শ্রীধর দত্ত

  ২৯ জুন, ২০১৯

অভিভাবকের অযত্ন-অবহেলায় পথভ্রষ্ট হয় সন্তান

একটি সন্তানকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে গড়ে তোলার দায়িত্ব অভিভাবকের। অভিভাবকের শাসন ও কঠোরতায় সন্তান সঠিক পথে চলে। এরপর আসে স্কুল কলেজে শিক্ষকদের ভূমিকা। অভিভাবক ও শিক্ষকরাই পারেন একটি সন্তানকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে। যদি ব্যতিক্রম হয় অর্থাৎ অযত্ন, অবহেলা করা হয়, তাহলে সন্তান কুসন্তানে পরিণত হয়।

প্রতিটি অভিভাবক চায় তার সন্তান শিক্ষিত হয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করুক। কেউ চায় না তার সন্তান চোর, ডাকাত, সন্ত্রাসী কিংবা মাদকসেবী হোক।অভিভাবকের তদারকির অভাবে সন্তান পথভ্রষ্ট হয়ে যায়। তার ফলশ্রুতিতে সমাজে বিভিন্ন অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে।অভিভাবকের দায়িত্ব যেমন পরিবারকে ভরণ পোষণের জন্য অর্থ উপার্জন করা; ঠিক তেমনি আরও বেশি দায়িত্ব ও কর্তব্য- সন্তানের চলাফেরায় সুদৃষ্টি রাখা। সন্তান ঠিকমতো স্কুলে যায় কিনা, ঠিকমত লেখাপড়া করছে কিনা, কাদের সঙ্গে মিশছে তার তদারিক অবশ্যই করতে হবে। আপনি হযতো অর্থের জন্য ঘোড়ার মতো ছুটে চলছেন এবং আপনার অজান্তেই সন্তান নিজের ইচ্ছামতো চলার কারণে বিভিন্ন অপরাধের সাথে সংযুক্ত হচ্ছে।

সন্তান যেমন অভিভাবক দ্বারা পরিচালিত হয় ঠিক তেমনি একটি দেশের জনগণ সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়। আগে চুরি ডাকাতি করতো রাতের অন্ধকারে আর এখন দিন দুপুরে জনসমক্ষে চাপাতি দিয়ে কোপাতে কোপাতে হত্যা করে। সামাজিক পরিস্থিতির কতটুকু অবনতি হলে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

পুলিশ চাইলে সামান্য মুরগি চোরকে ধরে আনতে পারেন। ঠিক তেমনি কোনো অপরাধীকে গ্রেফতার কিংবা অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা পুলিশের পক্ষে অসম্ভব কিছু নয়। বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমনও একইভাবে সম্ভব। পুলিশ প্রশাসন অর্থ লোভ ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের দ্বারা পরিচালিত। দেশে যত অনিয়ম খুনখারাবি হচ্ছে তার পিছনে একটা শক্তি থাকে। সে শক্তি নিশ্চয়ই অসাধু রাজনীতিবিদদের, যারা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে। প্রশাসনের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া কোনো অপরাধ সংগঠিত হতে পারে না। আর যদি তা না হয়, অপরাধী ধরা পড়ার পরও কেন বিচার হয় না? কেন জেলের ভেতরেও অপরাধ হয়।

তাহলে কখনো পুলিশের সহযোগিতায়, বিচার বিভাগের উদাসীনতায় অপরাধী ছাড়া পেতো না। অপরাধী যেই হোক না কেন সে সমাজের শত্রু। যদি সরকারি দলেও থাকে, তাহলে সে মহাশত্রু। তাকেই আগে নির্মূল করা দরকার। সাংবাদিক সাগর-রুনি, নারায়ণগঞ্জের সাত খুন, ব্লগার অভিজিৎ, নিরীহ বিশ্বজিৎ, তনুসহ নাম না জানা আরও অনেকের কি বিচার হয়েছে? রিফাত হত্যাকাণ্ড বিচারহীনতার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বিচার যদি সঠিকভাবে হতো অপরাধীর যদি শাস্তি হতো তাহলে আজকে সমাজের এই পরিস্থিতি হতো না। পুলিশ ঘুষ খেয়ে নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে অপরাধীদের ছেড়ে দিচ্ছে। আইনজীবীরা টাকার বিনিময়ে অপরাধীর পক্ষ নিয়ে আসামিদেরকে বেকসুর খালাসের ব্যবস্থা করছে।

অপরাধী ও সন্ত্রাসীকে যদি সবাই বয়কট করতো তাহলে এই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। এই যদি দেশের পরিস্থিতি হতে থাকে; তাহলে ধরে রাখুন চাপাতির কোপ সবার দিকে তেড়ে আসা শুধু সময়ের ব্যাপার। এসবের দায়ভার কিন্তু রাষ্ট্রের সরকারের উপরই বর্তায়। হয়তো মনে করছেন আপনি বেঁচে যাবেন কিন্তু আপনার পরবর্তী প্রজন্ম এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে।

আইনজীবীরা যদি খুনির পক্ষ না নিতো এবং রাজনীতিবিদরা যদি খুনিকে প্রশ্রয় না দিতো তাহলে দেশে এতো খুনখারাবি হতো না। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে প্রতিটি অভিভাবক এবং সরকারের কঠোর পদক্ষেপ। তা না হলে ভবিষ্যতে অন্ধকার নেমে আসবে। আপনি সচেতন হোন এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। যার যার অবস্থান থেকে সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত সুষ্ঠু ও সুন্দর চিন্তা করুন। তাহলে সমাজ আরোগ্য লাভ করবে।

তাই প্রতিটি অভিভাবকের উচিত সন্তানের দেখভাল করা। সরকারের উচিত অপরাধী যেই হোক না দল-মতের ঊর্ধ্বে থেকে নিরপেক্ষভাবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। তাহলে সমাজ পরিবর্তন হবে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
হত্যাকাণ্ড,সমাজ,অভিভাবক,সন্তান লালন-পালন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close