reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৮ মার্চ, ২০১৯

আলিমন নেছা মনি’র কবিতা

সুখে থেকো তুমি

তোমার সাথে ছোট সম্পর্কটা শুধুই বন্ধুত্বের

এই যে কথা বলা প্রতিরাত্রির রাগ অভিমান

হঠাৎ কাল আমার হৃদয়ের গহীনে দেয় হানা।

দুটি সজল ডানার আঁখির টানা কাজল পল্লবে

নিঃশব্দে গড়গড়িয়ে ঝড়ে পড়েছে নোনতা জল

কেউ বলেনি—মেঘবতী আজ যে কাঁদতে মানা।

কত কথা বলে যাই আমি কত কথা তার শুনি

একটু আড়ষ্টতার লজ্জাবিনীত লাজুক স্বভাবে

চুপ থাকলে বলত—কথা বল না কেন গো তুমি।

অনুভূতি স্পর্শের হালকা আলিঙ্গনের কল্পনাতে ভেবে দেখো একবার তোমার খুব কাছে আমি।

কেউ বলে না আর এমন করে—আমি এসে গেছি

সন্ধ্যার আকাশে ছেয়ে যাওয়া সাতটা গোধূলিতে

উঠোনের কোণে ফুটে থাকা হাস্নাহেনার সুবাসেই

অবেলায় মাতাল হবে তোমার এলোমেলো ঘরখানি।

তোমার পিঠে ছড়িয়ে যাওয়া কেশের বিনুনিতে মুখটা গুজে জুঁই ফুলের ঘ্রাণকে শুকবো আমি।

তার আশাতে তীব্র প্রতীক্ষার প্রহর গুনে চলি ভগ্ন ক্লান্ত মলিন নিদ্রাহীনে প্রতিটি বিনদ্র রজনী।

কথা শেষ হলে বলে দিলে আমাকে মিনতি করে—

আমাকে না পেলে কষ্ট পেয়ো না কোনদিন তুমি!

অন্ত:সলিলা আলোর বৈতরণীতে পার করে আসা

নিষ্ঠুর দিনগুলিকে পারবো না যে ভুলে যেতে আমি।

সুবিশাল ক্ষত বিক্ষতের বন্ধনেতে সুখে থেকো তুমি।

তবে আমি জানি, কোন একটা সময় তুমি পাগল হয়ে

জীবনের শূন্যতায় অস্তিরতার দুরত্ব ঠিক ততটাই

সময়ের ব্যবধানে একটু ছোঁয়া নিতে হবে অধীর।

সেদিন হয়ত পা টিপে টিপে চলার ধ্বনি শুনবে না তুমি ভেসে যাওয়া সুখে মুখ গুজে তোমাকে পুড়িয়েছি আমি।

যার আদৌলে দেখে যাও তুমি আজো অষ্টাদশীর তিথি

অব্যক্ত ব্যথার আঘাতে বলবে না তোমাকে ভালোবাসি।

তাই বলে যাই স্মৃতির বদ্ধ আঁচরে আমি বন্ধু হয়েই থাকি।

একমুঠো ভালোবাসা

আমার একমুঠো ভালোবাসা নেবে কি তুমি

তরল জোছনায় নীল উপত্যকার সবুজ লতায়

আবেগ মমতা লুণ্ঠন হয়ে যাওয়ার ছিন্নমূলে।

তমশা কিরণের মর্মস্পশী দগ্ধ বঞ্চনা আঘাতে ঝড়ো বাতাসের ডগায় পুষ্প মুকুল ঝড়ে যায়।

সেখানেই আমি থাকব একফোটা সুখের রেণু দুঃখের পরশে ক্লান্তিহীন অবসন্ন শরীরি ছায়ায়।

নেবে কি তুমি দণ্ডনীয় ঘাতক অপরাধীর প্রেম?

যার পিছে পিছে ছুটেছি বয়সের বারোটা বছর

চৈত্রীর উত্তাল দুপুরে পার হয়ে আসার দহনেই

সাদা আকাশের খণ্ড খণ্ড মেঘ হয়ে ভেসে যায়।

নেবে কি তুমি উদ্বেল রপ্ত যৌবনে রাগিনীর সুর

নাকি বলবে প্রিয়সি আমার প্রেম নেই যে শহরে

সে সন্ধ্যা হলুদ শেখাতে আর ডেকো না আমায়!

আমি অতি সাধারণ নারী তাই কিছুতে পারি না

অপাত্রে মুক্ত হস্তে নিজেকে বিলাসি রুপে ফুটিয়ে

শত কোটি সাধু পুরুষের সন্যাসিনী হয়ে থাকতে।

বিবেক দংশিত মস্তিষ্কের হুল ফোটানো যাতনায় বারবার স্বপ্ন বিভীষিকা হতেই সরিয়েছি নিজেকে।

নেবে কি তুমি ভার কখনো আমার ক্ষতের দিনগুলি

চিমনি ভাটার স্ফুলিঙ্গে ধোঁয়ায় খেটে খাওয়া মানুষ

অক্লান্ত পরিশ্রম করে পারিশ্রমিকেই নির্যাতিত হয়।

প্রতিবাদ করেছিলাম তর্জনী মধ্যমা অঙ্গুলি নির্দেশে যার রোশনাই বিরহ দিন রাত আমাকে কষ্ট দেয়।

তুমি কি পারবে আমার বিরহগাঁথায় পাশে দাঁড়াতে

নাকি জিঘাংসার আগুনেই পুড়িয়ে মারবে আমাকে!

