্রমণ। অথচ খুন, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন দৈনিক পত্রিকাগুলোর যেন চিরাচরিত বিষয়। সাম্প্রতিক সময়ে নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনা পুরো দেশবাসীর মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। নাড়া দিয়েছিল মানুষের বিবেক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় টালমাটাল হয়েছিল ন্যায্য বিচারের দাবি। শিক্ষক-ছাত্র সমাজ থেকে শুরু করে সকল প্রকার পেশাজীবী মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন। তাইতো অপরাধীদের বিচারাধীন অবস্থায় আনা সম্ভব হয়েছে। এদিক থেকে আমাদের দেশের মিডিয়ার একটা সুফল প্রশংসা করতেই হয়। যে জিনিসটা অতিসত্বর ভাইরাল হয় সেটার সুস্থ ইতি টানা না হলেও পরবর্তী কোনও কিছু ভাইরাল না হওয়া পর্যন্ত সেটা নিয়ে নাড়াচাড়া চলতে থাকে। আবার নতুন কোনও আবেগময়, শোক কিংবা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশের মত ঘটনা সামনে আসলে পূর্বের ঘটনাটি ধামাচাপা পেতে থাকে। রিফাত হত্যার মতো কত ঘটনা আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত ঘটছে। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে ঠাকুরগাঁও এ নার্স হত্যা। ২০ জুন যৌন হয়রানীর প্রতিবাদ করায় ঠাকুরগাঁওয়ে ভাতিজার ছুরিকাঘাতে আহত হয় তানজিনা আক্তার নামক একজন নার্স। দীর্ঘ সাত দিন জীবনের সাথে লড়াই করে পরিশেষে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয়য়েছে তাকে। সেসব মামলাগুলোর কতোটুকুই বা সুষ্ঠু নিষ্পত্তি হয়? রিফাত হত্যার মতো সব ঘটনা ভাইরাল করবার জন্য ক্যামেরা ধরবার লোক তো অপ্রত্যাশিতভাবেই পাওয়া যায়। তাই সাধারণের চোখের আড়াল হয় কতো অজানা অপরাধ। লালফিতের বাঁধনে পড়ে থাকে হাজারো ধূলিমাখা ফাইল।

মানবাধিকার কর্মীদের মতে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার না থাকার কারণে এরকম জঘন্যতম অপরাধের সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাপ করেও পার পাওয়া যায় এমনি সব ধারণা জন্মেছে অপরাধীদের মাঝে। তাই অনায়াসে সংগঠিত হচ্ছে এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাবলি। আতঙ্কের উৎপত্তি হচ্ছে সমাজের অভ্যন্তরে।

সেসকল অপরাধ কমাতে হলে ‘সবার জন্য আইন সমান’ এ কথাটির যথাযোগ্য প্রয়োগ করতে হবে। আইন আছে কিন্তু আইনের প্রয়োগ নেই এরকম বিশ্বাস থেকে সাধারণ মানুষকে বেরিয়ে আনতে হবে। এজন্য দরকার রাষ্ট্রের সরাসরি তদারকি এবং বিচার বিভাগীয় স্বচ্ছতা। শুধুমাত্র ভাইরাল হওয়া দৃষ্টিগোচর অপরাধ নয়, সকল প্রকার অন্যায়ের বিপক্ষে সোচ্চার থাকতে হবে আইনশৃঙ্খলা কাজে নিয়োজিতদের। আজ যদি পাপ করে দোষীরা পার পেয়ে যায়। তাহলে পরবর্তী রিফাত কে হচ্ছেন? আপনি না আমি?

পিডিএসও/রি.মা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
দিবালোক,কুপোকাত,নিরাপত্তা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close