সাজ্জাদ হোসেন, সংবাদকর্মী

  ২২ জুন, ২০১৯

জিম্মির ঘূর্ণিপাকে জীবন বিপাকে

‘জিম্মি' কথাটি যেমন শ্রবণে একটি আতঙ্ক কাজ করে, তেমনি বাস্তব জীবনেও এর সম্মুখীন মানুষগুলোর আর্তনাদ ধ্বনি একটুও মৃদু থাকে না। জিম্মি শব্দটির সংজ্ঞা যে শুধুমাত্র একজনকে আটকে রেখে কিংবা মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে, বন্দিকারী তার অভিসন্ধি হাসিল করার উদ্দেশ্যে নিমজ্জিত থাকবে সেটিই শেষ কিংবা প্রধান নয়। দৈনন্দিন জীবনে প্রত্যক স্তরে প্রতিটি মুহূর্তে জিম্মির স্বীকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকগুলো। হোটেল বা রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে জিম্মি হচ্ছে মর্যাদাসম্পন্ন বেসরকারি হাসপাতালের প্রাঙ্গণ থেকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে।

নিত্যনৈমিত্তিক জীবনের ক্ষুদ্র পরিসরে মানুষকে নানানমুখী অগ্রগমনের রাস্তায় কঠিন থেকে অধ্যাবসায়মূলক অনেক পদক্ষেপই নিতে হয়। তার জন্য বেছে নিতে হয় দৌড় বা সংগ্রামী চিত্তের। জীবন পরিচালনায় ছুটে প্রত্যেকদিন এক শহরতলী থেকে আরেক শহরে পদার্পণ করছে সহস্র মানুষজন। কিন্তু কখনো কি একবারের জন্যও ভেবেছি মানব নামক এসব যাত্রীরা প্রত্যেকদিন স্বীকার হচ্ছে জিম্মির খাঁচায় বন্দি। একটু আড়চোখ ফেলানোর বৃথা চেষ্টা করা হোকঃ

নিত্যদিন হাজার হাজার লোক পাড়ি দেয় বিভিন্ন শহরগুলোয়। এর জন্য একমাত্র প্রধান মাধ্যম হিসেবে সিংহভাগ বাস গমনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু দূর রাস্তা পাড়ি দিতে পথিমধ্যে যে যাত্রা বিরতি বা ক্ষুধাতুর পেট পূরণের জন্য অতিরিক্ত সময় প্রদান করে। ঠিক তখনি তো শুরু হয় এক ভিন্নরূপ ব্যবসার। বেশিরভাগ স্টপগুলোয় প্রধান মৌলিক খাদ্য মাছ অথবা মাংস ছাড়া পাওয়া যায় না কিছুই। তবে কিছু রেস্টুরেন্টে অন্যান্য তরকারী বা খাবারের পর্যাপ্ততা থাকলেও, নামেমাত্র খাবারের নামে পুড়তে হয় এক বড় অংকের টাকার, সেটা নিয়ে থাকে যেমনতেমন মানুষ ভেদে। সেই খাবার অনেকের পেটে সয় ঠিকই, কিন্তু অর্থের দিক দিয়ে যে সয় না। বাসে যে ঢের নিম্নবিত্ত মানুষজনও থাকে এটা হয়তো হোটেল বা রেস্টুরেন্ট মালিকের দেখবার বিষয় না। আশপাশ বিকল্প খাবার হোটেল থাকার সম্ভবনাটাও খুবই যৎসামান্য। আমি বাস ড্রাইভার বা সুপারভাইজার নামক কর্মকর্তার ভুল, দোষ কোনটাই এড়িয়ে যাব না। কারণ তাদের ফ্রি বা স্বল্প টাকায় পেট পূজা তখনই সম্পন্ন হবে যখন তাদের চুক্তিসম্পন্ন হোটেলে অধিকতর যাত্রীর প্রবেশ নিশ্চিত করতে পারবে। অনেকের কাছে মনে হতে পারে দেশ এগিয়ে গেছে। জনগণ আর এক বেলাও না খেয়ে থাকে না। হ্যাঁ এ কথা যেমন সত্য তেমনি প্রত্যেক শ্রেণির মানুষ যে তিন বেলা মাছ মাংস খেয়ে থাকে না সেটিও চরম সত্য।

অন্যদিকে বহু ক্লিনিক, বেসরকারি হাসপাতালগুলোর খুঁটিনাটি ঘাঁটলে বেড়িয়ে আসে একটু ভিন্ন চিত্রের। রোগীরা চিকিৎসকের কাছে গেলেই তাকে নানা ধরনের ওষুধ, পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজ ধরিয়ে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয় বিশেষজ্ঞদের প্রত্যেকবার রোগী দেখার জন্য ভিজিট ফি তো আছেই। সেটা অস্ত্রোপচারের পর পরবর্তী পরামর্শ হউক কিংবা পুরাতন রোগী। আবার কোনও কোনও চিকিৎসক নির্দেশ দেয় কোন সেন্টার বা প্রতিষ্ঠান থেকে টেস্টগুলো সম্পন্ন করতে হবে। এছাড়াও, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো যে এভাবেই ভিড় জমিয়ে বড় ধরনের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে সে সম্পর্কে সন্দেহ খানিকটা কমই। এসব প্রভাবগুলোর কারণ আমাদের মেডিকেল পড়াশুনোর উচ্চ মাত্রার খরচের কারণ নাকি অন্যান্য দেশের চেয়ে এদেশের প্রযুক্তি এবং চিকিৎসার মান খুব উন্নতমনা? সে প্রশ্ন না হয় বিশ্লেষকদের কাছেই রইলো!

বাংলাদেশ সরকারের ও জনগণের বহুমুখী উদ্যোগ চিন্তা ও বাস্তবায়নের ভূমিকার কারণেই আজ সমাজ উন্নয়ন বিকাশের পথে। পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ডও ভাঙতে সক্ষম হয়েছে। তাই উপরিউক্ত নিগূঢ় সমস্যাগুলো সমাধানে উচ্চ স্তরের প্রশাসন এবং সরকারের স্বচ্ছতার দৃষ্টি অবশ্যই প্রয়োজন। হোটেল বা রেস্টুরেন্টগুলোর ক্ষেত্রে হতে পারে স্তর ও দাম অনুযায়ী বিভিন্ন রকমের খাবার ম্যানু। ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য নির্ধারিত মূল্য। পাশাপাশি জনগণকে ধোকার কবল থেকে রক্ষার জন্য সবকিছু যাচাই করে তবেই নিতে হবে জরুরি সিদ্ধান্ত। প্রত্যেক সমস্যার জন্য দাঁড় করাতে হবে অভিযোগ। জাগ্রত হোউক মানসিকতা, জীবন্ত থাকুক শ্রেষ্ঠ বিবকেগুলি।

পিডিএসও/রি.মা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জিম্মি,ঘূর্ণিপাক
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close