দুর্ভিক্ষ যখন তখন কড়া নারে অসহায়ের দরজায়।

সেদিন কিছুই বলিনি আমি বিভ্রম নিদ্রার আচ্ছনে

আদর্শনীতি বিপ্লব বেঁধেছি প্রতিটি লোম রোমকূপে

যার নীরব চঞ্চলতার উদাসীতে বিদ্রুপই সহায় হয়।

এরপরে একদিন সূর্য উদয়ের আভাতে তুমি এলে

লোকচক্ষুর অন্তরালে ফাঁকি দেওয়া প্রবল অমানিশা

তোমার বিকলাঙ্গ উদরের দেহটাকে ছিড়ে খেয়েছে।

রক্ত আপ্লুত বর্ণহীন মরা শকুনের পঁচা গন্ধকে শুকে

শতাব্দীর পর শতাব্দীর ধরে পথ চেয়ে আছো তার

যে তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে সংসার উগ্র সৃষ্টিতে।

অভুক্ত চেহারায় কথোপকথোন শুনি বড় তৃপ্ত নেশার

অন্তহীন লালসার ক্রোধ অগণিত শুষ্ক বালুর কণারা

গভীর শূন্যতায় উড়ে এসে চোখকে অন্ধ করে রাখে।

কিছুই দেখি না আমি লজ্জা অবনত জরাজীর্ণ ধিক্কারে

মৃতপ্রায় বছরগুলো নতুন সঞ্জীবনি পেতে অধীর হয়ে

স্রষ্টার কাছে তোমার আরোগ্য কামনার সুস্থতাকে চায়।

মহার্ঘক্ষুধা তৃষ্ণায় সারাদিন দুটো বুনোহাঁস ঘুরে ঘুরে অজস্র জলের ঢেউয়ে অকুল পাথারে ঝিনুককে খুঁজে।

আমি খুঁজতে চাই নাই কোনদিনই তোমাকে সেইভাবে নয়ত ভূগ্রাসী মহাকালীয় ক্ষুধায় আমার যে মৃত্যু হবে।

তাই চিৎকার করে কেঁদেছি নিসঙ্গ অন্ধকারের জঠরে

আমি বাঁচতে চাই একটু একটু করে এককোটি বছরে

একমুঠো ভালোবাসার ছোঁয়ায় ভরিয়ে রাখবো তোমায়।

মানবতার গান গাই

ধর্মরুপী বিভেদ দেয়ালে ঘটে

আজ বিশ্ব মানবতার পরাজয়

প্রভুর ক্ষমতাধর এই দুনিয়ায়।

তোমার সৃষ্টির পাগল যে মানুষ

তারা ঘোর অন্ধকারেই আবিষ্ট

তাই পারে না সে কাটিয়ে উঠতে

রপ্ত করা খুন, হানাহানির প্রত্যয়।

কিসের লালসায় কর রক্তের নির্ণয়?

এত কিসের গর্ব করিস রে তোরা

নির্মল সুন্দর এই জমিনের বুঁকে।

লাখো তরবারী রুখবেই একদিন দেখ, তোমার মৃত্যুর দুয়ারে এসে।

ভয় পাস নে বুঝি উগ্র গন্ধব নেশা

ভাইয়ের শরীর ছিড়েছো বুলেটেই

হয়ত আজ তোমাদের বড় পেশা।

সবার উপরে এই মানুষেরাই সত্য কেন ভুলে যাস যে তোরা ভাই ভাই।

কবি লিখে গেছেন কোন এক কালে তার দস্তা ভরা গদ্য কবিতার খাতায়।

কেন বিবাদ বাঁধাও আর ঝগড়া করো

বিজ্ঞ সেজে ধর্মে নিয়ে করো টানাটানি

ওহে তোমরা মূর্খ তাই করো মারামারি

বন্ধ করো না ধর্ম কতটুকুই আমরা জানি।

বিদ্বেষের আগুনে পুড়ে দোষ দাও স্রষ্টার আগে মানুষ হয়ে উঠো নয়তো হবে ভ্রষ্টা।

হিন্দু মুুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান শুনে রেখ ভাই

আর করিস না দ্বন্দ্ব সকলে সব ভুলে যাই

ঘৃণা সংশয়ের নিদারুণ যাতনাগুলো পিশে

এসো উজ্জ্বল শেখাতে মানবতার গান গাই।

লেখক : কবি ও গল্পকার

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কবিতা,আলিমন নেছা মনি,ভালোবাসা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close